আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লজ্জাবতী লতা



মনে পড়ে খুব ছোটবেলার কথা। যে মাঠ পেরিয়ে স্কুলে যেতাম, সেখানে ছিল চোরা কাঁটার ঝোপ আর অনেক লজ্জাবতী লতা। স্কুলে যাওয়া আসার পথে একটা প্রিয় খেলা ছিল লজ্জাবতী লতার ওপর হাত বুলিয়ে সেগুলো নুইয়ে দেয়া। মানুষের জীবন কত রকমের আনন্দ-বেদনার স্মৃতি থাকে। কত চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা থাকে।

কিন্তু তারপরও শৈশবের কোন কোন অকিঞ্চিৎকর বিষয় কেন মধ্য বয়সে এসে হঠাৎ এত মূল্যবান মনে হয় ? আজ বহু বছর পর শৈশবের সেই মাঠটার কথা খুব মনে পড়ে। আমি জানি সেই শহরের উপকন্ঠের সেই মাঠ আর এখন নেই। সেখানে নিশ্চয় এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অনেক উচুঁ উচুঁ দালান। কংক্রীটের নীচে চাপা পড়া মাটিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে লজ্জাবতী লতা। বহু দিন পর সপরিবারে দেশে গিয়েছিলাম।

আমার ছয় বছরের মেয়ের কাছে বাংলাদেশের সব কিছুই বিস্ময়কর। রাস্তার নেড়ি কুকুর থেকে রিক্শার পেছনের রংবেরং এর ছবি, দোকানে বিক্রি হওয়া জ্যান্ত মুরগী থেকে ঢাকার লক্কর ঝক্কর বাস। তবে সেনানিবাসের এক মাঠে লজ্জাবতী লতা দেখে তার যে বিস্ময়, তা আমাকে মনে করিয়ে দিল আমার শৈশবের সেই মুগ্ধতার দিনগুলো। পুরো শহরে এক চিলতে সবুজ মাঠ নেই যেখানে গিয়ে স্বস্তিতে একটু বসা যায়, খেলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ এখন যাদের দখলে সেই উর্দিধারীদের জন্য শহরের ভেতর আলাদা শহর।

সেখানে সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তাদের সুন্দর বাড়ী, স্কুল, হাসপাতাল। বাড়ীর সামনে সবুজ মাঠ, সেই মাঠে আমার মেয়ে ঘন্টা খানেক ধরে একের পর এক লজ্জাবতী লতার পাতা বুজে দিতে থাকে, তার চোখে যে বিস্ময়, যে মুগ্ধতা, তা দেখে আবেশ বুজে আসে আমার চোখ। আমি যেন ফিরে যাই আমার নিজের শৈশবে, সেই চোরা কাঁটা ঝোপ আর লজ্জাবতী লতায় ঢাকা সবুজ মাঠে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।