আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিমুল বাশারের গল্প লেখার চেষ্টা...ব্রেকফাস্ট রেডি, স্পেশাল ব্ল্যাক টি উইথ লোকাল লেমন....(এডিটেড)



আমাদের বিষন্ন শহরে, আবার বৃষ্টি নামলো। দরজার পাল্লায় আঙ্গুল ছ্যাচা দমকা হা্ওয়ার সাথে তুমুল বৃষ্টি। এমনসব বৃষ্টির রাতে দোপা চকের ফসলী মাঠ ভেসে যেতো। মাছেদের মতো আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। কলা গাছের খোল দিয়ে নৌকা বানাতে ছুটে যেতাম সুপিদির কাছে।

আমি, খোকন, পলাশ, সালাম আর মামুন আমরা ছিলাম সুপিদির গ্যাং। দুর মাঠের ধনে ক্ষেতের আল দিয়ে যেতে যেতে সুপিদি আমাদের জানাতো কোন বাড়ির বড়ই সবচেয়ে বেশি টক। টক বড়ই সুপিদি ভীষন ভালোবাসতো। একদিন ঝর্নাদিদের বাড়ির উঠোনে বড়ই আনতে গেলে তুমুল ঝগড়া বেধেঁ গ্যালো সুপিদির সাথে। গাছে উঠার সময় ঝর্নাদি, একটি পলিথিন হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো "মাটিতে পইরা গেলে ওইসব বড়ই মাখানো যায়না"।

সুপিদি বললো "জোরে ঝাকি দিবি তাইলে পাকা বড়ই পড়বো। " ঝর্নাদি বললো তুই আমার কথা হুন, একলগে মাখায়া খামুনে, তুই পাইরা পলিথিনে কইরা আনবি। সুপিদি চিৎকার দিয়ে আমাকে জানালো "বিবাল ওরা জীবনে তরে নিবোনা। ওগো ছছি অইবো জানস্ না। মনে নাই পানিডাও ছুইতে দেয়না।

দুরে যাইয়া ফালাই দিয়া আবার ভইরা নিয়া যায়। " আমাদের গায়ের দিদি ছিল দুজন। যাদের রূপ নিয়ে ঘরে ঘরে বাবা মায়েরা তর্কে জড়িয়ে পড়তো। একজন কাচা হলুদের রং নিয়ে হিন্দু পাড়ার ঝর্ণাদি, অন্যজন পোড়া মাটির মতো আমাদের সুপিদি। নতুন নতুন খেলার আবিস্কারক ছিল এই দুই দিদি।

সুপিদির অসুখ করলে আমি ঝর্নাদির সাথে খেলতাম। আর ঝর্নাদি খেলায় না নিলে বা না খেলতে চাইলে সুপিদির কাছে যেতাম। সুপিদি ছিল দুরন্ত আর ঝর্নাদি শান্ত আর মায়াবী। আমরা সুপিদির সাথে পরিকল্পনা করতাম বিশ্বসালে (২০০০) বিশ্বযুদ্ধ লাগলে কিভাবে হিন্দু পাড়ার পন্ঙকারে মারবো, সাথে আর কাকে কাকে মারবো। আসলে সেদিন বড়ই তলায় ঝর্নাদির সাথে সুপিদির ঝগড়াটা বাধতো না যদি না আমাদের এলাকার মুসলমান বড়ভাইগুলো রাস্তা দিয়ে গান করতে করতে না যেতো।

সুপিদি ওদের দেখে জোরে এক চিঃকার দিয়ে উঠলো "ইস্ গান হুনলে কুত্তায় দৌড়াইবো, ছুলে আতো" এই বলে কুত্তার দিকে মনযোগ দিল। ঝর্নাদি বলে উঠলো ‍"ওই সুপি কুত্তারে ডাকিস না, ওরা কুত্তারে মারবো" এই নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু এক পর্যায়ে অভিমান। যদিও আমি সুপিদির গ্যাংয়ে তবু কিন্তু আমার ঝর্নাদির সাথেই খেলতে বেশি ভালো লাগতো। ঝর্ণাদি বলতো "সুপির সাথে ভিজস কিইয়ের লিগ্যা? তুই কি সুপিরে বিয়া করবি?" আমি লজ্জাবতির মতো ভেঙ্গে পড়তাম। ঝর্নাদি বৃষ্টি হলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতো।

আর সুপিদি ভিজতো আমাদের সাথে, নৌকা বানাতে আমাকে ডেকে নিতো কাছে। একদিন ঝর্ণাদিদের লেবু বাগানে আমি আর সুপিদি লেবু কুড়াতে গিয়েছিলাম। লেবু ঝাড়ের নিচে কি যে গন্ধ! একটি ঝাড়ে সাপ জড়িয়ে ছিল তাই দেখে সুপিদি আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। আমি সুপিদিকে বলেছিলাম আমার মনের সেই নরম কথাটি। খাচ্চর বলে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল সুপিদি ।

ঝর্নাদিকে সেই কথা বলতেই ঝর্ণাদি বলেছিল" আহারে সোনা, আমি হিন্দু না অইলে তরে কবে বিয়া কইরা ফালাইতাম। " একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নোটিশ দিয়ে গেল ঝর্নাদিদের বাড়িতে। ঝর্ণাদিরা এখন আর নেই। সুপিদিকেও খুলনার এক কাপড় ব্যাবসায়ী নিয়ে গেছে। এখন হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে আমাদের সেই গায়ে।

একদল ছেলে মেয়ে ঠিকই নাইতে নেমেছে, নৌকা বানাচ্ছে কলার খোলে, ঝর্ণাদিও তেমনই আছে। জানালার কপাট খুলে তাকিয়ে আছে বৃষ্টিভেজা ভাসা মাঠের দিকে। ঝর্ণাদির বয়স বাড়েনা। ঝর্নাদি, অভিমানে গাছেদেরই শুধু পাতা ঝরে যায়। আমি এখন আর বৃষ্টিতে ভিজিনা।

জানালা দিয়ে একবার তাকিয়ে দেখি। (এডিট হবে....চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।