আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের খেলা দেখা ও রোমাঞ্চকর এক রাত - ২

কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে

প্রথম পর্বের লিংক Click This Link ***পূর্ব প্রকাশের পর...... রাত দশটা,বক্স রুম চাপা উত্তেজনা চারটি ছেলের মনে। পুলক আর পিয়ালকে আজ টিভির রুমে দেখা যায়নি। খেলা দেখার চেয়ে বড় রোমাঞ্চ তাদের জন্য। সেলিম রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছে। বিশালদেহী এই সহজ সরল ছেলেটি একটু বোকাও বটে।

সে এরই মধ্যে পুরা হাউজ মাথায় তুলে ফেলেছে। এর ক্ষতিকর দিকটি নিয়ে সবাই শংকিত। জানাজানি হলে ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। মাশফিক কিছুটা ক্ষুব্ধ। সে আবার একটু নেতা শ্রেনীয় কিনা।

একটু ভাব না নিলে তার কতৃত্ব আর থাকে না। সে বেশ ভাব নিয়েই সেলিমকে ঝাড়ল। না টুয়েলভে উঠেও তুই সেই বাচ্চাটাই রইলি। সে রাজন কে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিল কাজে। কাজটা হলো ক্লাশ মেট সবাইকে খেলা দেখতে আসতে বলা ।

আর যাতে ব্যাপারটা গোপনীয় থাকে সে ব্যাপারে পই পই করে বলে দিল। এখন সবার প্রতীক্ষা কখন লাইটস আউটের বেল পড়ে আর রাফাতের থেকে সিগন্যাল মিলে। রাফাত উহ কী বিরক্তিকর এই কাজ। রাফাত মনে মনে কুৎসিত কিছু গালি দেয় তার বন্ধুদের। শালারা সব মজা নিব আর আমারে রাখছে পাহারায়।

পাহারার কাজ সব সময় বিরক্তিকর আর যদি হয় রউফ ভাইয়ের মত লোকের। সে একটা সাক্ষাত টিকটিকি। আর কিছু হলেই ক ক করে অদ্ভুত শব্দ করে উঠেন। তাই তার নাম কাওয়া। এস এসসি পরীক্ষার সময় যখন তারা রুম ক্রিকেট খেলত তখন ফেউয়ের মত সে কোথেকে এসে কক করে হাজির হতো।

তাই তো সেই সিরিজের নাম হয়ে গেল কাওয়ার ডাক সিরিজ। এসব কথা মনে করে আপন মনে হেসে উঠল সে। লাইটস আউট হয়েছে আধ ঘন্টা হলো এখনো ফেউটার শোয়ার নাম নাই। একটা সিগারেট হলে মন্দ হতো না সময়টা বেশ কেটে যেত। এসব ভাবতে থাকে সে।

তার সিগারেট খওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে। দুই ব্যাচ সিনিয়র এক ভাইয়ের হাত ধরে তার শুরু। তার সাথে থেকে সেলিম মাশফিক রাও খায়। বেশ বীরত্বপূর্ণ মনে হয় তিন তলায় যাওয়া। পুলকটা সিগারেট খায় না শুধু মাঝে মাঝে এসে ভাগ বসায়।

এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় তার মনে হয় রউফ ভাই ঘুমিয়েছে। সে তড়িত ছুটে গেল সিগন্যাল দিতে। চুরি রাফাতের সিগন্যাল পেয়ে কাজ শুরু করে দিল মাশফিক পিয়াল সেলিম আর রাজন। আর এদিকে বাকিরা মিলে শুরু করে দিল রুম ঢাকার কাজ। বাইরে থেকে যাতে টিভির আলো না দেখা যায়।

চলতে লাগল অধীর অপেক্ষা কখন ঐ চারটা আসে। টিভির রুমে এসে সন্তর্পনে চাবি খুলে ফেলল মাশফিক। বিশালদেহী দুই দৈত্য সেলিম আর রাজন ঢুকলো প্রথমে তার পিছে বডি বিল্ডার পিয়াল। তাদের তিনজনের টিভি আনতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় ভেবে বাইরে রউফ ভাইকে পাহারা দিতে থাকল মাশফিক। এই লোক ভান করে নেই তো।

তার মনে শংকা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে এল ওরা টিভি নিয়ে। তাদের মনে এখন বিশ্বজয়ের আনন্দ। এর মাঝেও ঘাগু মাশফিক টিভির রুমের তালা মারতে ভুলল না। বক্স রুম এরই মাঝে পুলক রুমের সুইচ খুলে ফেলেছে।

টিভির পাওয়ার তাতেই হলো। টিভি ছাড়া হলো। কিন্তু একি ?এন্টেনা নাই । কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ক্যাডেটরা পারেনা এমন কিছু নেই ক্যাডেট কলেজের ভুল প্রচলিত এই কথা সত্য করে দিয়ে কী এক খেল দেখিয়ে কোন ডান্ডা দিয়ে পিয়ার অপার দক্ষতায় টিভিতে ছবি নিয়ে এল।

সাথে সাথে সারা রুম জুড়ে হাততালি পড়ল। শুধু বিরক্ত হলো মাশফিক। এর কোন মানে হয়। এই বুজি ওরা ধরা খেল যাই হোক খেলা দেখতে হাউসের সবাই আছে। সেলিম আর পুলক ছাড়া সবাই পাকিস্তান।

রাজনটা আজ ইউনুস খানের সৌজন্যে পাক সাপোর্টার বনে গেছে। খেলার পাচ ওভার মত বাকি। পাকিদের জয় মোটামুটি নিশ্চিত। সবাই উচ্ছসিত ওরা দুজন ছাড়া। ৩ ওভার বাকি।

মোটে দরকার ১৯ রান। চার উইকেট আছে। আকরাম আর লতিফ আছে উইকেটে। কোন সম্ভাবনা না দেখে পুলক আর সেলিম ভাবছে এত ঘটা করে এই ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচের অল্প কিছু দেখলাম। ধ্যাৎ।

কিন্তু ক্রিকেট ঈশ্বর যেন তাদের কথা শুনলেন। স্বভাব বিরুদ্ধ স্লো ব্যাটিং করে জমিয়ে তুললেন লতিফ আর পাক সাপোর্টাররা ডুবে যেতে থাকল হতাশায়। আকরামের সাথে একাত্ম হয়ে রেগে যাচ্ছে ১১টি প্রানী। ২ বলে যখন ১১ রান দরকার আকরাম মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন আর সেলিম আর পুলক বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতে উঠল সবার সামনে। বাকিরা বিরক্ত মুখে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগল।

পিয়াল বলল সবাই যাসনে কয়েকজন থাক, টিভি রেখে আসতে হবে আমি যেতে পারব না ,মেজাজ খারাপ। যত্তোসব ফাউল ..........পাকিস্তানের উপর তার ক্ষোভ ঝাড়ল...... চাবিটার কী হবে ভেবে অজানা আশংকায় শংকিত রইল শুধু পুলক.......... টিভির রুমে যেতে মাশফিক রাফাত রাজনরা রউফ ভাইয়ের চির চেনা ক ক শুনতে পেল..... ****এই গল্প যখন লিখি তখন এর একটি চরিত্র সেলিম(আসল নাম আলম আমি মজা করে সেলিম বলতাম) আর নেই। গত বছর ঢাকায় একটি ব্যাংকে টাকা টোলার পড় সে ছিনতাই কারীদের হাতে পড়ে। তদের সাথে ধস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে ওদের গুলিতে সে ইহধাম ত্যাগ করে। কিন্তু তার স্মৃতি মির্জপুর ক্যাডেট কলেজের ৩৪ তম ব্যাচের সবার হৃদয়ে সদা জাগরুক।

আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.