আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জর্জিয়ান সিনেমার কিংবদন্তি



জর্জিয়ান সিনেমার কথা বলতে গেলেই যে নামটি উচ্চারণ করতে হয় তার নাম ওতার আয়োসেলিয়ানি। কিংবদন্তি এই পরিচালকের জন্ম তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার জর্জিয়ার বিলিসিতে, ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। জর্জিয়ান সিনেমা জগতে তার প্রবেশ ৬০-এর দশকে। ‘মস্কো স্টেট সিনেমা ইনস্টিটিউট’ থেকে পাস করে জর্জিয়া ফিরে এসে শুরু করেন সিনেমা নির্মাণ। তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্যÑ আকভ্যারেল (১৯৫৮), সাপোভনেলা (১৯৫৯) ও এপ্রিল (১৯৬১) এবং তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ফিচার ছবিÑ তুদজিহ (১৯৬৪), ফলিং লিভস (১৯৬৬) ও জর্জিয়ান অ্যানশিয়েন্ট সংগস (১৯৬৯) বানান।

ফলিং লিভস ছবিটি একই সাথে তাকে রাতারাতি খ্যাতিমান ও বিতর্কিতও করে তোলে। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপরেসি পুরস্কার জেতে। এখানে বলে রাখা ভালো বহু সংগ্রাম আর অপেক্ষার পর জর্জিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছে এই ১৯৯১ সালে। আর ওতার আয়োসেলিয়ানির পরিচয় জর্জিয়ান-ফ্রেঞ্চ চলচ্চিত্রকার হিসেবে। কারণ আর কিছু নয়।

পরপর তার কয়েকটি সিনোমা রাশান সরকার নিষিদ্ধ করে, এই অজুহাতে যে ওসব ছবিতে রাশিয়ার সুনাম নষ্ট হয়েছে। ফলিং লিভসসহ দেয়ার ওয়ান্স ওয়াজ এ সিংগিং ব্ল্যাকবার্ড (১৯৭০) ও প্যাস্তোর‌্যাল (১৯৭৫) ছবি তিনটি একই ভাগ্যবরণ করে। অবশ্য ওতারের আগের কয়েকটি ছবির বিরুদ্ধে জনরোষও ছিল। দেয়ার ওয়ান্স ওয়াজ এ সিংগিং ব্ল্যাকবার্ড ছবিটি ওতার একবছর বাদে পুনঃসম্পাদনা করে সেন্সরে জমা দেন। ১৯৭১-এ তখন ছবিটি মুক্তি পায়।

ছবিটি ফ্রান্সে প্রদর্শিত হলে সেখানকার পত্রিকায় এই ছবি সম্পর্কে লেখা হয়, ‘এই ছবি দেখার পর আপনি জীবন সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে ভাবতে বাধ্য হবেন। আপনি কেমন জীবন কাটাচ্ছেন সেটা ভেবে আপনি শিহরিত হবেন। এমন একটি অসাধারণ কাজের জন্য এই ছবির পরিচালককে জানাই লাখো সালাম। ’ প্যাস্তোর‌্যাল ছবিটি কয়েক বছর আর্কাইভে আটকে থাকার পর রাশান সরকার একসময় সেটির সীমিত প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। ওতার বুঝলেন রাশিয়ায় থেকে তিনি পূর্ণ শিল্পীসত্তা নিয়ে কাজ করতে পারবেন না।

ক্ষোভে দুঃখে ওতার তাই ১৯৮২-তে ফ্রান্সে অভিবাসী হন। ফ্রান্সে ওতারের নির্মিত প্রথম ছবির নাম ফেভারিটস অব দ্য মুন (১৯৮৪)। ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। এরপর ওতার একের পর এক সিনেমা বানিয়ে চলেন এবং সেসব কান, বার্লিন, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে পুরস্কার জেতে। বড় মাপের পরিচালক হিসেবে ওতারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে।

ফ্রান্সে নির্মিত তার সর্বাধিক প্রশংসিত ছবিগুলোর নামÑ অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়াজ লাইট (১৯৮৯), সিউলি, জর্জি (১৯৯৪), ব্যান্ডিটস-চ্যাপ্টার ৭ (১৯৯৬), মানডে মর্নিং (২০০২) প্রভৃতি। নিজের দেশ জর্জিয়াতে প্যাস্তোর‌্যাল ছবিটিই ছিল তার শেষ নির্মিত ছবি। অবশ্য ১৯৯৪-তে তিনি জর্জিয়ায় গিয়ে ফ্রেঞ্চ-জর্জিয়ান যৌথ প্রযোজনায় ব্যান্ডিটস-চ্যাপ্টার ৭ নামের ছবিটি বানান। লেখাটা শেষ করি চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিচালকের কাজের ধরন কেমন হবে সে সম্পর্কে ওতার আয়োসেলিয়ানির একটি মতামত দিয়েÑ ‘চলচ্চিত্র পরিচালক আর গণিতবিদের কাজের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আমার কাছে ছবি মানেই অঙ্ক করা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.