আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না প্রেম না ভালবাসা



আমি তোমার সবকিছু বুঝতে পারি। সব। কখন কিভাবে আমার দিকে তাকাও। কখন কিভাবে হাসো। কখন কি ভাবো।

সবকিছুই আমি বুঝি। আমার মতো করো কেউ এভাবে তোমাকে বোঝে কিনা সন্দেহ আছে। তমার কথা শুনে অবাক হলো অজিত। সত্যিই তো ওকে এভাবে আর কেউ কি বুঝতে পারে! অজিত ওর কাছের মানুষদের মধ্যে এমন একজন মানুষের নাম মনে করার চেষ্টা করলো যে ওকে বুঝতে পারার দলে ভিড়বে তমার সঙ্গে। না সেরকম কেউ নেই।

তমার হাত ধরলো অজিত। আমি সত্যিই গর্বিত। একমাত্র তুমিই আমাকে বুঝতে পারো। খুব ছোটবেলায় মা আমাকে বুঝতো। কখন কি লাগবে, কখন কি করবো সব বলে দিত আমার মা।

তারপর কিভাবে কিভাবে যেন তার সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয়ে গেল। এখন সে থাকে গ্রামে। আমি শহরে। আমার আর মার দুরত্বটুকু কখন যে না বোঝার সংজ্ঞা হয়ে দাড়িয়েছে, আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। তমা এখন অনেক কাছাকাছি এসেছে অজিতের।

ওরা একসঙ্গে হাটে, পথ চলে, গল্প করে, হাসে, খায়, বৃষ্টিতে ভেজে এমনকি গভীর কোনো আবেগে হাত ধরে অজিত। তমার নরম হাত। তমা ওকে অনেক কথা বলে, বলেছে। জানিয়েছে, ও একজন মানুষকে ত্্রীব ভাবে ভালবাসে। যার জন্য একমুহুর্তে পৃথিবীর সব সুখ বিসর্জন দিতে পারে তমা।

অথবা নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পারে ওই ছেলের কোকড়ানো চুলের নিচে ঠাই নেয়া মুখের একটু হাসিতে। যার জায়গায় অজিত কেন, কাউকেই বসাতে পারবে না তমা। সব জানে অজিত। জানে ওই নরম হাত যতই ধরতে পারুক কখনই সারাজীবনের জন্য আকড়ে ধরতে পারবে না। মজার ব্যাপার হলো, ওই ছেলেটির সঙ্গে এখন আর কোনো সর্ম্পক নেই তমার।

পাখি বাসা বেধে আবার যখন চলে যায়, তখন তো আর খড়কুটো নিয়ে যায়না। সেগুলো গাছেই পড়ে থাকে। সেরকম সেই ছেলেটির খড়কুটো দিয়ে বানানো বাসা এখনও রয়েছে তমার হৃদয়ে। সেখানেই বাস তার। সেই গল্পগুলো করতে করতে অথবা হালকা হতে হতে তমা আর অজিত পাড়ি দেয় সময়।

পাড়ি দেয় মুহুর্ত। অজিত সব বোঝে। তবু তমার জন্যই এবং নিজের সেরা সার্নিধ্যর লোভে অবিক্রিত সময়গুলো শুধুমাত্র তমার হাসির বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। লাভ হলো কিনা সেদিকে খেয়াল নেই তার। তমার ভাবির ধারনা সে নতুন করে আবারো একটা ভুল করতে যাচ্ছে।

কি দরকার অজিতের সঙ্গে এত মাখামাখির। না হয় একই কাসে পড়ে। না হয় একই সঙ্গে প্রাইভেটও পড়ে। না হয় প্রতিদিন স্যারের বাসায় পড়া শেষ হলে সন্ধ্যার পর তমাকে বাসায় দিয়ে যায় অজিত। তাই বলে রীতিমতো একটা গভীর সর্ম্পক তৈরি করতে হবে! তারপরও যদি অজিত দেখতে শুনতে সুন্দর হতো, স্মাট হতো, ভাল হতো।

অথবা বাবার অনেক টাকা থাকতো। বাবার টাকা তো দুরের কথা, ছেলেটার বাবাই বেঁচে নেই। তাহলে, যে ভালবাসার জন্য তমাকে অনেক বেশি মুল্য দিতে হয়েছে সেই ভালবাসা নামক একটা অদৃশ্য বস্তুর দিকে কেন ধাবিত হচ্ছে সে। অজিত যখন তমাকে এত সময় দেয় সেজন্য ওকে কিছু একটা উপহার দিলেই হবে। না.. না.. এ অসম্ভব।

ওর মতো একটা ভ্যাগাবন্ড ছেলেকে ভালবেসে দ্বিতীয় বারের মতো চরম ভুল কোনো ভাবেই তমা করতে পারে না। প্রশ্নটা শুনে একটু হাসলো অজিত। এর উত্তর জানা নেই ওর কাছে। কি বলো। তাড়া দিলো তমা।

বিব্রতকর আরো একটা হাসি দিয়ে অজিত বললো, আমি ঠিক জানিনা। তোমার আমার সর্ম্পক কি এই প্রশ্ন আমাকে করা মানে, মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে আমাকে নৌকা থেকে ফেলে দেয়া। তবে একথা সত্যি, তোমার সঙ্গে থাকা মানে আমার জীবনের সেরা কিছু সময় পার করা। তোমার সঙ্গে থাকা মানে আমার আমিকেও মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়া। কিন্তু এও সত্যি তোমার আমার সর্ম্পক এখন আর বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ নেই।

সেটা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। অজিতের কথাগুলো শুনে ওর হাত ধরে তমা। বন্ধুত্ব এমনকি প্রেমের মতো ফালতু সর্ম্পক তোমার আমার নয়। ওগুলোর উর্দ্ধে যে সর্ম্পক সেই সর্ম্পক তোমার আমার মধ্যে। যে সর্ম্পকে পৃথিবিীর কেউ জড়ায়নি কখনও।

অজিত তুমি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছো। নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছো। আমি চাইনা তোমার আমার সর্ম্পক কখনও শেষ হোক। আমার চাওয়াটুকু পূরন কোরো তুমি। প্লিজ...।

অজিতও আকড়ে ধরে তমার হাত। ওর খুব ইচ্ছে করে তমা নামটির আগে প্রিয় শব্দটা ব্যবহার করতে। কিন্তু সেই ইচ্ছেটা বুকের একপাশে সরিয়ে রেখে বলে, তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে তমা। একদম সেভাবেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।