আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো মালয়শিয়া !!! (পর্ব-৫) : আজ হারাবো, শুধু দুজনায়,ওই নীল সাগরের মোহনায়...

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

প্রথম পর্ব : Click This Link দ্বিতীয় পর্ব : Click This Link তৃতীয় পর্ব : Click This Link চতুর্থ পর্ব : Click This Link সকাল থেকেই খুব আহ্লাদে ষোলখানা । ঝলমলে শপিং মল দেখা হলো, cable car -এ চড়ে আকাশ ছোঁয়া হলো, পাহাড়ের মাঝে সদা জাগ্রত শহর দেখা হলো; বাকী ছিল একটাই- সাগর দেখা । তাই মেলাকা (Melaka কিনবা Malacca, দু'ভাবেই লেখা হয় ) যাওয়ার কথা উঠতেই বাকবাকুম অবস্থা আর কি ! কিন্তু আগের মতই আলসেমি আর গল্পগুজবে সকাল সকাল বের হওয়া গেলনা এবারও । পুডুরায়া (Pudu Raya) বাস স্টপেজ লোকজনের আনাগোনায় বেশ গম গম করছে । একেক বাসের একেক সময়, অন্ত্যত ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘন্টার ফারাক তো আছেই ।

টিকিট কেটে কিছুক্ষণ বসে শেষে আন্ডারগ্রাউন্ডের বাস স্টপেজে দাঁড়ালাম । এ জায়গাটা বেশ গরম । বিশাল এক বাসে যাত্রা শুরু হলো । বাস একটু ধীর গতি ছিল, না হলে আরেকটু কম সময় লাগতো । প্রায় আড়াই ঘন্টার আরামদায়ক যাত্রা শেষে পৌঁছে গেলাম মেলাকা বাস স্টেশনে ।

বিশাল স্টেশন, সুভ্যেনির কেনাকাটা করার জন্য অনেক ধরনের দোকান আছে আর খাবারের দোকান তো আছেই । খাবার একটু ঠান্ডা ছিল তবু তাই দিয়েই অবেলায় দুপুরের খাবার সেড়ে আগে ফিরতি টিকেট কাটতে কাউন্টারগুলোতে উঁকি মারলাম । সবশেষ বাসটা ছাড়বে রাত আটটায়, ট্রান্সন্যাশনাল (Transnasional) বাস সার্ভিস । ৯.৪০ রিংগিত এর টিকেট কাটলাম (আজকে টেবিল গোছাতে গিয়ে টিকেটটা পেলাম) । ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা পার করেছে ; মানে হাতে এবারও সময় কম ।

ঠিক যেখানটায় যেতে চাই তার জন্য আরেকটা বাস নিলাম; ভাড়া এক রিংগিত করে (এটার টিকেটটাও পেলাম আজকে গোছগাছের সময়) । বেশ ঘুরে ঘুরে বাস এগিয়ে গেল । এতে শহরটাকে খানিকটা দেখে নেওয়া গেল বৈকি। নাহ, কোন সাগরের পাশ কাটাতে গিয়ে নয়, বরং শহরের মাঝেই বিশাল একটা পুরোন জাহাজ পাশ কাটালাম । ইচ্ছে ছিল ফিরতি পথে এখানে ঢুঁ মেরে যাবো কিন্তু তাড়াহুড়োতে সে আশায় গুড়েবালি ।

রাস্তা পার হয়ে এক বিশাল চত্বরে এসে দাঁড়ালাম । এদিক সেদিক হেঁটে একটা ময়দানে এসে পড়লাম । পুরো সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটিতে জুতো/স্যান্ড্যাল পরে দাঁড়িয়ে থাকা বড্ড বেশী বেমানান, তাই ঝটপট খালি পায়ে ঘাসে উপর হেঁটে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। সামনেই একটা টিলার কাছে পুরোন প্রাসাদের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছিল । চলদি পথে নানা উজ্জ্বল রঙের রং-বেরঙের কৃত্রিম ফুলে সাজানো রংচঙে রিকশা দেখে রিকশার শহরের মানুষ হওয়া স্বত্বেও মজা পেয়ে গেলাম ।

টিলার, St. Paul's Hill, পাদদেশে কিছু কামান সাজানো দেখলাম । টিলার গা বেয়ে মাথায় উঠে গেছে সিঁড়ি । একটু থেমে থেমে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে ওঠার পরও বেশ হাঁপিয়ে গেলাম । ওঠার সময় কিছু বাঁধানো সমাধি চোখে পড়ল ; সম্ভবত পর্তুগিজদের । টিলার মাথায় St. Paul's Church, অনেক পুরোন, ছাদহীন দেয়ালের ঘরে অনেকগুলো পাথরের স্ল্যাব রাখা, তাতে আবার খোদাই করা আছে নাম, সন ।

এ জায়গাটা থেকে তাকিয়ে দূরের সাগর দেখা যায় । হাতে এতো বেশী সময় নেই যে সে পর্যন্ত যাওয়া যাবে; তাই মনটা বেশ খারাপ হলো ; অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায় আর কি ! টিলার উপরে আর বিশেষ কিছু দেখার নেই, তবে দূরে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগে । কিন্তু এবার নামার পালা । এখানেও বেশ কিছু দোকানে মেলাকার নানা দর্শনীয় স্থানগুলোর ছবি দেয়া হরেক রঙের টি-শার্ট এবং আরো রকমারী জিনিস পাওয়া যায় । একটু দামা-দামি করে নিতে হয় অবশ্য।

১০ রিংগিত দিয়ে একটা টি-শার্ট কিনলাম । একটা লম্বা রাস্তা পেলাম, হাইওয়ে । এ রাস্তার নাম হাইওয়ে টু হ্যাভেন দেয়া যেতে পারে হয়তবা। গাড়ি খুব দ্রুত চলে । অল্প সময় খালি রাস্তা পেয়ে চটজলদি একটা ফটোসেশন করে দ্রুত পায়ে রাস্তার ওপাশে ।

একটা সারপ্রাইজ ছিল আমার জন্য । নতুন তৈরী হওয়া একটা লম্বা জেটি । এখানে পরবর্তীতে বিনোদনের ব্যবস্থা স্বরূপ এক অংশে কারাওকে জাতীয় কিছু করা হবে বলে মনে হলো। দোতালায় একটানা লম্বা, খোলা বারান্দা, নীচে পানি , তবে তল দেখা যায় ; সাগরের কোন এক তীরের উপর দাঁড়িয়ে আমি ! পড়ন্ত বিকেল, আকাশ খানিকটা লাল, সূর্য্যের রক্তিম আভা , সাগরের ফুরফুরে নোনা হাওয়া - এক অদ্ভূত মাদকতাময় মুহুর্ত । এবার সত্যি সত্যিই ছুটতে হলো ।

৮টার বাস ধরতে মেলাকা বাস স্টপেজে পৌঁছতে গেলে আরেকটা বাস । খালি বাস দেখে উঠে পড়ে বুঝতে পারলাম কি ভুলটা করেছি । এই বাসের আসন পুরণ করতে সময় লেগে যাবে অনেক। নামব কি নামবটা সেটার সিদ্ধান্তও নিতে পারছিনা। আসলে কোন জায়গা থেকে বাস ধরব এটাও বুঝতে পারছিলাম না।

তবে রাস্তার ওপাশে একটা বাসকে একটু থেমে লোক তুলতে দেখে নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করল । শেষ পর্যন্ত বাস ছাড়লো। বেশ ঘুর পথে বাস ছুটছে আর সময় গুনছি, কারণ ৮ টার বাস ফসকে গেলে আটকা পড়ে যাবো । ড্রাইভারের বোকামির জন্য প্রতিটা সিগন্যালেই আটকা পড়ছি। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই প্রায়।

শেষ সিগন্যালটা পার করেই কাঙ্খিত বাস স্টেশন । হন্তদন্ত হয়ে এসে বাসের খোঁজ করলাম । বাস নাম্বার মিলিয়ে নিতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম । বাস ছেড়ে যায় নি এখনো , তবে ছাড়বে বলে আর কি ! সিটে গা এলিয়ে বসে আবারো হুশ করে দম ছাড়লাম । অবশেষে ফিরে চললাম কে.এল (KL) এর দিকে।

পুনশ্চ : ইউ-টিউবের ভিডিওটা আমার তোলা , St. Paul's Church এর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।