আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামী ব্যংকিং কি মূল্যবোধের ব্যবসা ? ব্যংকিং কি ইসলামসম্মত হতে পারে?



আজ আল আরাফহ ইসলামী ব্যংকের বিজ্ঞপ্তি দেখলাম পত্রিকায়, ঋণ আদায়ের জন্য বন্ধকিকৃত জমি এবং তদস্থিত ৬ তলা দালান নিলামে তুলবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঋণের দায়ে ব্যাংকের এই বন্ধকি জমি নিলামে তোলার প্রক্রিয়াটি ইসলামসম্মত অর্থনীতি কি না এটা নিয়ে একটা সংশয় তৈরি হলো। আদৌ ব্যাংক নামক প্রতিষ্ঠানটি কি নির্দিষ্ট হারের সুদের বিনিময়ে কাউকে ঋণ প্রদান করতে পারে ? যদিও প্রাথমিক ইসলামি যুগে ব্যাংকিং এর ধারণাটিই ছিলো না। ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক আগে থেকে পৃথিবীতে প্রচলিত থাকলেও আরব উপদ্বীপে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস আমার চোখে পড়ে নি। তবে কোরান এবং হাদিসের বানীতে স্পষ্ট নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে সুদ ও মহাজনি কারবার।

ব্যবসায়ী চুক্তিকে সম্মান করতে বলা হয়েছে, তবে এই চুক্তিগুলোও ব্যক্তিগত পর্যায়ের চুক্তি, তেমন প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদনের সম্ভবনাও ছিলো না তখন। বাণিজ্য ছিলো ব্যক্তিকেন্দ্রীক। একজন ব্যবসায়ীকে মুনাফার জন্য অর্থ প্রদান করা যেতো, সেই ব্যক্তি এই অর্থ দিয়ে ব্যবসা সম্পন্ন করতো। যদি এই ব্যবসায় লাভ হতো তবে সেই লভ্যাংশ পেতো লগ্নিকারী ব্যক্তি এবং যদি ক্ষতি হতো তবে সেই ব্যক্তিও ক্ষতির সমান অংশীদার হতো। সাধারণ বিবেচনায় ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যংকিং ব্যবস্থাকে কিভাবে আত্তীকরণ করা যায়।

মূল প্রশ্নটা সেখানেই। ব্যাংক কি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান? ব্যাংকের কি কোনো পরিস্কার ব্যবসায়ী লক্ষ্য আছে, কোনো ব্যবসায়ীক উদ্যোগ কি ব্যাংক গ্রহন করে? ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু মুলধনের নিরাপত্তা প্রদানের কাজ করতো। এই নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নির্ধারিত হারে পারিতোষিক কেটে রাখতো ব্যাংক। পরবর্তীতে ব্যাংকের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ব্যাংক এই জমাকৃত অর্থ নিজের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহার করতো হয়তো- আমার জানা নেই। তবে বর্তমানের ব্যংকগুলো কোনো ভাবেই এমন স্পষ্ট ব্যবসার সাথে যুক্ত নয়।

তারা মূলত সংগৃহীত মূলধনকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর প্রয়োজনে ব্যবহার করে। একজন ইসলামমনস্ক মানুষ ইসলামি ব্যংকে নিজের অর্থ জমা রাখে তার ধর্মীয় প্রেরণা থেকেই, সুদ গ্রহন করে পাপের অংশীদার হওয়ার ঝুঁকি কমাতেই এমন অনুপ্রেরণার জন্ম হয়। প্রতি বছর এমন ইসলামমনস্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তাই ইসলামী ব্যংকিং ব্যবস্থার প্রসারে হার বছরে ১৫ শতাংশ। তবে এই অর্থ যখন সে কোনো ব্যাংকে জমা রাখে তখন কি ব্যাংক তাকে এমন নিশ্চয়তা দেয় কিংবা ব্যক্তি কি এমন কোনো চুক্তি করে যে তার জমাকৃত অর্থ ব্যাংক নিজের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে ইচ্ছে মতো। কোনো ইসলামী ব্যংক যদি অনৈতিক কোনো ব্যবসায়, মানবতাবিরোধী কোনো ব্যবসায় নিজেই অর্থের যোগানদাতা হয়, তবে সেই ব্যবসার লভ্যাংশ কি ব্যক্তির পাপের ঝুঁকি কমায়? কিংবা এতগুলো মানুষের অর্থ যখন সংগ্রহ করে ব্যং ক নিজেই তার প্রদত্ত ঋণ সংগ্রহের নিরাপত্তার জন্য মহাজনি প্রতিষ্ঠানের রূপ ধারণ করে তখন সেটা কি ইসলাম সম্মত হয়? উদাহরন হিসেবে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যংকের ঘটনাটিই সামনে নিয়ে আসি- একজন ব্যক্তি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নিজের বসত ভিটার দলিল কমা রেখে ব্যংকের কাছে ঋণ গ্রহন করলো- ইসলামী ব্যংক হিসেবে লগ্নিকৃত পূঁজির নিরাপত্তা বিধানের জন্য এমন স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখবার কোনো রীতি কি ইসলাম সম্মত বিবেচিত হতে পারে? এবং যে ব্যংকের সাথে ব্যক্তির যে চুক্তি হলো, সেই চুক্তির বলেই ব্যংক ঋণ প্রদানে অসমর্থ হলেই তার স্থাবর সম্পত্তি নিলামে উঠাতে পারবে।

এই নিলামের ফলে প্রাপ্ত অর্থ ব্যংকে প্রত্যাবর্তন করলে সেটা কি ব্যংকের সকল অর্থজমাদানকারীকে মহাজন হিসেবে চিহ্নিত করবে না? মূলত ইসলামে সুদ ও মহাজনী কারবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখন কোনো ব্যক্তি ব্যংক থেকে নির্দিষ্ট হারের সুদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋণ গ্রহন করে এবং সেটা যদি ইসলামী ব্যংক হয় তবে অন্য সুদের কারবার থেকে এই ব্যংকিং ব্যবস্থার পার্থক্য কোথায়? অন্য মৌলিক প্রশ্নটি হলো, ইসলাম যখন সমান ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করবার নীতিকে সমর্থন করে, তখন ব্যংক যদি কাউকে ব্যবসা করবার জন্য ঋণ প্রদান করে তখন সেই ব্যক্তির ব্যবসার লাভের ঝুঁকির সমান অংশীদার হতে বাধ্য ব্যংক নিজেই, এটাই ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল সূত্র। তেমন ভাবেই সেই ব্যক্তির ক্ষতিরও সমান অংশীদার ব্যংক নামক প্রতিষ্ঠানটি। সুতরাং যদি ব্যক্তি ব্যবসা করে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয় তবে ব্যংক নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই তার স্থাবর সম্পত্তির নিলাম ডাকতে পারে না। আমার প্রশ্নগুলো যদি এখনও পরিস্কার না হয় তবে সেগুলোকে পুনরায় লিখে রাখি- ব্যাংক যখন কোনো ব্যক্তির জমাকৃত অর্থ নির্ধারিত সুদের বিনিময়ে কাউকে ব্যবসা করবার জন্য ঋণ হিসেবে প্রদান করে তখন সেই ব্যক্তিকে সুদখোর বিবেচনা করা যায় কি? ব্যংক কোনো স্থাবর সম্পদের বিনিময়ে কাউকে ঋণ প্রদান করতে পারে কি? এবং ইসলামি ব্যবসায়িক চুক্তি অনুসারে অর্থপ্রদানকারী এবং অর্থগ্রহীতা দুজনেই লাভ ও ক্ষতির সমান অংশীদার, সেই বিবেচনায় আল আরাফাহ ইসলামি ব্যংক কি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোনো ব্যক্তির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলতে পারে? এই কাজগুলো কি ইসলাম সম্মত বিবেচিত হবে?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.