আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্যোতিষী নিউটনের ভবিষ্যদ্বাণী, পৃথিবীর আয়ূ আর বেশী নেই!

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

১. ভুল দেখছেননা, সেই স্যার আইজাক নিউটনের নামের আগেই জ্যোতিষী উপাধি বসালাম, একটু সাহস করেই; কারণটা বলাই বাহুল্য, ভদ্রলোক যে পাগলাটে বা রোমান্টিক টাইপের বিজ্ঞানী ছিলেন আবার বেশ খানিকটা খোদাভীরু টাইপের লোকও ছিলেন, সেটা নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে বাজারে। তারমধ্যেই সম্ভবতঃ সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছে পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটি। যদিও পদার্থবিদ্যার জনক, ক্লাসিকাল মেকানিক্স, ক্যালকুলাস আর অপটিক্সের মতো ভয়াবহ সব শাস্ত্রের সূচনা এই নিউটনের হাত ধরে, তার মানে এই নয় যে একেবারে কাঠখোট্টা ধরনের, "শুধু চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি বা নাকে যা শুঁকি সেটা ছাড়া আর কিছু বুঝিনা" টাইপের লোক তিনি ছিলেন। বরং, রহস্যময়তা, কুসংস্কার আর অন্যান্য প্রাচীন বিষয়াদি নিয়ে তাঁর বেশ ভালোই উৎসাহ ছিলো। সত্যি বলতে কি, আমার ধারনা ভদ্রলোক এসব আবজাব জিনিস নিয়েই বেশী সময় কাটিয়েছেন, চার-চারটা বছর নাকি আলকেমিদের দেখানো স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন।

অনেক নিউটনপ্রেমীর ধারনা হয়ত তিনি আলকেমি রহস্যের সমাধানও করে ফেলতেন বা ফেলেছেনও (!!) যদি তার কুকুর ডায়মন্ড জানত সে কি করেছে! যাই হোক, শুধু আলকেমি হওয়াই না, আরো অনেক উদ্ভট বিষয়েই যে তাঁর আগ্রহ ছিলো এটা সবাই মানেন। তাঁর নাকি তোড়া তোড়া অপ্রকাশিত লেখা আছে যেগুলোতে তিনি যাবতীয় ভুতুড়ে ব্যাপার স্যাপার নিয়ে বেশ সিরিয়াস মত দিয়েছেন। নিউটন'স সিক্রেট, ডার্কস সাইডস অভ নিউটন -- এসব কীওয়ার্ডের সার্চে নিউটন সম্পর্কে নেটেই অনেক মজার মজার তথ্য পাবেন, বইও আছে মনে হয় একটা নিউটন'স সিক্রেট নামে। নিউটনের ভাববাদ সম্পর্কিত টুকটাক এসব বিষয় কিছুটা জানতাম, তবে সেদিন যেটা জানলাম, খানিকটা অবাকই হলাম। নিউটন নাকি জ্যোতিষীদের মতো ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন, তাও আবার যেন তেন বিষয়ে না, একেবারে আসল বিষয়ে।

সেটা হলো, পৃথিবী ধ্বংস হবে কবে? জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটিতে একটা শোতে গত বছর বিষয়টা বেশ আলোচনায় আসে। সেখানে নিউটনের ১৭০৪ সালে লেখা চিঠি/স্ক্র্যাপ থেকে জানা যায় যে আমাদের প্রাণপ্রিয় পৃথিবী নাকি আর মাত্র ৫২ বছর টিকবে। অন্ততঃ খবরটা এভাবেই প্রকাশ পেয়েছে! নিউটন কি তবে জ্যোতিষী খেতাবটাও নিয়ে নিবেন? সেটা জানতে হয়ত আমাদের আরো ৫২ বছর অপেক্ষা করতে হবে, যদি না তার আগেই লার্জ হ্যাড্রনওয়ালারা পৃথিবীর লালবাতি জ্বালিয়ে দেয়! তবে বটমলাইন হলো, নিউটন বেচারা জ্যোতিষী হিসেবে স্বীকৃত হবার সুযোগটা এমনেও পাবেননা, অমনেও পাবেননা। পৃথিবীই যদি ধ্বংস হয়, স্বীকৃতিটা দেবে কে? ২. স্বাভাবিক কারণেই পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে নিউটনের নোটটা নিয়ে সবচেয়ে উত্তেজিত ইসরায়েলীরা, কারণ নিউটনের সেই ভবিষ্যদ্বাণীটা অংকের হিসেবের চেয়েও অনেকটা শাস্ত্রের মন্ত্রের মতো। নিউটন এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাইবেলে (ড্যানিয়েল) দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে।

সেখানে তিনি পৃথিবীর শেষ দিনগুলো সম্পর্কে বলেছেন যে তখন দুষ্টু জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, সব কষ্ট-কান্না-ঝামেলা দূর হয়ে যাবে, ইহুদী জাতির মুক্তি ঘটবে আর চিরসুখী এক ইহুদী রাজ্যের অভ্যুত্থান হবে। বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে ধীমান ব্যক্তির কাছ থেকে এমন ভবিষ্যদ্বাণী পেয়ে কে না খুশী হবে! (নিউটনের নোটদুটোর ছবি পোস্টের সাথে জুড়ে দিলাম, আমার পড়ার ধৈর্য্য হয়নি, ব্যাটার হাতের লেখা বেশ খারাপ। ধৈর্য্যশীলরা পড়ে অনুবাদ করে দিতে পারেন। উইকিতে একটার পাঠোদ্ধার করা হয়েছে, তবে সেটার অনুবাদ পাঠোদ্ধারের চেয়েও কঠিন বলে মনে হয়েছে, বিবলিক ফ্রেইজিং সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকায় সে পথ মাড়ালামনা। ) তবে নিউটনের উদ্দেশ্য ঠিক জ্যোতিষীদের মতো ছিলোনা, মানে, কবে পৃথিবী ধ্বংস হবে সেটা গননা করে বের করে চারদিকে সাড়া ফেলে দেবার উদ্দেশ্যে তিনি একাজ করেননি।

বরং, তাঁর উদ্দেশ্যটা ছিলো উল্টো। সেযুগেও এযুগের মতো এরকম নানাবিধ ভবিষ্যদ্বাণীর জোয়ার চলত, কবে পৃথিবী ধ্বংস হবে এনিয়ে অনেক ধাপ্পাবাজই নানান গননা করে লোকের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করত। মহাজাতক নিউটন বরং এসবকে থামাতেই হিসেব কষে বলেছিলেন যে এত নাচানাচির কিছু নেই, পৃথিবী ধ্বংস হতে দেরী আছে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটির মূলকথা ছিলো ২০৬০ সালের আগে পৃথিবী ধ্বংস হবেনা! আবার ২৩৭০ সালের পরেওনা। এর মাঝমাঝি!! তবে স্পেসিফিক কবে পৃথিবী ধ্বংস হবে সেটা না বললেও ব্যাপারটা মোটেও তাঁর বাইবেলের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত বলে দেয়ার বিষয়টিকে ম্লান করেনা।

৩. এদিকে কাল সর্বশেষ যা দেখলাম তাতে আবার নতুনভাবে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখানকার টিভিতে এক প্রোগ্রামে তারা দাবী করলো যে নিউটন আসলে বাইবেলের উপর ভিত্তি করে না, বরং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতেই নাকি হিসেব টিসেব কষে বের করেছেন যে ২০৬০ সালের দিকে পৃথিবী ধ্বংস হবে। কাহিনীটা এরকম -- নীহারিকার গতিপথ নির্ণয়ে নিউটনের ভূমিকা আমরা জানি, এবং তিনিই প্রথম বলেছিলেন যে ধূমকেতুগুলোও আসলে কোন না কোন স্টেলার বডিকে ঘিরেই ঘোরে। এদেরকে অনেকদিন পরপর উদয় হতে দেখা যায় কারণ এদের গতিপথ অতিমাত্রায় লম্বাটে, মানে গতিপথ-উপবৃত্তের বড় অক্ষটা ছোট অক্ষের চেয়ে অনেক বড়। এটুকু ঠিক আছে।

এবং এডমন্ড হ্যালি, যিনি নিউটনের খুব ভালো এবং মতান্তরে একমাত্র বন্ধু, তিনি নিউটনের দেয়া সূত্রের উপর ভিত্তি করেই দিনের পর দিন অবজারভেশনের পর হ্যালির ধুমকেতু যে ৭৫ বছর পরপর আমাদের এক দেখা দিয়ে যায়, সেটা দাবী করেছিলেন। সেটা ১৭৫৮ সালে কনফার্মও করা হয়, যদিও হ্যালি বেচারা অতদিন বেঁচে ছিলেননা। নিউটন নাকি এই হ্যালির ধূমকেতু নিয়েই বলেছিলেন যে এটা আর পাঁচ-ছয়বার ঘুরলেই সূর্য্যের উপর গিয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, ধূমকেতু টাইপের তুলনামূলক হাল্কা জিনিসগুলো বড় বড় গ্রহ যেমন বৃহস্পতি/শনির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রহের টানে সোজাপথে চলতে পারেনা, ফলে এদের গতিপথ একটু একটু করে বদলাতে থাকে। আর নিউটনের ভবিষ্যদ্বাণী নাকি এই হ্যালির ধূমকেতু নিয়েই যে, সেটা নাকি গতিপথ পাল্টাতে পাল্টাতে একসময় সূর্য্যে গিয়ে আঘাত করবে!! এটা ঠিক যে সূর্য্যে আঘাত করলে আর রক্ষা নাই, বিস্ফোরণে একটানে সূর্য্যের আশপাশে যে তাপপ্রবাহ বাড়বে তাতে পৃথিবীর তাপমাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে, মানুষ তো বাঁচবেইনা।

কিন্তু অপবাকের মন্তব্যে মনে হলো টিভিওলাদের কর্পোরেট ভিডিওকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়াটা ঠিক হয়নি, হ্যালির ধূমকেতুর বেগ ৫০ মাইল/সে., সেটা সূর্য্যের বায়ুমন্ডলের (করোনা) ১ মিলিয়ন ডিঃ সে. তাপের বিশাল অঞ্চল পেরুনোর আগেই গলে-পুড়ে একাকার হয়ে যেতে পারে। এবিষয়ে বইদগ্ধ কোন আলোচনা, আর্টিকেল থাকলে পাঠককে শেয়ার করার আহবান জানাই। আমি টিভিওলাদের একটা মেইল করে দেখবো। যাই হোক, যে প্রশ্নটা থেকে যায়, তা হলো আসলেই হ্যালির ধূমকেতু কি পরেরবার সূর্য্যের পাশ দিয়ে যাবার সময় ঢুকে যাবে নাকি? তারমানে তো এটাও যে, গতবার মানে ৮৬ সালে আমাদের কানের পাশ দিয়ে গুলী গেছে, কেউ কি টের পায়নি?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.