আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টির সাথে ভালোবাসা …



সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজছে মানুষ, গাছপালা, ব্যালকনি, রাস্তা, সবকিছু। এই অঝোর বৃষ্টিতে, মন খারাপ করা স্যাঁতস্যাতে সকালে বারান্ধায় দাঁড়ালাম। বৃষ্টির একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্যে। বৃষ্টি দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে গেলাম।

দূর পাহাড়ে রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ শুনছিলাম অনেকক্ষন। হঠাৎ চমকে উঠলাম অনেক পরিচিত ভেজা হাওয়ার স্পর্শে। মন চলে গেল সেই সব দিনগুলিতে। অনেক দিনের পরিচিত সেই দিনগুলিতে। বৃষ্টিকে উপভোগ করার দিনে, বৃষ্টিকে ভালোবাসার দিনে।

পুরনো সাদাকালো সিনেমার মত ভেসে আসছে সেই বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, শরিয়ত উল্লাহ হাউস, ডাইনিং হল, একাডেমি ব্লক, হাসপাতাল , সব , সবকিছু। বৃষ্টির সাথে আমার ভালোবাসা শুরু তখন থেকে। কেন জানি আমার প্রথম থেকেই বৃষ্টিকে খুব মিস করতাম। একলা এক কিশোরের কাছে বৃষ্টি ছিল ‘কাল বেলা’র মাধবি লতার মত। বৈশাখ এর দুপুরের রোদে প্রচন্ড তৃষ্ণায় এক গ্লাস ঠান্ডা জল।

কলেজের নিষ্ঠূরতার মাঝে বৃষ্টি ছিল আমার একান্ত ভলোলাগা। শরিয়ত উল্লাহ হাউস এর বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে আমি চলে যেতাম কখনও সমরেশ এর স্বর্গছোঁয়া চা বাগানে। আবার কখনও ‘সাতকাহন’ এর মাঠ এর মাঝখানের চাপা গাছটার কাছে । কিংবা ‘উত্তরাধিকার’ এর অনির কাছে । যে কিনা খালি পায়ে তাদের চা বাগানে বসে বৃষ্টি দেখত ।

আসামের পাহাড় থেকে ভেসে আসা মেঘ দেখত। অনেক বিকালে কিংবা পিটি এক্সকিউজ হওয়া সকালে সবাই যখন ঘুমে আমি তখন বৃষ্টি দেখতাম । একা একা বৃষ্টিতে ঘুরতাম কমন রুমের পাশে, হাউস অফিসের সামনে কিংবা ৩৪ নম্বর রুমের সামনে। বৃষ্টির মাঝে কিছু সময়ের জন্যে হারিয়ে যেতাম দূর অজানায়। মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানিতে নৌকা ভাসাতাম।

ক্লাশ ১২ এ হাউস গার্ডেনে একটা গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়ে ছিলাম। বড় আদরের গাছ। বাসা থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম গাছটা। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বৃষ্টি নামলে আমি ১ নম্বর রুমে সামনের সিঁড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতাম। রাতের বৃষ্টি।

কখনও অঝোরে বৃষ্টি কখনও বা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে অঝোরে বৃষ্টি তে কাঁদতাম। নিঃসঙ্গ রাতে নিঃশব্দ কান্না। বৃষ্টির যে ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পেতাম, তার সাথে তুলনা চলে, প্রচন্ড জ্বরের সময় মায়ের হাতের জল-পট্টির সাথে। অনেক দিন এরকম ভালবাসার স্পর্শ পাইনা আমি।

মালয়শিয়াতে সারা বছরেই বৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালে ৪-৫ টার সময় বৃষ্টি হয় । এই নিয়ম করা বৃষ্টিতে সবাই বিরক্ত। কোন ভালবাসা নেই এর সাথে। নেই ব্যাঙের ডাক, ঝিঝি পোকার ডাক।

তবুও আমি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে খুঁজি। তার স্পর্শ পেতে চাই । তাকে আমি খুঁজি আমার বাসার বারান্দায়, সুইমিং পুলে, কিংবা আমাদের হিল পাক এর পাহাড়ে পাহাড়ে। তবুও তাকে পাইনা। হয়তো বৃষ্টি আসে ঠিক, কিন্তু তাকে অনুভব করার, তার স্পর্শ পাবার মত আমার মনটা মরে গেছে অনেক দিন আগে, আমার নিজের অজান্তে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।