আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলীমদের বিরুদ্ধে গীবত ০২

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ঢাকা শহরের অভিজাত এবং ব্যয়বহুল রেস্টুরেন্টগুলোতে রমজান মাসে ইফতার পার্টির জন্য বুকিং দিয়ে জায়গা রাখতে হয়। রমাজন শুরুর আগেই অনেকে বুকিং দিয়ে জায়গা পাকাপোক্ত করে রাখে । ইফতার পার্টির ইতরামি টেলিভিশনের কল্যানেও দেখা যায়। ঢাকা শহরের বণিক সম্প্রদায় ইফতার পার্টিতে এতিম ছেলেদের নিয়ে আহার করছেন। জেলখানার শিশুদের নিয়ে আহার করছেন।

প্রধান উপদেষ্টা এতিমদের সাথে ইফতারিতে সময় কাটাচ্ছেন, এরও আগে রাজনৈতিক আমলে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াও এই সংস্কৃতির ধারক বাহক ছিলেন। এই রমজানে দৌড়ের উপরে থাকবার কারণে ইফতার পার্টিতে এতিমদের সাথে মোলাকাতের সুযোগ হয় নি তাদের বরং ম্যাডাম ও আপাবিহনে এতিম আওয়ামী লিগ ও বিএনপি বিভিন্ন দুতাবাসে গিয়ে ইফতারপার্টিতে মিলিত হয়েছেন। সৈয়দ আশরাফুল বলেছেন আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন না করবার সিদ্ধান্তে অটল, তবে ইডতার পার্টির মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়াটা জায়েজ। এইসব ইতরামি দেখে অবাক হই না। মূলত বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক বেশী ইসলামআক্রান্ত।

ইসলামই রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে বিগত ৩৭ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসে। এই সংস্কৃতিতে আগে প্রচলন না থাকলেও ইদানিং ইফতার পার্টির দাওয়াত চলে আসে। দলবদ্ধ হয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করবার অন্য কোনো পদ্ধতি রমজানে থাকে না। উৎসব ও অপচয়প্রিয় বাংলাদেশী জনগণ এটা মেনে নিয়েই অর্থ ও ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে। হেভিওয়েট ইফতার পার্টি নিয়ে আমার আপত্তি থাকবার কোনো কারণ নেই।

গরীবের ক্ষুধার কষ্ট উপলব্ধি করবার যে ধারণা প্রচলিত বাংলাদেশী মুসলিম সমাজে সেটা বোধ হয় ইসলামের রমজানের মূল বিষয় নয়। বরং একটা মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং সঙ্গম বিরত থাকা এটাই সিয়াম সাধনা। প্রথমিক পর্যায়ে মুসলিমরা কতটা সঙ্গমপ্রিয় ছিলো, কতটা সঙ্গমপ্রিয় ছিলো আরবের উপজাতিগন। তাদের ১টা সম্পূর্ণ মাস দিনের বেলা সঙ্গমনিরত রাখা সম্ভবপর ছিলো না । ভুল হয়েই যেতো।

আমিও একদিন একটি ইফতার পার্টিতে গেলাম। গিয়ে বুঝলাম বাংলাদেশের কর্পোরেট সোসাইটি অনেক বেশী ইসলামিক হয়ে উঠেছে চেতনায়। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যাদের সেক্যুলার চেতনা ধারণ করতে দেখেছি এই ৬ বছরে তারাও ইসলামাক্রান্ত হয়ে গেছে। ঈদের আগে জাকাত দেওয়ার একটা প্রথাও প্রচলিত হয়েছে। অমুক বণিকের বাসার সামনে জাকাত নিতে গিয়ে কয়েকজন পায়ে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে।

কয়েকজন আহত হয়েছে। এমন জাঁকজমকপূর্ণ দান কতটুকু গ্রহনযোগ্য। অন্তত নিঃশর্ত দান সবসময়ই নীরবে হওয়া বাঞ্ছনীয়। তোমরা এমন ভাবে দান করবে যেনো তোমাদের বাম হাতও জানতে না পারে। টিভি ক্যামেরা নিয়ে, পেপারে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাকাত প্রদানের মহোৎসবে সামিল হয়ে দানবীর হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে দেখে আশ্চর্য হতে হয়।

অবশ্য জাকাতের শাড়ী তৈরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু দোকানই তৈরি হয়েছে। সস্তা মিলের শাড়ী বিক্রী করে তারা। জাকাতের কাপড় তৈরির মিল তৈরি হয়েছে। সেই একই গল্প- অর্থনীতিতে একটা বিকল্প চক্র তৈরি হয়েছে। যদিও জাকাত প্রদান মুসলিম ব্যবসায়ীদের যাদের উদ্বৃত সম্পদ রয়েছে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

যাদের স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ রয়েছে যেকোনো একটি দিনে তাদের মোট সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ দরিদ্রদের দেওয়া বাধ্যতামূলক আচরণ। ইসলামী করব্যবস্থায় চাষকরও আছে। উৎপাদিত শষ্যের ১০ ভাগের একভাগ কর হিসেবে প্রদান করতে হয়, যদি প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপাদন হয়। যদি সেচ করে জমি চাষ করতে হয় তবে উৎপাদিত ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ কর হিসেবে প্রদেয়। জাকাত ৪০ ভাগের এক ভাগ।

তবে শষ্যকর এবং জাকাতের ভেতরে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। শষ্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা গেলো জাকাতের বরাদ্দ অর্থ দরিদ্রদের উন্নয়নের জন্যই ব্যয় করতে হবে। তবে জাকাতের পয়সা দিয়ে কয়েক হাজার শাড়ী বিতরণ করে কোন দরিদ্রের উপকার হয় কিংবা সে দারিদ্রাবস্থা থেকে স্বচ্ছল অবস্থায় যেতে পারে ? যেহেতু বাংলাদেশে তেমন রাষ্ট্রীয় কোষাগার নেই যেখানে ধনাঢ্য বণিকেরা নিজেদের সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ জমা দিবে এবং রাষ্ট্র দরিদ্রদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এই কোষাগারে জমা দেওয়া অর্থ খরচ করবে, সুতরাং ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে নিজের ঈমাণের দায় চুকাতে গিয়ে আরও বেশী অনুকম্পাপ্রত্যাশী দরিদ্র তৈরি করছে। দরিদ্রদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কেমন হতে পারে? তাদের আয় উপার্জনের সুবিধা তৈরি করা। একজন কোটিপতি তার জন্য নির্ধারিত জাকাতের আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে অন্তত একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারতেন অনায়াসে।

তবে তিনি সেই টাকা দিয়ে আড়াই হাজার শাড়ী কিনে দানবীর খ্যাতী লাভের জন্য মরিয়া। পাশের বাসার মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে ধার্মিকের বিকার নেই, তিনি হজ্জ এজেন্সিকে ২ লক্ষ টাকা প্রদান করে প্রতিটা সক্ষম মুসলিমের জন্য হজ্জ ফরজ- এই ফরজ উদ্ধার করছেন। একজন ধর্মবেত্তা চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন- যে মানুষটি মনে করে প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে মক্কায় গিয়ে কা'বা শরীফের চারপাশে ৭ বার ঘুরপাক খেলেই হজ্জ্ব কবুল হয়ে যাবে সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। প্রতিবেশীর হক আদায় না করে, আশেপাশের মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়ন না ঘটিয়ে যে মানুষ হজ্জবের নামে অর্থ অপচয় করে সে প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না। তার হজ্জ্ব কখনই কবুল হবে না।

আমি আশায় আশায় থাকি, কবে বাংলাদেশের প্রচারমুখী মুসলিমদের ভেতরে এই চেতনার জন্ম হবে। যখন তারা ইসলামের নামে এইসব অনৈতিক শান শওকত দেখানোর প্রতিযোগিতা না করে প্রকৃত মুসলিমের মতো প্রতিবেশীর হক আদায় করবে, কবে তারা একটু ধর্মান্ধ মুসলিম না হয়ে সামান্য বিবেচক মানুষ হয়ে উঠবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।