আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাদীর একটি ঐতিহাসিক স্থান ও একটি ঐতিহাসিক ঈদ দিবস-৬



(১) উম্মুল আয়েম্মা, নবী কন্যা ফাতিমা জাহ্‌রার (সালাঃ) প্রমাণ হিসেবে উত্থাপিত গাদীরের হাদিসঃ “আপনারা কি ভূলে গেছেন যে, রাসূল (সাঃ) গাদীর দিবসে বলেছেনঃ আমি যাদের মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তাদের মাওলা বা অভিভাবক”। (২) ইমাম হাসান মুজতবা’র (আঃ) প্রমাণ স্বরূপ পেশকৃত গাদীরের হাদিসঃ যখন হাসান মোজতবা (আঃ) মোয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন একটি বক্তব্য পেশ করেছিলেন। উক্ত বক্তব্যের কিছু অংশ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছেঃ “এই উম্মত আমার পিতামহ রাসূল (সাঃ) হতে শুনেছে যে, তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক জাতিই যেন তাদের নিজেদের মধ্য হতে সেই ব্যক্তিকেই তত্বাবধায়ক নির্বাচন করে, যে হবে তাদের মাঝে সবচেয়ে জ্ঞানী ও সর্বোত্তম। আর সেই সাথে নিম্নশ্রেণীদের প্রতিও খেয়াল রাখবে এবং তাদের মাঝে যে উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তি তাকেই কেবল যেন প্রাধান্য দেয়া হয় বা নির্বাচন করা হয়”। তারা আরো শুনেছে যে, তিনি (সাঃ) আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক ঐরূপ যেমন মুসার (আঃ) সাথে হারুনের (আঃ) সম্পর্ক ছিল; পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, (মুসার পরে হারুন নবী হয়েছিল কিন্তু) আমার পরে আর কোন নবী নাই”।

আরো শুনেছে যে, গাদীরের খুমে আমার পিতার হাত ধরে তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ “আমি যাদের মাওলা বা অভিভাবক হই এই আলীও তাদের মাওলা বা অভিভাবক হয়। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ভালবাসো যে আলীকে ভালবাসে এবং তার প্রতি শত্রুতাপোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতাপোষণ করে”। সে সময় উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন যেন তারা অনুপস্থিতদের কাছে এই খবরটি পৌঁছে দেয়। (৩) জনাব আম্মার বিন ইয়াসিরের (রাঃ) প্রমাণ হিসেবে উত্থাপিত গাদীরের হাদিসঃ সিফ্‌ফিনের যুদ্ধে আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) যখন আমর ইবনে আস -এর মুখোমুখি হল, তখন সে বলেছিলঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন ‘নাকিসীন’দের (চুক্তি ভঙ্গকারীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি, আর আমি তার নির্দেশানুযায়ী তা করেছি। তিনি আরো বলেছেনঃ তুমি ‘কাসিতীন’দের (বিদ্রোহীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আর তোমরাই হলে রাসূলের (সাঃ) বর্ণিত সেই বিদ্রোহী তাই তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো এবং জানিনা ‘মারিকীন’দের (দ্বীন ত্যাগীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধেও সফল হব কি-না।

এই নির্বংশ! তুমি কি জাননা রাসূল (সাঃ) আলীকে (আঃ) বলেছেনঃ আমি যাদের মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তাদের মাওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ! আলীকে যারা ভালবাসে তুমি তাদেরকে ভালবাস আর আলীর সাথে যারা শত্রুতা করে তুমিও তাদের সাথে শত্রুতা কর। আমার অভিভাবক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) অতঃপর আলী। কিন্তু তোমার তো কোন মাওলা বা অভিভাবকই নেই। আমর ইবনে আস উত্তরে বললঃ এই আবা ইয়াকজান! কেন আমাকে ভৎসর্না করছো আমি তো তোমাকে ভৎসর্না করিনি।

(৪) আসবাগ ইবনে নাবাতা’র প্রমাণ হিসেবে উত্থাপিত গাদীরের হাদিসঃ সিফ্‌ফিনের যুদ্ধে আমিরুল মোমিনীন আলী (আঃ) একটি পত্র লিখেছিলেন এবং আসবাগ ইবনে নাবাতাকে দায়িত্বভার দিয়ে বলেছিলেন যেন পত্রটি মোয়াবিয়ার নিকট পৌঁছে দেয়। আসবাগ যখন মোয়াবিয়ার দরবারে উপস্থিত হল দেখল সৈনিকের এক বিশাল দল বিশেষ করে রাসূলের (সাঃ) দুইজন সাহাবী আবু হোরায়রা ও আবু দারদা সেখানে উপস্থিত আছে। আসবাগ বর্ণনা করেছেন যে, মোয়াবিয়া পত্রটি পাঠ করার পর বললঃ “আলী কেন উসমানের হত্যাকারীদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে না”। আমি বললামঃ “এই মোয়াবিয়া! উসমানের রক্তকে অযুহাত হিসেবে নেয়াটা মোটেই ঠিক না; তুমি আসলে ক্ষমতার ও শক্তির প্রত্যাশী। তুমি যদি উসমানকে সাহায্যই করতে চাইতে তাহলে তার জীবদ্দশায়ই তাকে সাহায্য করতে।

কিন্তু তুমি যেহেতু তার রক্তকে অযুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলে তাই এতটাই বিলম্ব করেছিলে যাতে সে নিহত হয়”। এই কথা শুনার পর মোয়াবিয়ার যেন টনক নড়ে গেল। আর আমিও যেহেতু চাচ্ছিলাম যে একটু বেশী উত্তেজিত হউক, সে কারণেই আবু হোরায়রাকেও আবার জিজ্ঞেস করলামঃ “এই রাসূলের (সাঃ) সাহাবী! তোমাকে এক আল্লাহর, যিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী এবং তাঁর প্রিয় হাবীব মোহাম্মদের (সাঃ) কসম দিচ্ছি- তুমি কি গাদীর দিবসে সেখানে উপস্থিত ছিলে না? সে বললঃ হ্যাঁ, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম”। বললামঃ “ঐ দিন আলী সম্পর্কে রাসূলের (সাঃ) নিকট থেকে কি শুনে ছিলে?” বললঃ আমি শুনেছিলাম তিনি বলেছিলেন যেঃ “আমি যাদের মাওলা বা অভিভাবক এই আলীও তাদের মাওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ভালবাস যে আলীকে ভালবাসে, তুমি তার সাথে শত্রুতা কর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তাকে তুমি ত্যাগ কর যে আলীকে ত্যাগ করে”।

বললামঃ এই আবু হোরায়রা! তাহলে কেন তুমি তাঁর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব আর তাঁর বন্ধুদের সাথে শত্রুতা করছো?” আবু হোরায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললঃ “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। অর্থাৎ আমরা আল্লাহর নিকট থেকে এসেছি এবং তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তন করবো। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিখ্যাত ব্যক্তিগণ, যারা এই হাদিসের সাথে যথার্থ আমল না করে আমিরুল মোমিনীন আলীর (আঃ) বিরোধীতা করতো, তাদের নিকট সাধারণ জনগণ গাদীরের এই হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উত্থাপন করতেন; যেমনভাবে উপরে বর্ণিত হল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.