আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কার্ত্তিক মাসে চলছে মণিপুরীদের কার্ত্তিকা উৎসব, আরতি ও পুঁথিপাঠের আসর...

প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি
কার্ত্তিক মাসটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের কাছে একটি গুরুত্বপুর্ণ মাস। এ মাসের শেষেই অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব মহারাসলীলা। মহারাস উৎসবের আগে পুরো কার্ত্তিক মাস জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। গ্রাম ও শহরতলীর মণিপুরী লেইসাং বা মন্দিরগুলো ঢাক, করতাল, মইবুঙ ও সেলবুঙের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার উপর পালাক্রমে অর্পিত হয় "দৌর এইরুক কাৎকরানির পালা", অর্থাৎ দেবতার উদ্দেশ্যে ভোগ বা প্রসাদ নিবেদনের দায়িত্ব।

পর্বটি "নিয়মপালি" বা "নিয়মসেবা" নামে পরিচিত। নিয়মপালির সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ দিক হলো পুঁথিপাঠ ও তা শ্রবন। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় বলা হয় "লেইরিক থিকরানি"। নিয়মপালিতে ভক্ত শ্রোতাদের সম্মুখে মহাভারত, রামায়ন, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ইত্যাদি পুরাণের কাহিনী থেকে নির্বাচিত অংশের সুরেলা আবৃত্তি ও মাতৃভাষায় তার সরল গদ্যানুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। মণিপুরীদের অন্যান্য বিভিন্ন ধর্মীয় কৃত্যে-পার্বণে এটি একটি আবশ্যিক পরিবেশনা।

রামায়ন মহাভারতের বাইরে চৈতন্য চরিতামৃত, ভাগবৎ পুরাণ, গীতা ইত্যাদি ধর্মীয় পুস্তকাদি থেকেও পাঠ করা হয়। এই পাঠ বা আবৃত্তির বিশেষ এক ঢঙ আছে, যা বাঙালীদের পুঁথিপাঠ থেকে একেবারেই ভিন্ন। যিনি পাঠ করেন তাকে বলা হয় "থিপা" আর যিনি ব্যাখ্যাদান করেন তাকে বলা হয় "য়ারিলিপা"। যিনি ব্যাখ্যাকারী, তাকে যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাশীল হতে হয়। আসর বুঝে সরল উদাহরণ সহকারে সে বক্তব্যকে সবার কাছে বোধগম্য করে।

শ্রোতা-দর্শকের সাথে সার্বক্ষণিক সমঝোতা ও বোঝাপরার মধ্য দিয়ে লেইরিক থিকরানি এগিয়ে যায়। পুঁথিপাঠ শেষ হলে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র সহযোগে বৈষ্ণব পদাবলী বা আরতি গাওয়া হয়। আর থাকে কার্ত্তিকের ঐতিহ্যবাহী মৃদঙ্গবাদনের প্রতিযোগিতা "কার্ত্তিকর ফান্না"। এরপর ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরন করা হয়। প্রসাদের মধ্যে থাকে গুড়ের সাথে খই বা মুড়ি মিশিয়ে ঘরে তৈরী কাবক বা লারৌ, বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি ইত্যাদি।

এছাড়া সারা কার্ত্তিক মাস জুড়ে সন্ধ্যাআরতি ও মঙ্গলআরতি হয়। সন্ধ্যাআরতির গানে ছোট বড় সবাই অংশ নেয়। আর মঙ্গলআরতিতে ঐতিহ্যগতভাবে কেবল তরুণ তরুণীরাই অংশ নিতে পারে। নিজের পল্লীতে নয় বরং দুরের কোন পল্লীর লেইসাঙে মঙ্গলআরতি করতে হয় ভোরের আলো ফোটার আগেই৷ আরতির পরে তরুণ কীর্তনীরা গান করতে করতে বাড়ী ফেরে "বাশীগো রহিয়া রাধা রাধা বুলিয়া থইপাচোগি মোরতা নিলগা কারিয়া ........ " নিয়মপালি মুলত মণিপুরীদের লোকশিক্ষার একটি অংশ। আর লেইরিক থিকরানি বা পুঁথিপাঠ মণিপুরী লোকঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য এক শিল্প-আঙ্গিক, যা একই সঙ্গে কৃত্য ও শিল্প।

এখানে ধর্মীয় গ্রন্থের অমৃতবাণীর আড়ালে সততা, মুল্যবোধ ও নৈতিকতার সামাজিক শিক্ষা দেয়া হয়। * ইউটিউবে সন্ধ্যাআরতির একটি ভিডিও দেখুন * ইংরেজী ব্লগে মণিপুরীদের কার্তিকা ও নিয়মপালি সংক্রান্ত আরেকটি লেখা * ইউটিউবে লেইরিক থিকরানির একটি ভিডিও দেখুন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।