আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আক্ষেপ

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

মাঝে মাঝে আশ্চর্য লাগে ভাবলে, আমরা কোন সময়ে বসবাস করছি। আমাদের ভেতরে কোনো গুরুতর মানসিক বিকার কাজ করছে প্রতিনিয়ত। আমরা নিয়মতান্ত্রিকতা এবং আইনানুগত্যতা ভুলেছি। বলা যায় ভুলতে বাধ্য হয়েছি রাষ্ট্রীয় কারণে। প্রশ্নটা উত্থাপিত হয়েছে অনেক আগে থেকেই, আজকেও রিফাত হাসান এই প্রশ্নটা তুলেছে।

জামায়াত, রাজাকার, যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে একটা আলোচনার সূচনা করবার আগ্রহ তার ছিলো। তার ভাষা এবং শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারের ভেতরে এমন কোনো দুরত্ব আছে যা আলোচনা করতে আগ্রহী করে না। তবে অভিযোগগুলো কিংবা সমস্যা চিহ্নিতকরণের জায়গাটা পরিস্কার। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইস্যুটা কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক এবং সাধারণ মানুষের অনুভুতি নিয়ে খেলা, না কি কোনো ক্ষমতাবান পক্ষ এখানে বিদ্যমান যে আন্তরিক ভাবে বিচারটা চাইছে। বাংলাদেশের অবস্থা এমনই উদ্ভট করুণ যে এখানে অনিয়মটাই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলে আসছে এবং অনুসৃত হচ্ছে।

এখানে রাজনৈতিক দল সংসদে গিয়ে নিজেদের পারস্পরিক বৈরিতার সনদ সই করে। তাদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের মাত্রা এতটাই বেশী যে কোনো সংসদের মেয়াদ শেষ হলে দেশ থেকে ১১ জন নির্বিরোধী মানুষ খুঁজে তাদের হাতে নিবাচন অনুষ্ঠানের দায়ভার দিয়ে একপক্ষ ক্ষমতা ত্যাগ করে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোটার তালিকা সংশোধন, নির্বাচনী আসনের সীমানাচিহ্নিত করার কাজটাও তারা এই নির্বিরোধী ১১ জনের হাতে ছেড়ে চলে আসেন। এই সময়টাতেও পারস্পরিক অবিশ্বাস কাটে না। যেহেতু সংবিধানের বিধানে আছে সদ্য অবসরে যাওয়া কোনো বিচারপতি প্রাথমিক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন, তাই প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলে। ।

মানুষ নিয়ম মেনে অনেক দুর্নীতি করতে পারে। দুর্নীতি সব সময় নীতির বরখেলাপ নয় বরং দুর্নীতি এমন একটা সামাজিক অবস্থা যেখানে প্রচলিত নীতিকেও নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করা যায়। উন্নত জনকল্যানমূলক রাষ্ট্রধারণায় নাগরিকদের কিছু কিছু অধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষা অবৈতনিক, তবে হাইস্কুলের পর থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য পয়সা দিতে হয় কোথাও কোথাও, কোথাও তা দিতে হয় না। রাষ্ট্র সকল নাগরিকের উচ্চ শিক্ষারও ব্যবস্থা করে দেয়।

রাষ্ট্র নাগরিকের চিকিৎসা সহায়তা দেয়। এবং মানবিকতা বিবেচনা করে বিকলাঙ্গ সন্তান এবং পরিত্যাক্ত সন্তানের লালন পালনের জন্য আগ্রহী মানুষদেও পারিশ্রমিক দেয়। বাংলাদেশের এতিমখানাগুলো জনকল্যানমুখী ধারণা থেকে তৈরি হয় নি। রাষ্ট্র এসব এতিমখানার সামান্য অর্থ বরাদ্দ করলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতিতে ইসলামি ভাবধারা প্রবল থাকবার জন্য এখানে দত্তক নেওয়া কিংবা অন্যের সন্তানকে তার নিজের পরিচয়ে লালন পালনের বিষয়টা উপেক্ষিত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সামর্থ্য বিবেচনা করলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে এর অধিক কিছু আশা করা বাঞ্ছনীয় না।

বরং রাষ্ট্র প্রতি মাসে বৃদ্ধ ভাতা দিচ্ছে, নারী শিশুদের শিক্ষা ভাতা দিচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের মাসোহারা দিচ্ছে এবং এই বরাদ্দটা আকাশ ছোঁয়া নয়। বরং সর্বোচ্চ অঙ্কটা ৫০০ টাকার। মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত ৫০০ টাকা মাসোহারা পান, হয়তো উঁচু পদের কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা এর বেশী পেতে পারেন, তবে অধিকাংশের জন্যই বরাদ্দ এটুকুই। অসহায় পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আবাসনের ব্যবস্থাও আছে সীমিত আকারে। সেই সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর একটা তাগিদও থাকে, সরকার প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ায়।

আর যেহেতু স্বাধীনতার ৩৭ বছর পার হয়ে গেছে সে সময়ের যুবকেরা এখন বৃদ্ধ, তারা টুপটাপ মরে যাচ্ছে। তবে সমস্যা হলো এই বৃদ্ধ বয়েসে তারা শ্রমিক হিসেবে তেমন আকর্ষণীয় নয়, তারা কায়িক শ্রম করতে লজ্জা পান না, তবে তাদের তুলনায় যুবকেরা অনেক বেশী আকর্ষণীয় শ্রম বাজারে, তারা কেউ কেউ রিকশা চালান, কেউ মুদির দোকান দিয়েছেন, কেউ চায়ের দোকান দিয়েছেন, কেউ কেউ অভাবে চোরাচালানী করেছেন। নানাবিধ পেশায় তারা ছড়িয়ে পড়ে জীবিকা অন্বেষণ করছেন এবং কষ্ট করে হলেও জীবন ধারণ করছেন। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার কারণে এখনও বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের সন্তানেরা পরিত্যাক্ত করে না। তবে অনেকের সন্তান হয় নি, তাদের দায়ভার রাষ্ট্র নিচ্ছে না।

এমন বৃদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধা ২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সকালে আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত তার নিজস্ব। তাকে কেউ বাধ্য করে নি। তবে পরিস্থিতি এবং দারিদ্র তাকে বাধ্য করে তার জীবনটা সংক্ষিপ্ত করতে। অভাবের তাড়নায় কায়ে ক্লেশে অপমানিত হয়ে আর কতদিন বেঁচে থাকা যায়।

তার মাসিক বরাদ্দে তার চিকিৎসা খরচ চলে না, তার খাওয়ার খরচ মেটে না, কাছা ঢাকতে গেলে কোঁচা খুলে যায়, উর্ধাঙ্গ ঢাকতে গেলে নিন্মাঙ্গ উদোম হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে তার অবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র তেমন কোনো উদ্যোগ নেয় নি। সে বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। তবে এর এক শতাংশও সেই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ হয় নি। তার মৃত্যুর পরে শুরু হলো জটিলতা।

বাংলাদেশ তার বীর সেনানীদের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা রেখেছে। অর্থ্যাৎ কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে, কোনো মুক্তিযোদ্ধা যার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে, তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হবে মৃত্যুর পরে। রাষ্ট্র খুব অদ্ভুত একটা সংস্থা, তার নিজস্ব বিধি আছে, বিধিমালা ভঙ্গের স্বভাব আছে। তবে মাঝে মাঝে কোনো এক অজানা কারণে তারা নিয়মনিষ্ঠ এবং নৈতিকতাপরায়ন হয়ে উঠে, যে মানুষটাকে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তার জীবতদ্দশায় তাকে মানুষের সম্মান না দিলেও মৃত্যুর পর সে সম্মান দিতে বদ্ধপরিকর। আর এ সময়েই আত্মহত্যা করা মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে অহেতুক নৈতিকতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে রাষ্ট্র।

আত্মহত্যা করা একজন মানুষকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া যাবে কি না এই নিয়ে প্রশাসন দ্বিধাবিভক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অহেতুক সম্মান প্রদর্শন কিংবা অহেতুক অবজ্ঞা প্রদর্শন নিয়ে কিছু বলা যাবে না রাষ্ট্রকে। রাষ্ট্র তার নাগরিকের চাহিদা পুরণ করতে পারছে না। রক্তপ্রলেপ দিয়ে তৈরি সীমান্ত ডিঙিয়ে পরদেশে পালাতে মরিয়া মানুষদের মিছিল দেখে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে রাষ্ট্র তার কাজ করতে ব্যর্থ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র অনেকাংশে ব্যর্থ কারণ রাষ্ট্র অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছে প্রশাসনিক পর্যায়ে।

রাষ্ট্র তার নাগরিকের উপরে করা অবিচারের বিচার করে নি। এই অপরাধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার পাপে মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হলে সেখানেও ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কথা চলে আসে। এটা কোনো একটা বানানো নাটক কি না এই নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা চলে মহলে মহলে। তাই অন্য সব জনকল্যানমূলক রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের তুলনা চলবে না।

ঘটনাটা মনে নাড়া দিলো তাই লিখছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রে পরিত্যাক্ত সন্তানদের পারিবারিক ভাবে লালন পালনের জন্য রাষ্ট্র ভাতা দেয়। একজন সর্বোচ্চ কতজনকে লালন পালন করতে পারবে এটাও নির্দিষ্ট, সাধারণত সে সংখ্যা ৫ জনের উপরে ননা। তবে যোগ্যতা দেখাতে পারলে এর বেশী বাচ্চাকে লালন পালনের অধিকার পাওয়াও বিচিত্র না। যার গল্প তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে ১১ জনকে দত্তক নিয়েছিলো, যাদের অনেকেই মানসিক বিকলাঙ্গ, তাদের বিশেষ সহযোগিতার এবং সহায়তার প্রয়োজন ছিলো, তবে এই মহিলা রাষ্ট্র থেকে যে বরাদ্দ পেতো তা দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করত এবং এইসব স্পেশাল নিডী চাইল্ডদের বিষয়ে সে উদাসীন ছিলো।

রাষ্ট্র অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছে এবং সেই অর্থ লোপাট হয় নি এমন ঘটনা বিরল। এমন কি ক্লিনটন যখন গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই প্রকল্প শুরু করেছিলো তার বিশেষ পরিকল্পনার সবটাই ব্যর্থ হয়েছে। কেউ অর্থ ফেরত দেয় নি। অবশ্য তাদের এমন করিৎকর্মা ঋণউদ্ধার কর্মী নেই। যারা ঘরের চাল, গোয়ালের গরু, পুকুরের মাছ আর ক্ষেতের ফসল উঠিয়ে নিয়ে আসবে কিস্তি দিতে না পারলে।

এখানে লাঠি হাতে কেউ নেই তাই দবিদ্র মানুষ ঋণ নিলেই ফেরত দেয় ইউনুসের এই দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠানোর প্রকল্প সেখানে নিদারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রের অর্থ লোপাট হওয়া দুঃখজনক নয় বরং লোপাট হওয়ার পরিনামে যখন কেউ মৃত্যু বরণ করে সেটা দুঃখজনক। সেই মহিলার ১১ বছরের জেল হতেও পারে। রাষ্ট্র অন্তত অনেক দেরীতে হলেও তার ভুল উপলব্ধি করে সেটা সংশোধনের একটা উদ্যোগ নিয়েছে। যে অপরাধী তাকে বিচারের মুখোমুখী করেছে।

ফ্রান্সের একটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিলো জার্মান সেনারা, যে দিন প্যারিসে অবতরন করে মিত্র বাহিনী সে দিন উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসীরা একজন জার্মান সেনাকে মেরে ফেলেছিলো, তবে উদ্ধত জার্মান সেনারা কাউকেই রেহাই দেয় নি, একটা গ্রামের ৪০এর বেশী শিশুকে জবাই করে হত্যা করেছিলো, যুদ্ধাপরাধের খাতায় এই গ্রামের নাম উঠে নি, তবে অনেক দেরীতে হলেও সেই গ্রামে পৌঁচেছে জার্মান সরকারের আইনরক্ষাকারী বাহিনী। তারা আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে ৫৪ বছর আগে করা অপরাধের জন্য। তাদের ক্ষমা করে নি সে গ্রামের জনগণ। তারা বিচারের মুখোমুখী করতে চায় সেইসব সেনাদের। এই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাংলাদেশ নিবে না।

বাংলাদেশের সে তাগিদ নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাই অদ্ভুত। এ খানে সরকারী কর্ম কমিশনে ২২ জন অবৈধ নিয়োগ পেয়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন, তারা নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন এবং সরকারের তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বরখাস্ত করা হবে এই হুমকি দিচ্ছে রাষ্ট্র। এখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়া যায় না। জেলের ভেতরে ঢুকে ৪জন রাষ্ট্র নায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় সংগঠককে হত্যা করে চলে যায় ঘাতক বাহিনী, রাষ্ট্র তাদেরও হত্যাকারীদের বিচার করতে পারে নি।

রাষ্ট্র রাজনৈতিক কোনো হত্যার বিচার কাজ শেষ করতে পারে না। তবে রাষ্ট্র যখন এমন অপরাধের বিচার না করে সেটার পৃষ্ঠপোষকতা করে তখন রাষ্ট্রের জনগনের কাছে ভুল সংবেদন পৌঁছায়। এই দেশে গুরুতর অপরাধ করেও পার পাওয়া যায় যদি কোনো ভাবে এটাকে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে স্বীক্বতি দেওয়া যায়। এভাবেই অনেক অপরাধী নির্বাচন করে সংসদে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার পাচ্ছেন। নাসির উদ্দিন পিন্টু কিংবা গোলাম ফারুক অভি কিংবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কিংবা এমন ছোটোবড় নানা অপরাধী সংসদে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে।

বাংলাদেশের জনগণ অদ্ভুত, তারা হঠকারী উচ্চকিত মানুষদের নিজেদের নেতা ভাবে, সুশীল সংগঠক তাদের কাছে যোগ্য কর্মী, কোনো নেতা নন। কারণ নেতা হতে হলেই তার গলার জোড়ে আসমান ফাটিয়ে ফেলতে হবে। এমন হাঁকডাক করতে না পারলে নেতা হওয়া যাবে না এখানে। অপরাধীরা সংগঠিত হয়ে নিজেদের মর্জমফিক নিয়মকানুন পরিবর্তন করছে। আর অপরাধীদের স্বর্গ হচ্ছে বাংলাদেশ।

নিতান্ত নিরাবেগী হয়েই বলি, মেনে নিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে যে ঘটনা ঘটলো সেটা সাজানো নাটক। একুশে টেলিভিশন সেটা তৈরি করেছে। এটা মানুষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগকে একটু নাড়া দেওয়ার একটা চক্রান্ত, তবে টিভির ভিডিও ফুটেজে সেই ব্যক্তির চেহারা স্পষ্ট। ডেইলি স্টারের ছবি দেখে ঠিকই আমাদের কর্মদক্ষ জলপাই মালীরা ছাত্রটিকে শনাক্ত করেছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সক্ষম হয়েছে।

সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশের পুলিশই। বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব প্রয়োজনে ছুটে যাচ্ছে কে কোথায় কোন নারীর সাথে সঙ্গম করছে সেই ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরতে, তারা অপরাধী ধরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় নিয়ে যাচ্ছে মাঝ পথে তাকে খুন করে ফেলছে। আর পরিত্যাক্ত অস্ত্র সাজিয়ে বলছে তাকে তার বন্ধুরা উদ্ধার করতে এসিছিলো গোপন সূত্রে খবর পেয়ে। শালার বোকাচোদা র‌্যাবের গোপনীয়তা এত সহজেই উন্মুক্ত হয়, এমন কি রাস্তায় যে কুকুরটা মুতে তারও পুরুষাঙ্গ উন্মুক্ত হয় না , সেখানে একটা গ্রেফতারের তথ্য উন্মুক্ত হয়ে যায়, উন্মুক্ত হয়ে যায় কোন রাস্তায় সেই অপরাধী যাবে। সেখানে আড়ালে অপেক্ষা করে অপরাধীর বন্ধুরা।

বন্দুক যুদ্ধ হয়, র‌্যাব সদস্য আহত হয়, তবে সেইসব আহত র‌্যাব সদস্যদের আর সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনো ক্ষত নিয়ে উপস্থিত হতে দেখি না, তারা নিজেদের সাহসিকতার জন্য কোনো পুরুস্কারও পান না। এই র‌্যাবও সেই ব্যক্তিকে আটক করতে পারে না, বাংলাদেশের পুলিশও তাকে আটক করতে পারে না। তাকে আটক করা হোক, তার কাছেই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা। যদি ধরেও নেই এই নির্যাতিত ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা নন, তবে তার মতো একজন বয়স্ক মানুষকে ভরা মজলিসে লাথি মারাটাও একটা সামাজিক অপরাধ। এই অপরাধের জন্যও তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

রাষ্ট্র এইসব অপরাধের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয় না। রাষ্ট্র অপরাধীদের তোষণ করে চলে। বাংলাদেশ নিজের প্রাথমিক অনীহা থেকে বাইরে বের হয়ে আসতে পারে না। এই অপরাধেগুলোর বিচার না করে সামনে আগানো যাবে না। এটা সবাই বুঝে, কোনো না কোনো সময় বিচারের মুখোমুখী করতে হয় অপরাধীকে, অপরাধীকে নিজেকে সংশোধন করবার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।

সে সংশোধিত হলে সমাজ তাকে সামান্য ঘৃনার চোখে দেখলেও অন্তত মেনে নেয়, তার সামাজিক সম্মান নষ্ট হয়, তার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবার অধিকার নষ্ট হয়। রাষ্ট্র ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্তদের সামাজিক অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এইসব বিধান করেছে, যেনো সংসদে সম্মানিত মানুষের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে গররাজী, তারা গরিমসি করে, বাংলাদেশ এদের অপরাধের স্বীকৃতি দিলো না। এরা এখনও সেই অপরাধের পক্ষে যুক্তি তৈরি করে, সাফাই গায়, তবে তারা অপরাধের জন্য মৌখিক ক্ষমা প্রার্থনাও করতে চায় না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদের এই সুবিধাটুকু দিয়েছে, তারা অপরাধ করেও রাষ্ট্রের চোখে নিরপরাধী, শুধুমাত্র সময়ের ফেরে পড়ে যাওয়া ভ্রান্ত মানুষ।

একজন বৃদ্ধকে অপমান করে যাওয়া একটা মানুষের ছবি পেপারে আসলেও তাকে শনাক্ত করতে পারে না পুলিশ, বাংলাদেশের ধ্বজভঙ্গ পেপার-পত্রিকার সাংবাদিকেরা আরিফকে নিয়ে উচ্চকিত হয়ে তাকে ৬ মাস জেলে অন্তরীণ করে ফেলে, তবে এই ঘটনায় তারা তেমন কোনো প্রেসার তৈরি করতে পারে না। বাস ভাড়া ২ টাকা বাড়লে সেটা নিয়ে ১ সপ্তাহ ধারাবাহিক প্রতিবেদন হয়, তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে লাঞ্ছিত হলেও একটা দায়সারা প্রতিবেদন ব্যতিত অন্য কিছু জন্ম দিতে পারে না এইসব ক্রমাগত হাত মারা নেশাকাতর সাংবাদিকেরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।