আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোম্বিং রেঞ্জে রাজামশাই

রাজা

আবার সেই এয়ারবেইজের গপ্পো। অনেকের জানা হয়েছে অনেক অনেক দিন আগে আমি একটা এয়ারবেইজে ছিলাম। এয়ারবেইজের একটা এলাকা ছিল বোম্বিং রেঞ্জ। সেখানে প্রশিক্ষন বিমান তাদের বোম্বিং প্রাকটিশ করতো। শহর থেকে জায়গাটি ছিল অনেক দূরে একদম মরুভূমির মধ্যে।

আনুমানিক প্রায় ১৫ বর্গকিলো মিটারেরর এলাকা। এয়ার বেইজে থাকার কারণে শখ হলো একদিন বোম্বিং দেখতে হবে। যা ভাবা সেই কাজ। সেখানকার সুপারভাইজার ও আমি ছিলাম একই জেলার লোক। একদিন তারে বললাম ওরে আমার তো বেম্বিং দেখার বড় খায়েশ হয়েছে পূরণ করার ব্যবস্থা কর।

রাজার শখ বলে কথা। যথারীতি সে ব্যবস্থা করার জন্য লেগে গেল। ফ্লাইট সিডিউল মিলিয়ে এক বৃহঃস্পতিবার যাওয়ার দিন ধার্য করিলাম। আগের দিন এসে সে বলে রাজামশাই চলুন আপনাকে নিয়ে টার্গেট গুলি দেখিয়ে আনি। না হলে বোম্বিং দেখে মজা পাবেন না।

বিকালে তার সাথে রওনা দিলাম 4WD একটা পিকআপে করে। এই বাহন গুলি মরুভূমি জন্য অতীব উপযোগী। পিকাআপ একে বেকে চললো মরুভূমি পথে । জায়গাটা শহর থেকে অনেক দূরে প্রায় ১:৩০ চলবার পর দেখা গেল তারের ফেঞ্চ কিছুদূর পর পর বিশাল সাইনবোর্ড মানুষের খুলি চিহ্নিত সতর্ককারী সাইবোর্ড । একটা গেইটের কাছে থামেলে সিকিউরিটি আমাদের পাশ চেক করলো।

এরপর আমরা ঢুকলাম সেই নিষিদ্ধ এলাকায়। গা ছম ছমে একটা অনুভূমি মনে হচ্ছে যেন এলাকার উপর দিয়ে কোন দানব তার তান্ডবলীলা চালিয়েছে ভয়ংকরভাবে। কোন রাস্তা নেই আছে শুধু সাদা রং এর কিছু মার্কিং। এই পথ আমার সঙ্গীর চেনা তাই দেখে সে আস্তে আস্তে আগাতে লাগলো। চারপাশে ছড়িয়ে আছে শুধু ধংসের লীলা।

আমি ভাবি এ আমি কোন জায়গায় এলাম মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কিভাবে। খান খন্দ এক এক পেরিয়ে বেশ কিছুদূর যাবার পর দূরে কিছুর আবয়ব চোখে পড়লো। আমার সঙ্গী বললো এইটা একটা টার্গটে বানানো হচ্ছে । কাছা কাছি যাওয়ার পর দেখলা একটা বাড়ীর আদল কাঠ ও প্লাইউড দিয়ে তৈরী হচ্ছে । আরও কিছুদূর যাওয়া পর দেখ মিললো একটা ট্যাংক ।

কাছে গিয়ে দেখি ওটা বেলুন টাইপের । বাচ্চাদের কিছু খেলানা আছে সেই রকম কিন্তু আকারে পুরাপুরি একটা ট্যাংক। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর চোখে পড়লো একটা রাস্তা বানানো হয়েছে তার মধ্যে গাড়ী এবং অন্যান্য যানবাহন দাড়িয়ে আছে। সব গুলিই প্লাস্টিকের তৈরী ভিতরে বাতাস ভরা। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলে ।

আমার সঙ্গীর তদারকিতেই এগুলো বানানো এবং স্থাপন করা হয়েছে। সঙ্গী বললো চলেন আজকে ফিরে যাই কাল বোম্বিং সিডিউল কালকে আপনাকে বোম্বিং দেখাবো। ফিরে যাই তার ডেরায়। পরদিন সকাল ১০:৩০ থেকে বোম্বিং সিডিউল। যথারীতি সকালের নাস্তা করে বের হলাম বোম্বিং দেখার জন্য।

মনে মনে পুলকিত। গেইটের কাছে পৌছাতেই দেখি আগের দিনের চেয়ে অনেক কড়া পাহাড়া বসিয়েছে। সে যেহেতু এখানকার সুপারভাইজার তাই ভেতরে ঢুকতে তেমন সমস্যা হলো না। পাশ দেখিয়ে ঢুকে পড়লাম। গাড়ি আস্তে আস্তে চালিয়ে সে অবজারবেশন টাউয়ারেন নীচে দাড় করালো।

গাড়ী থেকে নেম গেলাম ভিতরে আমাকে বললো একটু বসুন আমি আসছি। একটু পড় একটা সানগ্লাস, ওভারওল,সেইফটি শু নিয়ে এসে বললো এগুলো পড়ে ফেলুন। আমি তাড়াতাড়ি পড়ে তার সাথে সাথে গিয়ে উঠলাম অবজারবেশন টাউয়ারের উপড়ে। সেখানে কয়েক জন সৈনিক (অফিসার) বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে আছে গোলাকার একটা রুমের মতো। সামনে পিছনে বিশাল গ্লাসের ভিতর দিয়ে পুরো বোম্বিং রেঞ্জ দেখা যাচ্ছে।

আগের দিনের টার্গেট গুলি বেশ স্পষ্টভাবে দেখা যায় এখান থেকে। এবার অপেক্ষার পালা। সময় কাটতে লাগলো .... আমি কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। হঠাৎ মৌমাছির মৃদু গর্জনের মতো শব্দ পেতে লাগলাম। সাথে সাথে রেডিও গুলো সরব হয়ে উঠলো আমার আশে পাশে মানুষ জনের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা শুরু হয়ে গেল বুঝতে পারলাম আছসে যুদ্ধবিমান।

পিছন ফিরে দেখি দিগন্ত বরাবর বেশ কিছু কালো বিন্দু। মনে হলো ১০-১২ টা বিমান আসছে। আমার অপেক্ষার পালা শেষ। মৃদু গর্জন এখন ড্রামের শব্দের মতো শোন যেতে লাগলো। চারপাশ্বের লোকদের মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম।

উত্তেজনা সংক্রমক জিনসি আমার মধ্যেও সংক্রমিত হলো । ধীরে ধীরে শব্দের উৎস গুলিকে মনে হলো তাদে ভলিউম বাড়িয়ে দিল। ছোট বিন্দুগুলি বিমানে আকৃতি নিতে শুরু করলো। শব্দ ততক্ষনে গগন বিদারীতে পরিনত হয়েছে । আমি কানে এয়ার কুলার লাগালাম।

শব্দ করতে করতে দ্রুত বেগে এগিয়ে গেল তাদের টার্গেটের দিকে। লক্ষে করলাম হঠাৎ কিছু একটা পড়লো একটা বিমান থেকে। আস্তে আস্তে জিনিসটার পড়ে যাওয়া দেখলাম । তারপর হঠাৎ টার্গেটের জায়গায় ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে উঠলো। ছিন্নভিন্ন হয়ে চারিদিকে ছিড়িয়ে পড়লো।

এক মুহুর্ত পড়ে শুনতে পেলাম ভয়ংকর আওয়াজ কানে এয়ার কুলার থাক সত্তেও প্রচন্ড শব্দ অনুভূত হলো। এর পর এলো শকওয়েভ। থর থর করে কেপে উঠলো পুরো অভজারবেশন টাউয়ার। বিমান গুলো দূর থেক ঘুরে এসে আবার দ্বীতিয় টার্গেটে বোমা ফেললো। আমি বিহব্বল হয়ে দেখছে সে ধ্বংসযজ্ঞ।

মুখে কোন কথ নেই। তৃতীয়বার দেখলাম একটা বিমান থেকে খুব দ্রুত গতিতে একটা মিসাইল এসে আঘাত করলো তৃতীয় টার্গেটে। সেকি ভয়ংকর শব্দ আর শখ ওয়েভ। থর থর করে কাপতে লাগলো পুরো অভজারবেশন টাউয়ার। মনে হলো বুঝি এই ভেঙ্গে পড়বে।

দেখতে দেখতে শেষ হলো তাদের এই ধ্বংস ধ্বংস খেলা, বেশী সময়ের না। তিনটি এটাকে বড়োজাড় দশ মিনিট । আমার যে অভিজ্ঞতা হলো তা আমার সারাজীবনের সঞ্চয়। এখনও যদি দেখি কোন দেশ আরেক দেশের উপর বোম ফেলে, টিভিতে তা সম্প্রচার হয়। আমি ফিরে যাই সেই দিনে।

আমার চোখের সামনে দেখতে পাই । অনুভব করতে পারি তাদের অনুভুতি। মন খারাপ হয়। মানুষের এতো নিষ্ঠুর না হলেও তো হয়।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.