আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই লিখছি...



আমার সাবেক কর্মস্থলে বয়স এখনো ত্রিশও হয়নি, এমন একজন সাংবাদিকের এরই মধ্যে ত্রিশ-বত্রিশ টি বই বেরিয়েছে। প্রতি বই মেলাতেই তার পাঁচ-ছয়টি করে বই বের হয়। সব ক'টিই হটকেক। একেকটি বই মেলায় একেকটি বইয়ের তৃতীয় কী চতূর্থ সংস্করণও বের হয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ এর কোনোটিই এখনো আমার পড়া হয়ে ওঠেনি।

তবে ফেব্রুয়ারি এলেই টের পাই তার কদর। বই মেলায় নিজস্ব প্রকাশনার স্টলের সামনে ভীড় ঠেলে উঁকি দিয়ে তাকে দেখেছি, সে খুব গদলঘর্ম হয়ে বিকশিত দন্তে একের পর এক অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, অটোগ্রাফ শিকারীদের মধ্যে আবার বালিকাদের সংখ্যাই বেশী। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় পোস্ট কার্ড আকৃতির তার নিজস্ব বইয়ের চাররঙা বইয়ের বিজ্ঞপন। আর সে সব বিজ্ঞপনের ভাষা! ...একটির কথা বলি।

সেটা অনেকটা এ রকম... 'আপনি কী প্রেমে ব্যর্থ? অথবা চুটিয়ে প্রেম করছেন? আথবা ভাবছেন, শিগগিরই প্রেমে পড়বেন? আপনার অবস্থা যা-ই হোক না কেনো, এই বইটি আপনার জন্য অবশ্য পাঠ্য। চ্যালেঞ্জ--বইটি আপনার ভালো লাগতেই হবে। '... আর সে সময় অফিসে তাকে খুঁজে পাওয়াই দুস্কর। তবু দু-এক সন্ধ্যায় হঠাৎ হঠাৎ তিনি একটুক্ষণের জন্য অফিসে আসেন। বগলদাবা করে নিয়ে আসেন নিজের লেখা সদ্য প্রকাশিত ঝকঝকে মলাটের দারুণ সব বই।

অটোগ্রাফসহ কিছু কিছু বিলি করেন বিগ বসদের। অফিসের সেলিব্রেটি লেখক কাম সাংবাদিককে নিয়ে সে সময় দীর্ঘক্ষণ স্মোকিং রুমে আলাপ-চারিতা জমে ওঠে। টুকরো টুকরো কথা শুনতে পাই, তিনি নাকী বই লিখে রাতারাতি সুনাম কুড়িয়েছেন। একের পর এক প্রকাশক তাকে একটি চটি বই মোটা অংকের বিনিময়ে বের করার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজেন। সেই সাথে তার পায়ে পায়ে ঘোরে ব্যস্ততা আর লক্ষ্মী, বোধহয় স্বরস্বতিও।

* বছর খানেক আগে বাল্যবন্ধু, মার্কিন প্রবাসী ও সচল শামীম হক বাংলা মেইলর ডট কম-এ জানতে চেয়েছিলেন, আমি নিজে এ পর্যন্ত কয়টি বই লিখেছি?...ইত্যাদি। একটিও নয়--এমন সোজাসাপ্টা সংক্ষিপ্ত উত্তরে সে অবাক হয়ে আবারো বলেন, কেনো নয়? লেখা-লেখিই যেহেতু পেশা, সেহেতু আমার অন্তত দু-চারটি বই এরমধ্যে বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমার সমস্যাটি কোথায়? টাকা? যদি টাকার প্রয়োজন হয়, সে হয়তো আমাকে হেল্প করতে পারে। আমি যেনো তাকে দ্রুত একটি মধ্যম মানের বাজেট পাঠাই। ... আমি তাকে বলি, আমার অঢেল টাকা নেই।

সত্যি বলতে বরং উল্টোটাই সত্যি, এমন কী মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে আমার বেতনের সমস্ত টাকাই ফুরিয়ে যায়...এমনটাই ঘটে বেশীর ভাগ সময়। তবে বই প্রকাশের জন্য প্রবাসী বন্ধুর দ্বারস্থ হতে হবে, এমনটা নয়। আসলে বই প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত লেখা বা মনোবল কোটিই আমার নেই...সে সময় শামীম হককে এমনটাই বলি আমি। আর বলি, সাবেক সহকর্মীর সেলিব্রেটি লেখক হিসেবে উত্থানের সংক্ষিপ্ত কাহিনী ও আমার লেখক হয়ে ওঠার দীর্ঘ প্রস্তুতির কথা। অভিমানী বাল্যবন্ধু ওই মেইলটির কোনো জবাব দেন না।

হয়তো ধরেই নেন, কলোনিয়াল হ্যাঙ-ওভার জনিত কারণে আমি এক ধরণের হীনমন্যতায় ভুগছি। * সে যা-ই হোক। দেড় দশকেরও বেশী সময় পাহাড়ে, বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে অনেকটা জীবন পুড়িয়ে তথ্য-সাংবাদিকতা হয়েছে, হচ্ছে। ... পেশাগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কথাই বলা হয়নি ওই সব প্রতিবেদনে। সেই সব অকথিত কথামালা রিপোর্টারের ডায়রি থেকে সংবাদ-নেপথ্য কথন হয়ে কখন যেনো দ্রুত টাইপ হতে হতে প্রকাশ হয়ে পড়ে নিজস্ব খেরোখাতার ব্লগে...সচলে আর সামহোরিনে।

সবাই এর পাঠক নন...এমন কী অনেকেই নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন, আমি কোন পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন সময়ের কথা বলছি? এই সব কী স্বাধীন দেশে ঘটেছে? নাকী আমি বলছি একাত্তরের রক্তাক্ত কোনো যুদ্ধদিনের কথা? সহব্লগার জামাল ভাস্করের ব্লগে রাঙামাটির এক সাংবাদিক তো দাবিই করে বসলেন, রাঙামাটিতে না কী কোনো পুনর্বাসিত (?) বাঙালি নেই। প্রতি মন্তব্যে এর প্রতিবাদ করায় তিনি অপ্রসাঙ্গীকভাবে ব্যক্তিগত আক্রমনই করে বসলেন! * আমার প্রথম বই, তা-ও পাহাড়ের নেপথ্য কথন--প্রকাশিত হতে যাচ্ছে...এমন কথা জেনে দিনের পর দিন আমাকে ইমেইলে ও এসএমএস বার্তায় নিঃস্বার্থভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন সহব্লগার শ্যাজা দি ও মুশফিকা মুমু। ব্লগার মাহবুব লীলেন ভাই ও আহমেদুর রশিদ টুটুল ভাই বাড়িয়ে দিয়েছেন-- সত্যিকারের ভালবাসার হাত। শ্রদ্ধেয় অরূপ দা (আহমেদ অরূপ কামাল) অনেক ব্যস্ততার ভেতরেও এক কথায় রাজি হয়েছেন বইটির প্রচ্ছদ করে দিতে। আর বন্ধুবরেষু, অতিথি ব্লগার ফারহানা জাহাঙ্গীর তো ধরেই নিয়েছেন, আমি এরই মধ্যে দারুন এক সুলেখকে পরিনত হয়েছি!! তো এখনই তাদের ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করবো? না থাক...আগে বইটা প্রকাশ হোক তো! --- আপডেট: এই লেখাটি প্রকাশের পর পরই ই-মেইলে অরূপ দা পাঠানো বইটিই অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ পেলাম।

সেটিই এখন লেখাটিতে জুড়ে দিলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।