আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুঁড়াদুধ বিতর্কের অবসান



বাংলাদেশের শিশুখাদ্য এবং গুড়াদুধ বিতর্ক অবশেষে শেষ হয়েছে গতকাল। চীনে উৎপাদিত গুঁড়াদুধে বিষাক্ত মেলামাইন ছিলো, মেলামাইনমিশ্রিত গুঁড়াদুধ খেয়ে চীনের শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার পরে এই গুঁড়াদুধ বিষয়ে সর্বত্র সচেতনতা তৈরি হয়, এরই ধারাবাহিকতা চীনে উৎপাদিত ৩টি গুঁড়া দুধকে শিশুখাদ্য হিসেবে অনুপযুক্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদিত নয় বলে আরও একটি গুঁড়াদুধের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এই গুঁড়াদুধ বিতর্ক নিয়ে সংশয় কাটে নি। বিএসটিআই বাজার থেকে গুঁড়াদুধের নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এবং পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ধারণের জন্য আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানে এই গুঁড়াদুধের নমুনা পাঠায়।

চীনে উৎপাদিত গুঁড়া দুধে মেলামাইনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি বিষয়ে দুটো প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন প্রদান করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষায় সকল দুধেই মেলামাইনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নমুনা এবং পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানের অসম্মতি জানিয়ে শুধুমাত্র মৌখিক ভাবেই নিজেদের পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে প্রাপ্ত ফলাফল যে সংশয় তৈরি করেছিলো সেটা নিরসনের জন্য বিদেশী পরীক্ষাগারে পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সেই ফলাফল বাংলাদেশের কতৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় রবি বার দুপুরে, এর পর বাংলাদেশের কতৃপক্ষ রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং প্রকাশের জন্য আলোচনা শুরু করে, দিনব্যাপী আলোচনার পরেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারে নি তারা। বরং গতকাল দুপুরে এই আলোচনা সমাপ্ত হয় এবং ৩টি ব্রান্ডের গুঁড়াদুধ পানের অযোগ্য চিহ্নিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ পরীক্ষার ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যাখ্যান সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন এই পরীক্ষালব্ধ ফলাফল প্রত্যাখ্যান। বিষয়টা রসায়ন বিভাগের সুনাম নষ্ট করেছে নিশ্চিত ভাবেই। রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকেরা একটি সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে। মাত্রাতিরিক্ত মেলামাইন সেবন করলে সেটা শরীর গ্রহন করতে পারে না।

শরীর চমৎকার একটি যন্ত্র, বিপাকীয় প্রক্রিয়া চমৎকার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। মানুষ খাদ্য হিসেবে যা গ্রহন করে সেটা বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় শরীরের উপযোগী হয়ে কোষে জমা হয় এবং মানুষ সংগৃহীত শক্তিতে নিজেকে পরিচালনা করে। তবে মানুষের শরীরের কোষগুলো নির্দিষ্ট ধাঁচের পুষ্টি গ্রহনে সক্ষম। খাদ্যাবশেষ শরীরের পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হয় পরে শরীর থেকে নিগ্রত হয়ে যায়। মেলামাইনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, শরীর যখন কোনো উপায়েই এই মেলামাইনকে গ্রহন করতে পারে না, সেটা কিডনিতে যায়, কিডনি মূলত শোধকের কাজ করে, সেখানের জালিকাগুলো যদি মেলামাইনকে শরীর থেকে বের করে দিতে না পারে ,সেখানেই সঞ্চিত হতে থাকে মেলামাইনগুলো, পরিনতিতে কিডনিতে পাথর হয়।

তা শরীরের এই শোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং শাররীক সমস্যা তৈরি করে। তবে শরীর কতটুকু মাত্রায় মেলামাইন গ্রহন করতে পারবে সেটা নির্ধারিত শরীরে ভরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কীটনাশক হিসেবে মেলামাইনের উপজাত সামগ্রী ব্যবহারের ফলে আমরা প্রতিনিয়তই মেলামাইন গ্রহন করছি, এমন কি কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত যেকোনো গবাদিখাদ্যেও এই মেলামাইনের উপস্থিতি থাকবে। সুতরাং কোনো গরুর দুধই শতভাগ মেলামাইনমুক্ত হতে পারে না। সুতরাং একটা ন্যুনতম মান নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

মেলামাইন মূলত সার কারখানার উপজাত, সার উৎপাদনের সময়ই এই মেলামাইন উৎপাদিত হয়, বাংলাদেশের সার কারখানাগুলোর এই মেলামাইন ব্যবহার করে দেশে মেলামাইন শিল্প গড়ে উঠেছে। চীনেও সার কারখানা ও কীটনাশক কারখানার পরিমাণ বেড়েছে। এবং একই সাথে মুনাফার সাংঘাতিক লোভে সেই মেলামাইনকে প্রোটিনের বিকল্প সংস্থান হিসেবে চিহ্নিত করে দুধের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করবার প্রক্রিয়াও উদ্ভাবিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে প্রাপ্ত মেলামাইনের পরিমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত মতে পানের অযোগ্য করেছে সবকটি গুঁড়াদুধকেই, নেসলে, ডানো, ডিপ্লোমা সকল গুঁড়াদুধেই মেলামাইন পরিমাণ নির্ধারিত গ্রহনযোগ্য সীমার অধিক, এমন সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে থাইল্যান্ডের গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্যে। বহুজাতিক পূঁজির দ্বৈরাত্বে হয়তো এই থাইল্যান্ডের গবেষণাগারে প্রাপ্ত ফলাফল কলুষিত হতে পারে, হতে পারে এই উপাত্ত কম্প্রোমাইজড, তবে অন্তত মানুষের উদ্বেগের অবসান হয়েছে।

এমন একটি বিষয়ে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহনের দীর্ঘসূত্রিতা এবং সরকারী অদক্ষতা আদতে ক্ষমার অযোগ্য- তারা নিশ্চিত হতে না পারলেও যেহেতু সংশয় প্রকাশিত হয়েছে তাই এই গুঁড়াদুধগুলোর বিপনন বন্ধ রাখতে পারতো, তবে সরকার সেটা করতে পারে নি বলেই হাইকোর্ট এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারককে অসংখ্যা ধন্যবাদ। আপাতত বিতর্ক সমাপ্ত হয়েছে, তবে বাংলাদেহসের ভোক্তাদের ভেতরে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, এটা নিরসনের কোনো সম্ভবনা আছে রবর্তমানে। মানুষ কি নেসলে পণ্য বর্জন করবে, ডানো কিংবা ডিপ্লোমা কেনা বন্ধ রাখবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.