আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজশাহীর আলোচিত ৪০ কাউন্সিলর প্রার্থী



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, রাজশাহী হত্যা, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, প্রতারণা, হুমকি-দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তরা এবারও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। অন্যদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচনী প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক ডুলু ও বিএনপি সমর্থক বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউন নবী দুদুর নামে মামলা বিচারাধীন। দুদুর নামে নামে মাদক দ্রব্য আইনের ধারার মামলা এবং ডুলুর নামে চলছে সন্ত্রাস ও ভাংচুরের মামলা। অন্য আরও তিনজন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধেও মামলা ছিল।

কিন্তু তারা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের নিজের দেয়া হলফনামায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন এমন অন্তত: ৪০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা, জমি দখলসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হত্যার অভিযোগ আছে কারও কারও বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদক-অস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও মামলা রয়েছে কারও নামে।

আবার কারও নামে আছে চুরি ও যৌতুকের অভিযোগ। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদ আলমের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় ২০০৬ সালে হয় একটি চুরির মামলা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ উপেক্ষার অভিযোগে একটি মামলা হয় ২০০৪ সালে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাউসার আলীর বিরুদ্ধে ২০০২ সালে দায়ের করা একটি ফৌজদারী মামলা এখনও। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলার হিসাব রয়েছে তাঁর নিজের হলফনামায়।

এরমধ্যে ২০০০ সালে সন্ত্রাসের অভিযোগে দুইটি, ২০০৭ সালে প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগে একটি মামলা হয়। এই তিন মামলাই বিচারাধীন। এছাড়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে তার নামে হয় আরও দুটি মামলা। যে মামলাগুলোতে তিনি খালাস পেয়েছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে ২০০১ সালে দায়ের করা দুইটি মামলা বিচারাধীন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সালেনুর বেগমের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আদালতে রয়েছে একটি মামলা। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলাম স্বপনের নামে রয়েছে প্রতারণার মামলা, যা দায়ের করা হয় ২০০৭ সালে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলমের বিরুদ্ধে আছে দুইটি মামলা। এর একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে এবং অপরটি অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে করা। সূত্র জানায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমান মতিনের চলতি ২০০৮ সালেই চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে করা সন্ত্রাস ও ভাংচুরের অভিযোগে করা মামলার বিচার চলছে। মতিন খালাস পেয়েছেন একটি হত্যা মামলা থেকে। একই ওয়ার্ডের রোকেনুর রহমান রুমেলের নামে ২০০১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ধারায় মামলা হয়। ২০০৫ সালে সন্ত্রাস ও ভাংচুরের অভিযোগে তার নামে আরও দুটি মামলা হয় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায়। অন্য প্রার্থী লাইলা সুলতানা লিজার বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা।

২০০৪ সালে দায়ের করা অস্ত্র বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মোহায়মেনের নামে চাঁদাবাজি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে দুটি মামলা বিচারাধীন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইকবাল হোসেনের নামে ২০০৩ সালে সন্ত্রাসের অভিযোগে দুইটি এবং চলতি ২০০৮ সালে অন্যের জমিতে সংঘবদ্ধ হওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শফিকুল ইসলামের নামেও আছে সন্ত্রাসের অভিযোগের মামলা। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলা হয় ২০০৪ সালে।

আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী হাসনাত জামানের বিরুদ্ধে আছে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মামলা। এই মামলাটি হয় চলতি বছরেই। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গতবারের বিজয়ী ওয়ার্ড কমিশনার শরিফুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে ১৯৯৬ সালে হয় একটি মামলা। ২০০৭ সালে তিনি এ মামলায় খালাস পান। কিন্তু মামলার বাদী রিভিশন করলে আদালত তা গ্রহণ করে।

ফলে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। সূত্র জানায়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়াউল হক টুকুর বিরুদ্ধে ২০০২ সালে সন্ত্রাসের অভিযোগে মামলা হয়। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম চৌধুরীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াহিয়া খান মিলুর নামে ২০০০ সালে সন্ত্রাসের অভিযোগে মামলা হয়। চলতি ২০০৮ সালেও চেক জালিয়াতির অভিযোগে তার নামে একটি মামলা হয়েছে।

একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও গতবারে বিপুল ভোটে নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার রেজাউন নবী আল মামুনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি এবং অপহরণের অভিযোগে বগুড়ার শেরপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে। তিনি সন্ত্রাস এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা তিনটি মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও গতবারের বিজয়ী ওয়ার্ড কমিশনার শাহাদত আলী শাহুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দখলের অভিযোগে করা একটি মামলা বিচারাধীন। অন্য তিনটি মামলা থেকে তিনিও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে সন্ত্রাস ও ভাংচুরের অভিযোগে করা একটি মামলা বিচারাধীন।

একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারী কার্যবধির ৪৫৭ ও ৩৮০ ধারার অভিযোগের একটি মামলা। সূত্র আরও জানায়, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও গতবারের বিজয়ী ওয়ার্ড কমিশনার মনিরুজ্জামান শরিফের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেসহ দুইটি মামলা বিচারাধীন। মনিরুজ্জামান তার হলফনামায় বিবরণ দিয়েছেন আরও সাতটি মামলার। এগুলো মামলার অভিযোগ সন্ত্রাস ও দখলের। এরমধ্যে ৫ মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন, একটিতে আপসরফা করেছেন এবং অন্য আরেকটিতে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।

তিনি হলফনামায় বলেন, ‘আমার নামে আরও মামলা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। সেসব আমার মনে নেই। তবে আমি কোনটিতেই অভিযুক্ত হইনি। ’ ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার জামিলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও ভাংচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন গাফ্ফারের নামেও রয়েছে একই অভিযোগের মামলা।

আর হত্যা মামলা রয়েছে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী মুস্তাক হোসেনের নামে। নির্বাচন কমিশন সূত্র মতে, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে সন্ত্রাসের অভিযোগে। আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও ভাংচুরের অভিযোগে রয়েছে দুইটি মামলা। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বাবুল সরকারের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগের। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোখলেসুর রহমান খলিলের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যুৎ আইনের ৩৯ ধারার একটি মামলা।

একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দখলের অভিযোগে দইটি মামলা বিচারাধীন। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এ কে এম কামাল জুয়েলের নামেও রয়েছে সন্ত্রাসের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা। একই অভিযোগে মামলা রয়েছে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী সাবান আলীর বিরুদ্ধেও। এই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল গাফ্ফার আবু বাক্কার মোল্লার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা বিচারাধীন। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মর্তুজা আলীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে একটি এবং শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে আরেকটি মামলা বিচারাধীন।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টুর নামে নারী ও শিশু নির্যাতন, প্রতারণার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা বিচারাধীন এবং আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা বিচারাধীন বলে সূত্র জানায়। পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থী রেজাউন নবী দুদুর বিরুদ্ধে গাজীপুরের একটি আদালতে মাদকের মামলার বিচার কাজ চলছে। ২০০৪ সালে এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি দায়ের করা হয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ ও ৩৩ ধারায়। মেয়র প্রার্থী দুদুর ভাগ্নের গাড়িতে করে ফেনসিডিল বহনের সময় তা আটক করা হয়। পুলিশি তদন্তে এ ঘটনার সাথে দুদুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি আসে।

ফলে দুদুকেও চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে রেজাউন নবী দুদু বলেন, আমি আমার ভাগ্নের গাড়িটি ছাড়িয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী উৎকোচ না দেয়ায় আমাকে মামলার চার্জশিটে ঢোকানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুল হক ডুলু বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা রাজনৈতিক কারণেই করা হয়েছে। সূত্র মতে, মেয়র প্রার্থী বিকল্পধারার নেতা আখতারুজ্জামান বাবলুর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ছিল।

সেই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। মহানগর যুবদল সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুইটি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে চারটি মামলা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি সবকটি মামলা থেকেই খালাস পান। পিডিপি নেতা মেয়র প্রার্থী রায়হানুর রহমান রায়হান তার নামে দায়ের করা রাজনৈতিক একটি মামলায় বহু আগে খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। রাজশাহী বিভাগীয় উপ-নির্বাচন কমিশনার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০০৮ এর রিটার্ণিং অফিসার সৈয়দ মোহাম্মদ মুসা বলেন, আদালতের আদেশে কেউ সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যায় না।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নেই। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.