আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মতৃপ্তির নেশায় (গল্প)

আলো..

ব্লু-রে নির্গমনের প্রথম টিউবটা খুঁজে পেয়েই- তার মুখের সামনে চট করে পাতলা হলুদ বর্ণের স্লাইডটা মেলিপা দিয়ে বসিয়ে, পঞ্চম হাতখানা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো র্র। ইতিপূর্বে নবম সিকিউরিটি কোড প্রবেশের স্ক্রিনটাও মেলিপার বাম পার্শ্বস্থিত কোড ডিসেবল প্রোগ্রাম দিয়ে অকেজো করে এসেছে সে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য এখন তার আর শুধু বাকি ব্লু-রে নির্গমনের দ্বিতীয় টিউবটা খুঁজে পেয়ে সন্তর্পণে তাকে কিছুক্ষণের জন্য অকেজো করে রাখা। মেলিপাটি পঞ্চম হাত হতে তৃতীয় হাতে বদল করে আবার খুঁজতে শুরু করল র্র। প্রথম হাতে খুব যত্নের সাথে খানিকটা গোল আকৃতির সাদা বর্ণের বস্তুটি ধরে রেখেছে সে।

ক্ল্যাভিথাণ দ্বারা গঠিত এ ব্স্তুটিকে প্রতিস্থাপন করাই তার এই মিশনের মূল লক্ষ্য। প্রতিস্থাপনের পর কিছুদিনের মাঝেই (হিসাব মতে দ্বিতীয় প্রদর্শনীর আগেই) হিলিয়ামের সাথে বিক্রিয়া করে সম্পূর্ণ ভাবে মিলিয়ে যাবে তার এই জটিল আবিষ্কার। ততদিনে অনায়াসে নিরাপদে লুকিয়ে ফেলতে পারবে সে মূল বস্তুটিকে। দ্বিতীয় টিউবটি খুঁজতে খুঁজতেই মাঝ সকালের সেই স্মৃতিটা আবারো র্র এর বুকের কাছের সেকেন্ডারি ব্রেনে ভেসে উঠল। তাদের সারা ইউনিটে চ্র-ই একমাত্র ব্যক্তি যাকে হিসাব করে গত ফিন বছর প্যাগা ছায়াপথের পরের দুই ছায়াপথ পেরিয়ে বেশ দূরের একটি সৌরজগতের বিশেষ এক গ্রহে মহাকাশ গবেষণা ইউনিট পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল।

আর সেখান থেকে ফেরার পর হতেই তার ভাব-গাম্ভীর্যের মাত্রা এমনই কয়েক য্যা গুণ বেড়ে গেছে যে সারা ইউনিটের কাছে তা এখন নিঃসন্দেহে অসহনীয় পর্যায় ঠেকেছে। তার সেই ভ্রমণের এক ফিন বছর পূর্তি উপলক্ষেই আজ মাঝ সকালে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল চ্র। সেই অনুষ্ঠানে তৃতীয় হাতে পিটা ভর্তি গ্লাস নিয়ে চলমান পথ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তার বিশাল সংগ্রশালা আমন্ত্রিত অতিথিদের দেখাচ্ছিল চ্র। অবশেষে সাত কোণ বিশিষ্ট এই বিশালাকার হল রুমটার সামনে এসে পৌঁছে অতিথিদেরকে বিশেষ গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রুমের ব্লু-রে নির্গমনের টিউবগুলো কোড প্রয়োগে সাময়িক কাল অফ করে দিয়েছিল সে। এরপর কপালের উপরের একমাত্র চোখটি নাচিয়ে নাচিয়ে মাত্রাতিরিক্ত গর্বিত কন্ঠস্বরে আমন্ত্রিত সকলের সাথে খানিকটা গোলকৃতির এই সাদা বস্তুটির সাথে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিল চ্র।

আর ঠিক সেই সময়েই তার এই আমন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্যটা র্র এর কাছে পরিষ্কার হয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল। পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে আসার আগ দিয়ে সে নাকি এই স্যাম্পল সংগ্রহ করেছে। এবং ফিরে এসে মহাকাশ ইউনিট প্রধানের কাছে বিশেষ অনুরোধ করে অবশেষে নিজের সংগ্রহশালায় এই বস্তুটিকে রাখার অনুমতি লাভ করেছে সে। বস্তুটির অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় বিশেষভাবে এই হলরুম গঠন করেছে চ্র এবং ডবলইউ রে দ্বারা এর মধ্যকার ব্ণহীন অর্ধতরল বস্তুতে ভাসমান নরম গোলাকার কমলা বৃত্তটির গঠন রুমের মাঝের হলগ্রাফিক স্ক্রিনে দেখানোরও ব্যবস্থা করেছে... আরো নানা ধরনের বর্ণনা দিতে দিতে অবশেষে চ্র হলরুমের আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে এক সময় যখন বলে উঠল যে, এর মাঝে পৃথিবীর ভাষায় প্রাণের সঞ্চার নামক জটিল এক প্রক্রিয়া ঘটে থাকে যা তাদের সাধারণ মস্তিষ্কের বোঝার ক্ষমতার বাইরে বলে সে আর এখন ব্যাখ্যা দিচ্ছেনা...., ঠিক তখনই র্র এর মেজাজ নবম স্কেলের চূড়ান্ত পর্যায়ের পৌঁছে গেল এবং ঠিক সে মূহুর্তেই তার মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যেভাবেই হোক এ বস্তু তাকে গাপ করে ফেলতেই হবে! হিসাব করে আরো কিছু ফিন বছর পরে সে নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারলেও এই মুহূর্তে বরং চ্র এর অহংকারের মাত্রা খানিকটা কমিয়ে আনাই র্র এর মস্তিষ্কে মূল উদ্দেশ্য হয়ে কাজ করছে। র্র ঠিক যেই মুহূর্তে ব্লু-রে নির্গমনের দ্বিতীয় টিউবটা খুঁজে পেয়ে অকেজো করায় মগ্ন ঠিক সেই মুহূর্তে পাঁচ লইমা দূরে চ্র তার সামনে খোলা হলগ্রাফিক স্ক্রিনটা অফ করে দিয়ে বামপাশে ভাসমান সমতল হতে পিটা ভর্তি গ্লাসে শেষবারের মতো চুমুক দিয়ে বিশ্রাম নেয়ার আয়োজন করছে।

চতুর্থ হাতের ইশারায় ঘরের নরম সবুজ আলোটাকে আরো একধাপ কমিয়ে দিয়ে একমাত্র চোখটা বন্ধ করতে করতে মাঝ সকালে নিজের আচরণের কথা ভেবে তার নিজেরই কেমন জানি হাসির মতো এসে গেল। বোকার দল সব! মহাকাশ ইউনিট প্রধানের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি তো দূরের কথা পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে ফিরে আসার পর তাকে নানা রকম শর্তাবলী দিয়ে বেঁধে রাখা সহ এক একটা ধূলিকণাও সব শুষে নিয়েছে মহাকাশ ইউনিট! এমন কি ফিরে আশার পর গত নিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে রাখা হত। প্রতিটা চাল-চলন তার স্ক্যান করা হত! কঠিন সব শর্তাবলী পালনের মধ্য দিয়ে তার দিন পার হত... অবশেষে এই বছর সেসব ঝুট ঝামেলা ব্ন্ধ হওয়ার পর পরই চ্র নিজের সেকেন্ডারি ব্রেন দিয়ে পৃথিবী থেকে তুলে আনা বিভিন্ন সব ছবি দেখে দেখে কিছু মিশ্রনের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ নিজের আবিষ্কৃত- এই খানিকটা গোলাকৃতির সাদা বর্ণের বস্তুটি দেখিয়ে কি দারুনভাবেই না সবাইকে চমকে দিল আজ! ছবিলিংক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।