আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যাকূটে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে একটা গল্পের ভণিতা

http://joyodrath.blogspot.com/

চোখের সামনে পুড়ছে আমার মনসুন্দর গ্রাম আমি যাই নাই রে, আমি যাই নাই - কফিল আহমেদের গান ১. কখনো যাই নাই বিদ্যাকূট! উরখুলিয়া গেছি, বিদ্যাকূটের পাশের গ্রাম। এক সন্ধ্যার কথা মনে আছে, উরখুলিয়ার গ্রামছাড়া জোতদার রেজেক মিয়ার পোড়োবাড়িটার ভেতর গিয়ে পথ হারায়া ফেলছিলাম। বিশাল বাড়ি, সারি সারি টিনের চৌচালা ঘর, সেসব ঘরে কেউ নাই তখন, জিনিসপত্র সব টুকরা টুকরা করে ভাঙ্গা, টিনের প্রতিটা ঢেউ-য়ে দায়ের নিপুণ কোপ। উঠানের মাঝখানে ছোটখাট একটা পাহাড়, ভাঙ্গা সিরামিকের জিনিসপত্রের । উরখুলিয়া একটা অদ্ভূত মাথাগরম জায়গা।

তিতাসের পাড় ধরে লম্বালম্বি একটা গ্রাম, ঠিক চিলি দেশটার স্টাইলে। গ্রামের অর্ধেক লোক থাকে ইটালি। তারা টাকা পাঠায়, আর সেই টাকায় দুই গোষ্ঠীর শতবছরের পুরানো ঝগড়াটা ফি বছর ঝালাই হয়। ঝগড়ার উছিলা? শুনলে হাসবে উরখুলিয়ার লোকেরা। উপলক্ষ নো প্রবলেম, কোনো উছিলা পাওয়া যাইতেছেনা, ঠিকাছে, ঐ যে জালাইল্যা আছে না, জ্ঞাতিগোষ্ঠী নাই, এতিম পোলা, ঘরে মা একলা, ওরে ফালায়া দাও! তারপর কেইস নিয়া সোজা নবীনগর থানায়।

জালাইল্যাকে আমি চিনতাম। এক পা খোঁড়া, কিন্তু কাইজ্যার আগে সবসময়। ভ্যানগার্ড। জালাইল্যার খুনের এই পরিকল্পনা কিন্তু প্রতিপক্ষের নয়, তার স্বপক্ষেরই। আবার এই স্বপক্ষের কোনো উপদলীয় কোন্দলের ফসল নয় এই সিদ্ধান্ত।

যারা এই নীলনকশা করেছে তারা সবাই জালাইল্যার সমঝদার। কিন্তু কি করা? দুইশ বছরের পুরনো 'বাইশাবাইশি', অনেক রক্ত খায়! তার তৃষ্ণা মিটাতে গেলে নিজের পরের বাছাবাছি করনের সুযোগ কমই থাকে। যারা জালাইল্যারে ফালাইয়া দিল, তারাই গায়ের কাপড় বদলায়া নবীনগর থানায় গিয়া ফৌজদারি মামলা ঠুকল। তারপর বাজার করল, টর্চলাইটের জন্য দোকান ঘুইরা একনম্বর সানলাইট ব্যাটারি কিনল, জালাইল্যার মায়ের জন্য নতুন জায়নামাজ ও তসবি কিনল, তারপর বাড়ি ফিরবার আগে হাউজির মাঠেও দুইচক্কর দিল। আর যারা ঘুম থেকে উঠে শুনল তারা খুনের মামলার আসামি, তাদের হৈয়া অবাক হৈলেন বিধাতা।

তারাও ঘরের কালার টেলিভিশন, অষ্ট্রেলিয়ান গাভী, ডেকসেট ও ক্যামেরা পাশের গ্রামের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠায়া দিল, ঘরের মেয়েমানুষের হাতে দরকারি টাকাপয়সা গুঁজল, তারপর সোজা লঞ্চে হয় ভৈরব না হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেই উরখুলিয়ার পাশের গ্রামই বিদ্যাকূট। আমি উত্তপ্ত উরখুলিয়ায় বসে বসে বিদ্যাকূট নিয়া হিংসায় জ্বলতাম। বিদ্যাকূটে কোনো পুলিশ ক্যাম্প লাগে না, সেই গ্রাম থেকে শরনার্থী আসে নাই কোনো দিন এই উরখুলিয়ায়। দূর থেকে দেখেছি, অদ্ভূত একটা গ্রাম, খড়ের গাদায় রোদের ঝিলিক লেগে এখান থেকেও আমার চোখ চিকচিক করে।

কবে যাবো বিদ্যাকূট, আজো ভাবি পুরুষশূন্য উরখুলিয়া গ্রামে হাঁটতে হাঁটতে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.