আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানের ইতিকাফ

মানুষ মানুষের জন্য

রমজানের তৃতীয় দশকটি রোজাদারের কাছে বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় রোজাদার ইতিকাফে বসেন। ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান। আর পারিভাষিক অর্থে পার্থিব বিষয়বস্তু থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ দশ দিন (দিবা-রাত্রি) একাধারে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। খোদ নবী করিমও (সা.) রমজানে নিয়মিত ইতিকাফ করে সবার জন্য অনুকরণীয় এক অনন্য আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে হাদিস গ্রন্থগুলোয় অনেক উজ্জ্বলতম প্রমাণ রয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত নবী করিম (সা.) জীবদ্দশায় প্রতি বছর রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মহাপ্রয়াণ লাভ করেনÑ সেই বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (বুখারি শরীফ)। তার মহাপ্রয়াণের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ পালন করেছেন।

রমজানের ইতিকাফ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা.) গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার লক্ষ্যে হেরা গুহায় দীর্ঘ পনের বছর ধ্যানের মাধ্যমে আল্লাহপাকের সঙ্গে গভীর প্রেম সাধনায় কাটিয়েছিলেন। আর সেই ধ্যানের মর্ম উপলব্ধি করতে এবং বিশেষ মুহূর্তে প্রেমময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে প্রেমালাপের সুবর্ণ সুযোগ নিতে রমজানের তৃতীয় দশকে ইতিকাফের বিধান রয়েছে। এটি আবশ্যকীয় বিধান না হলেও মোমিনরা মাবুদের প্রেমের কারণে এ সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন না। অলি আল্লাহ ও মহাসাধকরা এ প্রেমের মজা গভীরভাবে উপলব্ধি করে আসছেন। যে কারণে বলখের শাহী তখত ছেড়ে জঙ্গলে মহান প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমালাপ করেছিলেন হজরত ইব্রাহিম আদহাম (রহ.)।

তিনি দুনিয়ার মায়া-মমতা, লোভ-লালসা ত্যাগ করে পরম সুখের পরশ লাভ করেছিলেন। প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমালাপ করতে এখনও ২১-৩০ রমজান বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সামর্থ্যবান লাখ লাখ প্রেমিক কাবা ও মসজিদে নববী নামক শ্রেষ্ঠ প্রেমকাননে হাজির হন তখন লাখ লাখ ইতিকাফকারীর চোখে-মুখে থাকে এক ঐশী প্রেমের উচ্ছ্বাস। সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া ছাড়া বৈষয়িক কিছু নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই। যথাসময়ে ইফতার-সেহরি সামনে চলে আসে। আল্লাহ যাদের সামর্থ্য দিয়েছেন, তারা জীবনে একবারের জন্য হলেও যেন কাবা বা মসজিদে নববীর প্রেমকাননে বসে প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমালাপ করেন।

আবার সেখানে যাদের যাওয়ার সামর্থ্য নেই তারা স্থানীয় মসজিদ, খানকা কিংবা নীরব কোন স্থানে একাকী ইতিকাফে বসে প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমালাপের চেষ্টা করেন। তাই ইতিকাফ চলাকালে নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও অন্যান্য ইবাদতে একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করা প্রত্যেক ইতিকাফকারীর আবশ্যক। সচেতন থাকতে হবে প্রেমময়ের সঙ্গে নিবিড় প্রেমালাপে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। কেননা এ দশ দিনের মধ্যে লুকিয়ে আছে অতি আকাংক্ষিত মহামূল্যবান 'শবে কদর'। যে মহিমান্বিত রাতে আল্লাহর ফেরেশতারা এবং রুহগুলো তারই হুকুমে বান্দাদের জন্য সর্বপ্রকার রহমত, বরকত, কল্যাণ ও মঙ্গল বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন।

তারা ইবাদত-বন্দেগিরত নেককার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেন আল্লাহর দরবারে। যারা ইতিকাফে স্বল্পমেয়াদি এ প্রেমালাপে সফল হতে পারেন, পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারেনÑ তারা বছরের অবশিষ্ট সময়ও জীবনযাপন, চিন্তা-চেতনা ও মননে-মানসে দায়েমি ইতিকাফে থাকেন। হরহামেশা প্রেমময়ের সঙ্গে তাদের চলে প্রেমালাপ। তারাই আল্লাহর অলি বা বন্ধুÑ তাদের জন্যই ঈদের প্রকৃত আনন্দ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।