আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচোর-৫ম র্পব

দ্যা ব্লগার অলসো.....

টিনা আজ ম্যাকডোনাল্ডস-এ অপেক্ষা করবে বলেছিলো। ওকে না পেয়ে ক্ষেপে বোম হয়ে যাবে। জয় ওর রাগকে ভীষণ ভয় পায়। ক্ষেপে গেলে ভীষণ রকম হিংস্র হয়ে যায় মেয়েটা, তখন ওর মুখ দিয়ে যে গালিগুলো বের হয় সেগুলো সিটি-কর্পোরেশনের পুঁতিগন্ধময় আবর্জনাকেও হার মানায়। জয় ভেবে পায়না, এতো হাই-স্ট্যাটাস ফ্যামিলির একটা মেয়ের মুখ থেকে এতো বিশ্রী ভাষা বের হয় কী করে।

মাঝে মাঝে ভাবনার রাজে হারিয়ে যায় জয়, ভাবে ওর চলমান জীবনকে নিয়ে। এই জীবন কখনোই ওর কাম্য ছিলো না, কারো কাম্য হতে পারে না। মা মারা যাবার পর বাবা আবার বিয়ে করলেন। বেশিরভাগ সৎমা যেমন হয়, জয়ের মাও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। ‘সৎমা’, শব্দটা মনে পড়লে হাসি পায় ওর।

সৎ মানে কী, ভালো? তাহলে সব সৎমা কেন এতো অসৎ? ভেবে পায়না ও। শত লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্যেও সৎমার সংসারে পড়ে ছিলো ও, কোথাও যাবার জায়গা ছিলোনা। নানা-নানি মারা যাবার পর সেখানকার সবাই যে যার মতো আলাদা হয়ে যায়। অন্য কারো দায়িত্ব নেবার মতো মন-মানসিকতা তাদের কারো ছিলো না। এক মামাতো বোন ছিলো, আলো; প্রচন্ড ফিল করতো ওর জন্য।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ও যখন শহরে চলে আসে, আলো খুব কেঁদেছিলো। বলেছিলো-‘আমি জানি, একদিন তুই ফিরে আসবি মানুষের মতো মানুষ হয়ে, তখন সবাই তোর পায়ে লুটিয়ে পড়বে, ক্ষমা চাইবে তোর উপর অবিচার করার জন্য। আমি অপেক্ষায় থাকবো সেই দিনের জন্য। ’ আলোর স্বপ্ন পূরণ হয় নি, মানুষ তো হতেই পারেনি, হয়েছে নরকের আবর্জনা। অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারেনি আলো, তার আগেই এক প্রবাসীর ঘরনী হয়ে চলে গেছে শ্বশুরবাড়ি।

পূর্ণচন্দ্র রাতে চট্টগ্রাম শহরের আকাশছোঁয়া দালানগুলোর ফাঁক-ফোকর দিয়ে যখন জোছনার আলোর প্লাবন বয়ে যায়, মুষলধারে বৃষ্টি যখন এ শহরের ছুটে চলা জীবনকে থামিয়ে দেয়, তখন ওকে মনে পড়ে জয়ের। মনে পড়ে সেই রাতের কথা, যে রাতে ওরা দুজন পাশাপাশি বসে কাটিয়েছিলো অনেকটা সময়। গ্রামের ছায়াঢাকা প্রান্তরে গৃহত্যাগী জোছনায় বসেছিলো ওরা। কোনো কথা ছাড়াই সে রাতে অনেক কথা হয়েছিলো ওদের মধ্যে। মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন প্রথম ওকে ভালোবাসার উপহার দিয়েছিলো জয়।

আট-আনা, এক টাকা করে পয়সা জমিয়ে ওর জন্য একজোড়া কানের দুল কিনেছিলো ও। কী যে খুশি হয়েছিলো আলো! সবুজ সেই কানের দুলের সাথে সবুজ শাড়ি পরে যখন জয়ের সামনে এসেছিলো ও, তখন জয় বিভোর হয়ে গিয়েছিলো এক মধুর স্বপ্নে। আলোকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন, ওকে বধুবেশে দেখার স্বপ্ন। বলাই বাহুল্য, এ শহরের রাজপথ, অজস্র কানাগলির মাঝে হারিয়ে গেছে ওর সেই স্বপ্ন। তবু মাঝে মাঝে মনের ভেতর জমে থাকা সুপ্ত ইচ্ছেগুলো বিদ্রোহী হয়ে উঠে, সব সীমাবদ্ধতাকে খুন করে ছুটে যেতে চায় ওই গ্রাম্য কিশোরীটির কাছে, যার অন্তরে ওর জন্য আকাশসম ভালোবাসা জমা ছিলো।

ছিলো, কিন্তু এখন নেই। তাই ইচ্ছেরা আপনাতেই থেমে যায়, মুখ থুবড়ে পড়ে মাঝপথেই। জয়ের মনে তবু একটা প্রশ্ন সরলদোলকের মতো দুলতে থাকে, আলো কি সত্যিই ওকে ভুলে গেছে? মেলে না জবাব। জয়ের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেলো মোবাইলের আওয়াজে। ডিসপ্লেতে নাম দেখে আঁতকে উঠল ও, টিনার ফোন।

ধরল না ও, ওটা তারস্বরে বাজতেই থাকল, তারপর একসময় থেমে গেল। আধুনিক প্রযুক্তির এই যন্ত্রটার উপর দারুণ অনীহা আছে জয়ের। এ যেন এক অদৃশ্য সুতো, একাকী নির্জনে হারিয়ে যেতে চাও, পারবে না। নাটাই থেকে দেবে টান, ব্যস, খেল খতম। জয়ের কাছে এটাকে মনে হয় প্রযুক্তির সাইড এফেক্ট।

ওর কাছে এই জিনিস ছিলো না, ওটা টিনার দেওয়া। ও নিতে না চাইলে টিনা ওকে জোর করে গছায়, বলে- ‘অন্তত আমার সাথে কথা বলার জন্য হলেও এটা তোমাকে রাখতে হবে। ’ টিনার কথা মনে হতেই আবার ভয় পেল জয়, একবার ওকে পেলে হয়, প্রথমে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করবে, তারপর শিকের আগায় গেঁথে কাবাব বানাবে। যা ইচ্ছে তাই করুক, হু কেয়ারস? মনে মনে বলল জয়। চলবে.....


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।