আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্ডিয়া ট্যুর ২ :রমণীগণ অতিশয় জ্ঞানী অথবা আমি নিরতিশয় বেকুব!

http://www.somewhereinblog.net/blog/marufk56

সিমলার পিচঢালা পথে হাঁটিতেছি। ফিরিতেছি পাঁচ ঘন্টাব্যাপী দীর্ঘ বাজার- ভ্রমণ সম্পন্ন করিয়া। আমি নিজেই অতিশয় বিস্মিত যে আমি এত দীর্ঘক্ষণ পরিচ্ছদ-সংক্রান্ত দোকানে দোকানে কীভাবে ঘুরিলাম! এর পুরো কৃতিত্ব অবশ্য রীতু নামক আমার শ্রেণী-বান্ধবীটির। দুই-তিনজনের ছোট ছোট দল করিয়া সকলে ক্রয়-অভিযান আরম্ভ করিয়াছিল। রীতু আমাকে পাকড়াও করে তাহার সফর-সঙ্গী হিসেবে।

আমিও আনন্দিত মনে তাহার সঙ্গে রওয়ানা দেই। কিন্তু রমণীগণের এই অভিযান কি ভীষণ প্রকৃতির হইতে পারে, তাহা যাহার অভিজ্ঞতায় নাই, তাহার হৃদয়ঙ্গম করিবার ক্ষমতাও নাই। এক্ষণে কোন ললনা আমাকে কদাচিৎ যদিও পরিধেয় কিনিবার নিমিত্তে আমাকে তাহার সফর-সঙ্গী হইবার আহ্বান জানায়, আমি সুন্দরী-সঙ্গ লাভের সুতীব্র ইচ্ছা দমন করিয়া কোন না কোন অজুহাতে তাহা প্রত্যাখ্যান করি। যাহা-ই হউক, ফিরিবার পথে সাথী ও উর্মির সহিত দেখা হইয়া গেল। তাহারা নিজ নিজ দল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পথিমধ্যে পরস্পরের দর্শন পাইয়াছে।

এইখানে উল্লেখ্য, যানবাহনের স্বল্পতা হেতু সকলেই বিচ্ছিন্নভাবে পদব্রজেই অবকাশস্থানে ফিরিতেছিলাম। আমরা চারিজন ফিরিবার পথে পার্শ্বেই একটি অভিজাত খাদ্যদ্রব্যের দোকানের দর্শন পাইলাম। রীতু ও সাথীর উহা দেখিবামাত্র খাইবার অভিলাষ সুতীব্র হইয়া উঠিল। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অনুমান করিয়া আমি উহাতে প্রবেশ করিতে ইতস্ততঃ করিলেও এই সন্ধ্যা-অতিক্রান্ত হয় হয় সময়ে তিন কন্যাকে 'একেলা' রাখিয়া যাইতে মন সরিল না। (যদিও আমি এমন কোন বীর-পুঙ্গব নহি)।

এমন সময়ে কিছুদূর সম্মুখে আমাদের আরও দুই পুরুষ সঙ্গীকে দেখিতে পাইয়া আমি কিছুটা উৎফুল্ল হইয়া উঠিলাম। তাহারা দুইজন সঙ্গে থাকিলে আমি হৃদয়ে বল পাইব, এই আশায় তাহাদের দূর হইতে ডাক দিলাম। তাহারা দক্ষিণ হস্ত উপরে তুলিয়া সামান্য নাড়িয়া ইশারায় জবাব দিল। কিন্তু তাহাদের গতি শ্লথ হইলো না। আমি কিয়ৎ উচ্চস্বরে তাহাদের দাঁড়াইবার অনুরোধ করিলাম।

আমাদের সহিত আহার করিবার আমন্ত্রণ জানাইলাম। নিতান্তই অভদ্রের ন্যায় তাহারা ইশারাতেই তাহা প্রত্যাখ্যান করিল। মুখে কোন ধ্বনি উচ্চারণ করিবার প্রয়োজনীয়তাটুকুও দেখাইলো না। আমি হৃদয়ে বিষম আঘাত পাইলাম। শাকিল ও ইমন পুরো হিন্দুস্তান ভ্রমণকালীন সময়ে আমার কক্ষ-সঙ্গী।

অথচ তাহাদের এইরূপ আচরণ! রমণীত্রয়ীর সম্মুখে এইরূপ 'অপমানে' আমি সংক্ষুব্ধ হইলাম। আমি উহাদের দিকে অগ্রসর হইতে প্রবৃত্ত হইলে উর্মি আমাকে নিবৃত্ত করিল। বলিল, উহাদের যাইতে দাও, চল আমরা আহার করিয়া লই। আমি তাহার কথামতো নিবৃত্ত হইয়া রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করিলাম। কিন্তু আমার চিন্তাজগতে এই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুলিল।

আমি মেয়েদিগের সহিত এই লইয়া আলোচনায় ব্রতী হইলাম। আমি যে তাহাদের আচরণে কিরূপ বিস্মিত ও হতভম্ব তাহা বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম। তাহারা তিনজনই প্রথমত এই নিয়া আলোচনায় অতিশয় নিরাগ্রহ মনোভাব পোষণ করিল। অবশেষে আমার মনে অন্যরকম সন্দেহ দানা বাধিয়া উঠিল। বলিলাম, তোমাদের কাহারো সাথে অদ্য-কালের ভিতরে উহাদের কাহারো তো মনোমালিন্য ঘটে নাই? এইরূপ হইলেই কেবল তাহাদের এড়াইয়া যাওয়া সঙ্গত।

আমার সহিত তো এইরূপ কোন মন-কষাকষি হয় নাই। তাহারা বলিল, তাহাদের কাহারো সাথেও এইরূপ ঘটে নাই। আমার পুনঃ পুনঃ আলোচনায় তাহারা এক সময় বলিল, তুই আসলেই বুঝিতে পারিস নাই নাকি ঢং করিতেছিস? আমি যেন দ্বিতীয় আসমান হইতে ধরায় পড়িলাম। ঢং করিব কেন! আর আমি জানি না, অথচ তাহারা তিনজনই এইরূপ ব্যবহারের কারণ কিভাবে জানিল! রীতু তো আমার সহিতই ছিল পুরোটা সময়। আর উর্মি ও সাথী তো ভিন্ন ভিন্ন দলের সহিত বাহির হইয়াছিল।

অবশেষে উর্মি কহিল, উহারা মদ্যপান করিয়াছে। আমি থমকিয়া গেলাম। অন্যদিগের প্রতি চাহিয়া বুঝিলাম তাহারাও একই মত পোষণ করিতেছে। আমি জিজ্ঞাসিলাম, তোমরা কেহ দেখিয়াছ তাহাদের ঐ বস্তু পান করিতে? তাহারা বলিল, না দেখি নাই, কিন্তু আমরা বুঝিতে পারিয়াছি। তুই এক্ষণে খাবার ভক্ষণ করিয়া ওঠ।

দেরী হইয়া যাইতেছে। আমার কক্ষ-সঙ্গীদের ব্যাপারে তাহাদের এইরূপ মনোভাব দেখিয়া আমি ব্যথিত হইলাম। তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিলাম, না জানিয়া শুনিয়া কাহারো সম্পর্কে এইরূপ মনোভাব পোষণ করা উচিত নহে। তোমরা ভুল করিতেছ। তাহারা এই কথার প্রতিবাদ না করিয়া একমনে আহার করিতে লাগিল।

এই বিষয়ের আলোচনা সেইখানেই সমাপ্ত হইল। .... আহার শেষে তিনজনাকে লইয়া ভীত হৃদয়ে আমি অবকাশযাপনকেন্দ্রে ফিরিলাম। তবে, আল্লাহ সহায়, ভিনদেশে কোনরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে না পড়িয়াই ফিরিতে পারিলাম। যে যাহার কক্ষে চলিয়া গেলম। আমি কক্ষে ফিরিয়া দেখিলাম, শাকিল ইতোমধ্যে ঘুমাইয়া গেছে।

ইমন খাটে হেলান দিয়া শুইয়া রহিয়াছে। ইমনকে জিজ্ঞাসা করিলাম, রাত্রিকালীন খাবার না খাইয়াই শাকিল ঘুমাইয়া গেল যে বড়! ইমন বলিল, শাকিলের শরীর খারাপ লাগিতেছে। আমি তখন ইমনকে তাহাদের ঐ রূপ অভব্য আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করিলাম। সে প্রথমত এড়াইয়া যাওয়ার চেষ্টা করিল। পরবর্তীতে আমার পীড়াপীড়িতে বলিল, তাহারা স্থানীয় একটা হোটেলে কিয়ৎ পরিমাণ অ্যালকোহল পান করিয়াছে।

শাকিল নতুন 'পানক' বলিয়া তাহার প্রচন্ড বিবমিষা হইতেছিল। ইমনেরও খারাপ লাগিতেছিল। তাহার উপর দুজনারই মুখ হইতে কটু গন্ধ নিঃসৃত হইতেছিল। এই জন্য তাহারা সেইখানে আর দাঁড়ায় নাই। শাকিল কক্ষে ফিরিবামাত্র বমন করিয়া বাথরুম ভাসাইয়া দিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে।

..... আমি আরেক দফা বিস্মিত হইলাম। মহিলাদিগের পরিস্থিতি হৃদয়ঙ্গম করিবার বিস্ময়কার ক্ষমতায় শ্রদ্ধায় তাহাদের প্রতি নস্তক অবনত হইয়া আসিল। মনে পড়িল, মহাবিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক গাজী আজমল বলিয়াছিলেন, সমবয়সী ছেলে হইতে মেয়েরা পাঁচ বৎসর অধিক 'ম্যাচিউরড' হইয়া থাকে। ইমনকে আর বলিলাম না যে, মেয়েরা তাহাদের কীর্তি বুঝিতে পারিয়াছে আর আমি গর্দভ তাহা অনুমানও করিতে পারি নাই। পরে না আবার সে আমার নির্বুদ্ধিতা লইয়া অন্যদের সহিত রঙ্গ করিতে আরম্ভ করে!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.