আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এখানে নৈরাজ্য, ওখানে নরক।

। বাউন্ডুলে ব্লগার। আজ আমার জীবনের এক বিশেষ দিন। প্রিয় শিক্ষক মুহাম্মদ হাসান ইমাম স্যার এর সঙ্গে অনেকক্ষন সময় কাটলো। ছাত্র অবস্থায় স্যার এর সঙ্গে সময় কাটানোটা কল্পনায় ছিল, বাস্তবে রূপ নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুমিয়ে অনেক ক্লাস মিস করেছি, কিন্তু হাসান ইমাম স্যার এর ক্লাস মিস করবার প্রশ্নই আসতো না। আমার সমগ্র শিক্ষাজীবনে এই একজন শিক্ষকের ক্লাসই আমি মন দিয়ে করেছি এবং তাঁর প্রতিটি কথাই আমি মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। এই হাসান ইমাম স্যার একটি কবিতার বই লিখলেন। বইটি তাঁর কাছে চাইতে গিয়েছিলাম ছাত্র থাকা অবস্থায়; তিনি বলেছিলেন, ‘‘আরো পরিণত হও, তখন আমার এই বইটি পড়ো”। এই এতো বছর পর আমার মনে হলো - ‘আমি বোধহয় এখন এই বইটি পড়বার মতন পরিণত হয়েছি’।

স্যার এর কাছে চলে গেলাম এবং বলে ফেললাম, ‘‘আপনার নিকট আমার একটা বই পাওনা রয়েছে, এখন বোধ হয় আমি একটু পরিণত হয়েছি”। স্যার আমাকে শুধু সেই বইটিই দিলেন না, সঙ্গে আরো দুটি বই দিলেন, এবং বলেলেন, ‘‘তুমি বইটি পাওনি! আমি তো তোমার ঠিকানায় এই বই পাঠিয়েছি! তাহলে ঠিকানা ভুল হয়েছে”। হাসান ইমাম স্যার বরাবরই একটু ভুলোমনা ছিলেন, ঠিকানা ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। স্যার এর সঙ্গে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় কাটানোর সুযোগ হলো। চা, কফি, পান খেলাম, ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় ঘুরলাম।

আমি নিশ্চিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনেক প্রাক্তন ছাত্রই জেলাস হবেন এই ঘটনা জানবার পর! কারণ এই মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানো ভাগ্যের ব্যাপার। মানুষ হিসাবে হাসান ইমাম স্যারকেই আমি আমার জীবনের আদর্শ হিসাবে অনুসরন করবার চেষ্টা করে চলেছি। কোনোদিন সফল হবো না জানি, তবু আমি তাঁর মতন হতে চাই। এই ব্লগের শিরোনামটি হাসান ইমাম স্যার এর কবিতার বই এর শিরোনামেই করলাম; সেই সঙ্গে তার বইয়ের প্রথম কবিতাটি উল্লেখ করিছি। আশা করি তাঁর এই কবিতার মাধ্যমেই তাঁর সম্বন্ধে কিছুটা ধারনা আমার পাঠকদের দিতে পারব।

‘‘। এখানে নৈরাজ্য ওখানে নরক । ” এমন একটি উপাসনালয় খুঁজেছি যার কোন নাম নেই, এমন সড়ক; যেখানে হেঁটে যাবার ব্যবস্থা আছে, এমন কোন শহর যেখানে সভ্যের বসবাস আছে অথবা এমন কোন অরণ্য যেখানে মানবীয় সন্ত্রাস নেই। রাজ্য থেকে বাজ্য পেরিয়ে গেছি নৈরাজ্য ছাড়েনি পিছু, বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি উপাসনার অভ্রান্ত নিমগ্নতা আসেনি। অবশেষে মৃত্যুর কাছে যাই -- আসমানী জায়নামাজের খোঁজে অনন্ত ওয়াক্তের খোঁজে মৃত্যুর মধ্যে উঁকি মারে অনড় নরক আমি নৈরাজ্য ও নরকের মাঝখানে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি।

স্যার এর কবিতার বই খুলতে গিয়ে যে অনুভুতিটা হলো সেটি আমার হতো প্রাইমারী স্কুলে পড়বার সময়। নতুন ক্লাসে উঠলে বছরের শুরুতে যখন নতুন পেতাম সেই সময়ের অনুভুতিটাই যেন এখনও হলো। ইচ্ছে করছে সেই ছেলেবেলার মতন সিমেন্টের বস্তার বাঁশ কাগজ দিয়ে বইটার মলাট দিয়ে ফেলি। হাতের কাছে পেলে হয়তো মলাট দিয়েও ফেলতাম। এই নেরাজ্য নিয়েই কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে।

কজন পড়বে জানিনা! হয়তো অনেকেই পড়বে, কিন্তু না লিখলে তো কেউই পড়বে না! এখানে নৈরাজ্যঃ ধর্ষন, গুপ্তহত্যা, গুম, গুজব-গণপিটুনি, গার্মেন্টস এর আশ-পাশের বাতাসে লাশের গন্ধ, যান-জট, দুর্ণীতি, হরতাল প্রভৃতি এখন আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক শব্দ। আমাদের ভালবাসার মাতৃসম এদেশ প্রকৃতপক্ষে এখন কি অবস্থার মধ্যে বিদ্যমান তা কি আমরা গভীরভাবে ভেবে দেখবার চেষ্টা করে দেখেছি কখোনো? সময় কোথা! এক কথায় আমরা রয়েছি এক নৈরাজ্যময় অবস্থায়। ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খএইম তাঁর ‘সুইসাইড’ গ্রন্থে ‘এ্যানোমি’ প্রত্যয়টির অবতারনা করেছিলেন আজ থেকে বহু বছর আগে। সহজ ভাষায় যার অর্থ ‘নৈরাজ্য’। মানসম্মত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অভাব এবং আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থাই হলো নৈরাজ্য।

মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তা ও আদর্শ এর অবক্ষয় নৈরাজ্যজনক আত্মহত্যার অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধানতম একটি। জাতি হিসাবে আমরা আজ আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছি! প্রতিদিনই খবরের কাগজ খুললেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। অবশ্য আখন আর খবরের কাগজটা খুলতেও হয়না, কারণ প্রথম পাতাতেই সব চলে আসে! যে ঘটনা বেশী বেশী ঘটছে সেটিই তো সামনে আসবে! এটাই স্বাভাবিক। ধর্ষন তো শুরু হয়েছে মহামারী আকারে। কখোনো কি ভেবে দেখেছেন পতিতালয়ের কিছু উপকারীতাও রয়েছে! আগে তো পতিতালয় ছিল প্রায় বড় শহড়েই।

তখনও ধর্ষন হতো কিন্তু তা কি এখনকার মতন মহামারী রূপ ধারন করেছিল? তাই বলে কেউ ভেবে বসবেন না যেন আমি পতিতালয়ের বিস্তারের পক্ষে কথা বলছি! এগুলো আসলে কিছু প্রশ্ন, যার উত্তর হয়তো আমরা সকলে মিলে খুঁজতে থাকব। আবার, ভেবে দেখুন তো আমাদের পাঠ্যসূচীতে কি ঈশপের গল্পের মতন কিংবা অন্যকোনভাবে নৈতিক কোন শিক্ষার উপস্থাপন রয়েছে? এখন কতজন শিক্ষক ছাত্রদেরকে নৈতিকতা ও আদর্শ সম্বন্ধে ক্লাসে কিছু বলছেন? বরংচ, প্রাইভেট টিউশান না নিলে কি ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে সেটি অনেক শিক্ষকই ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সেল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়ে থাকেন। সকল শিক্ষকই আবার এমন নয়। অনেক শিক্ষক আবার ছাত্রীদেরকে অশ্লীল এসএমএস ও পাঠিয়ে থাকেন! (সম্প্রতি ব্লগ থেকে জানলাম) পাঠ্যসূচীর কথা নাইবা বললাম! সেজন্য অনেক শিক্ষাবীদ রয়েছেন যারা আমাদের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে থাকেন। শুধু এটুকুই বলব, এখনকার উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা কোন ছাত্রকে ইংরেজীতে একটি মানপত্র বা দাপ্তরিক কোন পত্র লিখতে বলে দেখতে পারেন আপনারা যে কেউ।

এতে করেই আপনারা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থাটা জানতে পারবেন! আমি চাকুরী জীবনে উচ্চ বেতনভুক্ত এজিএম বা জিএম স্তরের অনেককেই দেখেছি পাওনা টাকা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে কোন ক্লায়েন্টের কাছে ইংরেজীতে তো নয়ই বরং বাংলায় ও একখানা পত্র লিখতে পারে না! অথচ ইংরেজী মাধ্যমে পড়েছেন! হড়বরিয়ে ইংরেজী বলতে পারেন! গ্রামার এর ধার ধারেন না! এখনকার কোন ছাত্রকে একখানা সূদকষা অংক কষতে দিয়ে দেখতে পারেন! ন্যারেশান, ভয়েজ, প্রিপোজিশান! এগুলোর কথা আর নাইবা বললাম। এই হলো হালের সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা! আপনারা যারা আগে লেখাপড়া করে এসেছেন তাদের জ্ঞান সৃজনশীল ছিলনা! কি হাস্যকর অবস্থা ভেবে দেখুন। নৈরাজ্য কোথায় নেই? ঘরে, বাহিরে সবখানে! বাজারে গিয়ে দ্রব্য-সামগ্রীর দাম শুনলে তো মাটির মধ্যে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে! ঢাকা শহরে সিএনজি থ্রিহুয়িলারে চাপবেন? মিটারের দিকে থাকিয়ে দেখুন! ৪০ টাকার ভাড়া দিতে হবে ১৮০ টাকা। সরকারী দপ্তরের কথা বলে আর লজ্জা পেতে চাই না! আয়কর পরিচিতি নম্বর নিতে যান! হা! যা আপনার ঘরে গিয়ে পৌছে দেয়ার কথা আয়কার অফিসের নিজ উৎসাহে, সেটি নিতে ২০০০/- টাকা লাগে। রিটার্ জমা দিতে গেলে তো কথাই নেই! বলুনতো আজও বাংলাদেশে এমন কোন সরকারী অফিস আছে যেকানকার কর্মকর্তাগন নিজ ইচ্ছায় ছুটির দুদিনও অফিস করেন?!!!! ভ্যাট অফিস! ছুটির দিনগুলোতেই বড়শীতে গাথাঁ মক্কেলদেরকে অফিসে আসতে বলা হয় মাল-কড়ি নিয়ে।

নৈরাজ্যের কথা আর বলতে চাইনা। পাঠকরাও বিরক্ত হয়ে উঠবেন! যদি ইতিমধ্যেই বিরক্ত না হয়ে থাকেন তাহলে নরক নিয়ে একখানা কবিতা---- (এই অধমের লেখা, ভুল ত্রুটি মার্জনীয়) অবগাহন- পুন্যের মুলো ঝুলিয়ে অনেক রেখেছো বেঁধে এবার খ্যান্ত দাও যাবো নরকে! চোখ বন্ধ রাখো - নইলে পাপ মুখ বন্ধ রাখো - নইলে পাপ কান বন্ধ রাখো - নইলে পাপ লাগাম ধরো ইন্দ্রেয়ের! গলা টিপেই যদি রাখবো তবে দিয়েছ কেন মন? মনন - বিচার শক্তি; যুক্তি মানছে না যে ভক্তি! চাই পাপের সমুদ্রে, পা ভেজাতে। জানি এ পথ একাকী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে, সমুদ্রে নামি পেছনে পদচিহ্ন, ধুয়ে দেয় নোনা পানি। জোয়াড়ে নামি, ভাটা আসে টেনে নেয় গভীর সমূদ্রে চোড়াবালিতে পা দেবে যায়। হাত বাড়িয়ে দেই তীরের দিকে ফাঁকা সৈকত, কাঁকড়ার পাল উপহাস করে - একাই ডুবে মরো! কাওকে পাবে না সবার দৃষ্টি মুলোর পেন্ডুলামে! মুখ ফিরিয়ে নেই লালসার সীমারেখা, ডিঙ্গিয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই- নড়ক থেকে ফিসফিসিয়ে ফিরে যেতে বলো! তবে কেন ডেকেছিলে? আমি যাব নরকে! স্বর্গ এ যে তুমি নেই।

আমার প্রিয় হাসান ইমাম স্যার, কবিতাটি আপনাকে উৎসর্গ করলাম। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.