আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দু দুটো ঈদের আনন্দ

চলছি, যেমন চলছে। ইমেইল: lostindrk@gmail.com

অনেক অনেক বছর আগে, সাল ২০০০ এ আমি আমার এক আত্মীয়ের সাথে গেলাম ব্যাংগালোরে। তার বাচ্চার শরীর খারাপ। এসমস্ত সময়ে যা হয় আরকি....পোলাপাইন টাইপের কাউরে নেওয়াই মুরুব্বীরা সমীচিন মনে করে। এরা খাটাখাটনিও করতে পারে, আবার টুপটাপ ইরেজী বলেও কাজ চালায়া নেয়।

সম্পর্কে আমার তিন বছরের ভায়েস্তা'র সারাক্ষণ ঠান্ডা সর্দি লেগে থাকতো। এখানকার ডাক্তার অনেক ভয়াবহ অথচ খিটির মিটির টাইপের অসুখের নাম শুনতেই, ভাবী কেঁদে কেটে অবস্থা ডাইল। ভাইয়া আর যাবে কই? সেইবার রমজান মাসের শেষের দিকে ব্যাংগালো'র কাটলো। ডাক্তারের কাছ থেকে ওকে পাবার পর পরই ঢাকার জন্য দে' ছুট। বছরে একটা দিনই তো আসে পরিবারের সংগে এটা খুশির দিন কাটানোর।

কিন্তু, আমার এদিকে বেশ মজায় কাটছে। নতুন জায়গা, ঘুরে ফিরে দেখছি, ব্যাপার না। পরিবারের কাউকে ঠিক তেমনভাবে আবার মিসও করছি না। হে হে!!! এবার আবার ভাবীর কান্না। ঢাকা'য় যেকরে হোক ঈদের আগে যেতে হবে।

বললে তো আর হয়না। বিদেশে থেকে ভাইয়ার হাত মোটামুটি খালি। এয়ার ফেয়ার নেই। তাই ঠিক করা হলো ট্রেনে যাবার। আসলে এছাড়া উপায়ও ছিল না।

এদিকে অনেক যুদ্ধ করে ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা হলো। অতপর, যাত্রা হলো শুরু। ভোরের দিকে উড়িষ্যা স্টেটে আসতেই পাক্কা খবর পাওয়া গেল ঈদের চাঁদ মামাকে দেখা গেছে। মানে, কোলকাতা আমরা ঈদের দিন বিকেলের দিকে পৌছাবো। ব্যাপারটা আমার কাছে তখনও এডভেন্চারাস মনে হচ্ছিল।

ঈদের আনন্দ এখন করতে হবে ট্রেনে। এটাও বোধ করি, নতুন এক্সপেরিয়েন্স। দেখি কি হয়? সকাল থেকেই মনটা আস্তে আস্তে খারাপ হতে শুরু। সবাই কি সুন্দর সুন্দর কাপড় পড়ে ঈদের নামাজে যাচ্ছে। আমি বসে এখনও ট্রেনে।

কি হলো জানিনা, হঠ্যাত পরের একটা বড় জংশনে ট্রেনের ইন্জিন পরিবর্তন হবে। শুনে বেশ ভালোই লাগলো। স্টেশনটি বিশাল হলেও মানুষ জন একদম কম। পাশেই দেখলাম, ঈদের জামাত শুরু হবে একটি ছোট্ট মসজিদে। বাবা মা'র জন্য এই প্রথম মন খারাপ হলো।

তাদের ছাড়া এই প্রথম ঈদ। চোঁখ দিয়ে কখন যে পানি গড়িয়ে এলো বুঝলামই না। ট্রেনের লেইট হবার কারণে আমরা যখন বাংলাদেশ বোর্ডারে এলাম, তখনম রাত প্রায় ৮টা। ভাইয়া বার বার বলে রেখেছে, রাত ন'টায় ঢাকায় লাস্ট বাস যায়। একে তো সারাদিনের ধকল, তার উপর মন মরা ভাব নিয়ে আর ভাল্লাগছিল না।

আধা ঘন্টায় বোর্ডার ক্রস করে বাসের কাউন্টারে যেতেই দুটো জিনিসে মনটা আবার আনন্দে লাফ দিয়ে উঠল। ১। বাসের টিকিট পাওয়া গেছে এবং, ২। বাংলাদেশ থেকে সেদিন চাঁদ না দেখা যাওয়াতে ঈদ পরেরদিন!!!!! দুদুটো ঈদের আনন্দ পাওয়ার মজাই আলাদা। আর, সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।

[বাই দ্যা ওয়ে, এটি আমার জীবনে ঘটা সত্যি ঘটনা]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।