আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেজু দ্বীপের ভ্রমণ কাহিনী- পর্ব ৪

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না
পর্ব ১ এখানে পর্ব ২ এখানে পর্ব ৩ এখানে অক্টোবর ১৭, শুক্রবার রুমের জানালা থেকে তোলা লালচে সকাল আস্তে আস্তে বাড়ছে আলো সময় সকাল ৫ টা। সকাল ৫.৩০ টায় এলার্ম দিলেও অন্য কারো মোবাইলে শব্দ শুনে ঘুম ছুটে গেলো। যে বেটার মোবাইল সে তখনও ঘুমাচ্ছে। আমাদের রুমে ছিলাম আমি, নিয়াজ আর দীপক। আমরা তিনজনই ৬ টার ভিতর গোসল করে রেডি হয়ে বসে থাকলাম।

কারন গত বছর দেখেছি কেমন বাথরুমে সিরিয়াল পড়ে। রাতে শোয়ার আগে জেনেছি সকাল ৭ টায় বের হতে হবে। ৬ টার পর শুরু হলো গোসল আর বড় বাথরুমের জন্য দরজায় ঠক ঠক। আর আমরা তিনজন আরাম করে চ্যানেল চেন্জ করতে লাগলাম বসে বসে। বিস্কুট আর কফি খেয়েছি গোসল করে।

আশায় আছি নাস্তার জন্য ডাক আসবে, হয় এখানে অথবা বাইরে। কিন্তু কেউ আর ডাকেনা। জানা গেলো ৭ টায় নয় ৮.৩০ এ বের হবো আমরা। ওরা যখন গোসলের জন্য লাইনে তখন একটু বাইরে থেকে হেটে আসলাম। কটেজের কাছেই বেশ কয়েকটা কমলা বাগান।

দূরে সুমুদ্রের অসীম সীমানা। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম কমলা বাগান অনেক মিস্টি এই কমলা গুলো, এটার জুসও খুব নামকরা সেমিনারের উদ্দেশ্যে কটেজ থেকে বেরিয়ে দেখা গেলো জিপিএস কাজ করছেনা। কি বিপদ। ওটা ছাড়া তো সব অচল। হয়তো নেটওয়ার্কে কোন ঝামেলা ছিলো, দুই মিনিটেই ঠিক হয়ে গেলো আবার।

সোজা চলে গেলাম আবার সেমিনার এ। আমার বসের প্রেজেনটেশন আছে একটা। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চললো সেই জ্ঞানী আলাপন। শেষ হতেই আবার গাড়ীতে করে কটেজে ফেরত আসলাম। সকালে নাস্তা না করে খিদা বেড়ে গেছে।

কোথায় লান্চ করাবে সেটাও বুঝতে পারছিনা। এমন সময় জানা গেলো কাছেই নাকি কোন একটা ছোট দ্বীপ আছে, নাম উদো। সেখানে যাবো আমরা এখন। কনভেনশেন সেন্টারের লবির একাংশ, তবে লেখাগুলো মনে হয় জাপানীজ বসের লেকচার চলছে, অন্তত এ সময় ঘুমানো ঠিক হবেনা গাড়ী চলা শুরু করলো। একটু পর পর আমরা ভাবছি এই মনে হয় পৌঁছে গেছি।

কিন্তু আমাদের হতাশ করে দিয়ে গাড়ী চলতেই থাকলো। প্রায় এক ঘন্টার উপরে চলার পর ফেরী ঘাটে পৌঁছালাম আমরা। মাথার মধ্যে তখন একটাই চিন্তা পেটে খাবার পড়বে কখন। ফেরীতে উঠে নীল সমুদ্র দেখে কিছুটা খিদা কমলো। খুব বাতাস আর জোরালো ঢেউএ বড় ফেরীটাও দুলতে লাগলো।

ছোট খাটো জাহাজ, বাতিঘর পাশ কাটিয়ে চলতে লাগলাম উদো দ্বীপের পানে। প্রায় ২০ মিনিট চলার পরে ফেরী ঘাটে থামলো। ফেরী থেকে নেমে সমুদ্রের গা বেয়ে গাড়ী চলতেই আছে। খিদা আবারো মোচড় দিলো পেটে। ১০ মিনিট পরে একটা হোটেলে ঢুকলাম আমরা।

ফেরীর দুইতলায়, ফেরীটা আমাদের আরিচা রুটের ফেরীগুলোর চেয়ে একটু ছোট ফেরী থেকে তোলা কিছু দৃশ্য এক গ্রুপ খাবে র ফিস, আমরা খাবো রান্না মাছ। ঘড়ির কাঁটা ৩ টা ছাড়িয়ে খাবার আসলো সামনে। আহ কি মজা, কপাল ভালো মাছটাও খুব মজার ছিলো, চিংড়ি সিদ্ধও ছিলো। আর একটা ভাত আর কর্ণ ফ্লাওয়ারের জাউ টাইপের কিছু। খুব আয়েশ করে খাওয়া দাওয়া করলাম সবাই।

আরেক বস গান গাইলো (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজে আর লিরিকস টিভিতে দেখা যায়, ওটার সাথে তাল মিলিয়ে গান গাইতে হয়, এটা কে বলে নোরেবাং)। তিনি আবার প্রফেশানাল সিংগার। রেস্তোরার ভিতরে, এটা অবশ্য দুইতলায় খাবারের জন্য আর কতক্ষণ বসে থাকতে হবে? চিংড়িটা দেখতে সাদামাটা হলেও বেশ মজা মাছের এই রান্নাটাও খুব স্বাদ সিংগার সেই বস খাওয়ার শেষে গান গাচ্ছেন খেয়ে ই আবার উল্টা চলা, ফেরী পার হয়েই একটা ছোট ভলকানোর উপরে উঠাতে নিয়ে গেলো। কোথায় খেয়ে একটু বিশ্রাম নিবো তা না, এখন ঠেলে ঠেলে ওঠো। থোরাতের বউ আবার কোরিয়ান খাবারে একদম অভ্যস্ত না, সে অসুস্হ হয়ে পড়েছে অলরেডি।

নিয়াজও উঠবেনা, সেও নীচে থাকলো। আমরা বাকিরা উপরে উঠা শুরু করলাম। একটু একটু উঠি আর নীচের ছবি তুলছি। একসময় পৌঁছে গেলাম উপরে। জ্বালামুখটা এখন আর বোঝার উপায় নেই, সবুজ ঘাসে ঢেকে গেছে।

একপাশ ঢালের মতো নেমে গেছে সমুদ্রে। পাহাড় থেকে নামতে নামতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। এখন আবার ফিরতে হবে। ঘন্টাখানেকের জার্নি আবার। ফেরার পথে আরও কিছু দৃশ্য এটার মাথায় উঠা লেগেছে ভাত খেয়েই জ্বালামুখ টা পুরোটাই ঘাসে ঢাকা, একদিক ভেংগে সাগরের দিকে নেমে গেছে ফিরে কটেজে না যেয়ে ডিনারের জন্য একটা হোটেলে ঢুকলাম আবার।

কিন্তু অনেক দেরীতে লান্চ করায় কেনো যেনো খাওয়ার কোন স্পৃহা নেই। এবারে বসদের মিশন মনে হয় মাছ। সব বেলায় মাছ খাওয়াচ্ছে। এবারও মাছ, তবে ফ্রাই। কাঁকড়াও ছিলো কিন্তু সেটা কাঁচা, একটা সসে ডুবানো।

ওটা খাওয়ার যোগ্য না আমাদের কাছে। রাত পার করার মতো খেয়ে উঠে পড়লাম আমরা। আর একদিন থাকবো আমরা। সেদিন আবার বড় পাহাড় বাইতে হবে। বুঝতে পারছিনা উঠবো না কি উঠবো না।

বসকে কিভাবে বলবো ভাবছি। কয়েকদিন ধরে পিঠে একটু ব্যথা। পাহাড়ে উঠলে বাড়তে পারে। যাইহোক কটেজে এসে নিয়াজ ওদের রুমে যেয়ে দেখলো ওরা রাতে পাঁচটা বালিশ নিয়ে ঘুমিয়েছে ৪ জন। মেজাজ টা কেমন লাগে।

অথচ আমাদের একটা শর্ট ছিলো। আর চারজনে মেঝেতে বিছিয়েছে চারটা কম্বল। অথচ তিনটা হলেই চারজন আরামে শোয়া যায়। কেমন নবাব একেকটা। নিয়াজ করলো কি একটা বালিশ আর কম্বল বের করে ড্রইয় রুমে একজায়গায় রেখে দিলো।

ঘুমাতে যেয়ে তো ওরা খুঁজে পায়না। আজ আমরা আগেই বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেছি। এসে একবার জিজ্ঞেস করেছে কোথায় গেলো ওগুলো। আমরা বল্লাম আমরা কি জানি? আমরা আমাদেরটাতেই ঘুমাচ্ছি, তোমাদেরটা কোথায় তোমরা খুঁজে দেখো। চলবে.....
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।