আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কি অভ্যন্তরীন পর্যটনের কথা ভাবতে পারি? (৫)

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

নিরাপত্তা দেবে গ্রামবাসী থানা থেকে বেরিয়ে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে চোখ ধাঁধিয়ে গেল রহমান সাহেবের। বেলা বারোটার মতন বাজে। সূর্য মধ্যগগনে।

সময়টা বৈশাখের শেষ। এখনই জ্যৈষ্ঠের তীব্র আভাস দিচ্ছে। বাতাসে অল্প লু। রহমান সাহেব আজ সাদা পাঞ্জাবি পরেছেন। ঘামে ভিজে গেছে।

হোসেনপুর থানায় আজ ওসি সাহেব ছিলেন না। রাউন্ডে বেরিয়েছেন। পলাশপুরে নাকি পরশু রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাতি হয়ে গেছে। তারই তদন্তে বেরিয়েছেন মাসুম আলী। এস. আই মোহাম্মদ মমতাজ আলীর সঙ্গে কথা হল।

চল্লিশের মতন বয়েস। বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলায়। মেঘনা সেতুর কথা বলতেই উত্তেজিত হয়ে উঠলেন মোহাম্মদ মমতাজ আলী । বলেন কি মেঘনা নদীর উপর ব্রিজ! কেন? জাপানে তারা সমুদ্রের উপর ব্রিজ করে নাই? রহমান সাহেবের উলটো প্রশ্ন। করছে।

তয়? মোহাম্মদ মমতাজ আলী চুপ করে থাকে। রহমান সাহেব তখন দক্ষিণাঞ্চলের ইকোনকিম বেল্টের কথা খুলে বললেন। লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা-পিরোজপুর-ঝালকাঠি-পটুয়াখালি-বাগেরহাট-খুলনা-সাতক্ষীরা পর্যন্ত গড়ে উঠবে সাউদার্ণ বেঙ্গল ইকোনকি জোন। শুনতে শুনতে মোহাম্মদ মমতাজ আলী রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি দক্ষিণ বাংলার মানুষ।

দেশের কথা উঠলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। বাঙালির দেশচিন্তা নেশাদ্রব্যের মতন। রহমান সাহেবের ওপর শ্রদ্ধা বেড়ে যায় মোহাম্মদ মমতাজ আলীর। এমনিতেই ওই দীর্ঘদেহি মানুষটা দেখতে পির-ফকিরদের মত। মাথায় জটাচুল, তাল পাতার টুপি।

গায়ের রং ফরসা। দাড়িতে মেন্দি। সব সময় লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরেন। রহমান সাহেব সময় নস্ট না করে আসল কথায় এলেন। বললেন, শোনেন মমতাজ সাহেব।

আপনি জানেন আমি গ্রামের মধ্যে হোটেল খুলছি। সেই খবর জানাইয়া পেপারে বিজ্ঞাপন দিসি। সবাই এখন ফোন কইরা নিরাপত্তার কথা জিগায়। আমি কর দেই, মানে ট্যাক্স দেই। আমি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।

শহর থেকে আমার কাচারিবাড়িতে অতিথিরা আসে। গ্রামে ঘুইরা বেড়ায়। তাদের নিরাপত্তা লাগব। নিরাপত্তা না পাইলে কেউ গ্রামে আসবে না। আমার ব্যবসার লালবাতি জ্বলব।

মোহাম্মদ মমতাজ আলী আন্তরিক কন্ঠে বললেন, আপনি চিন্তা কইরেন না রহমান সাহেব। আমরা সব সময় আপনার পাশে আছি। আপনি মহৎ উদ্যেগ নিয়েছেন। তবে জানেনই তো বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় পুলিশের সংখ্যা সীমিত। পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব না।

জানেন তো সরকারের আয় সীমিত। জানি। সরকারের আয় বাড়াবে অভ্যন্তরীণ পর্যটন। সরকার নতুন ট্যাক্স ধার্য করলে হৈচৈ পইড়া যায়। যায় না? যায়।

মোহাম্মদ মমতাজ আলী মাথা নেড়ে বললেন। ট্যাক্স নিতে হবে অন্য ভাবে। কী ভাবে? মোহাম্মদ মমতাজ আলী ঝুঁকে পড়েন। রহমান সাবেহ বললেন, শহর থেকে লোকে গ্রামে এসে টাকা খরচ করবে। সেই টাকার একাংশ অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উদ্যেক্তারা সরকারকে ট্যাক্স হিসেবে দেবে।

তার মানে কি দাঁড়াইল? আপনি তো দেখি দারুন লোক। মোহাম্মদ মমতাজ হেসে বললেন। তবে আমার মনে হয় পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রামবাসী নিলে ভালো হয়। আসলে গ্রামবাসীর মধ্যে সচেতনা বাড়ানো দরকার। আপনার লাভ মানে তাদের লাভ।

হ। আগামী শুক্রবার গ্রামের লোকদের নিয়া জরুরি মিটিং ডাকি? ডাকেন। এরপর আরও কিছুক্ষণ আগামী শুক্রবারের মিটিং প্রসঙ্গে কথা বলে থানা থেকে বেড়িয়ে এলেন রহমান সাহেব। কাচারিবাড়ি ফেরার পথে পাল পাড়া পড়ে। বিপিনের বাড়ির সামনে একটা টিনের ঘর।

সামনে বড় একটা সাইনবোর্ডে লেখা। প্রদর্শনী কেন্দ্র। সেদিন হোসেন পুর হাটে বিপিনের সঙ্গে দেখা। বলল, বিক্রিবাটা বেড়ে গেছে। শুনে এত ভালো লাগল রহমান সাহেবের।

দুপুরে খেয়ে নতুন বিজ্ঞাপন লিখতে বসলেন রহমান সাহেব। হোসেনপুর গ্রামে এসে কয়েক দিন বেড়িয়ে যান। সন্ধ্যার পর বাউল গানের কনসার্ট। তার আগে তালতলার মাঠে শ্রীলেখা সাহার নকশী কাথা প্রদর্শনী। তেরোই জ্যৈষ্ঠ পুব পাড়ার নিহার বানুর নকশী কাথা প্রদর্শনী ।

অপরাহ্নে চিত্রা নদীতে নৌকা বাইচ। (অনিময়মিত) নিরাপত্তার চিন্তা নাই। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা দেবে গ্রামবাসী। কী ভাবে হোসেনপুর আসবেন। মোবাইল নম্বর।

বিজ্ঞাপনটি বার কয়েক দেখে ভারি সন্তুষ্ট হলেন এই পাগলাটে মানুষটি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.