আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি ব্লগঃ জিঞ্জী দূর্গ (ট্রয় অফ দি ইস্ট)

আমি বেড়াতে ভালবাসি। আমার পায়ের তলায় সর্ষে। তবে লেখালিখিটা একদম আসেনা।

গ্রীক দেশের মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিশি যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চই ট্রয়ের দূর্গের কথা মনে করতে পারবেন। অত্যন্ত সুরক্ষিত ও দূর্ভেদ্য এক দূর্গ যা জয় করা শত্রুদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

দক্ষিন ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের জিঞ্জী গ্রামেও একটি এই ধরনের সুরক্ষিত ও দূর্ভেদ্য কেল্লা আছে। এই দূর্গ প্রথমে তৈরী করেন বিজয়নগর রাজ্যের শাসকরা। পরে নায়েক, মারাঠা, মুঘল, ফরাসীদের হাত ঘুরে শেষে চলে যায় ইংরেজদের হাতে। ভারতের অনেক ভাষার অনেক গল্পে এই দূর্গকে মারাঠা নায়ক শিবাজী কিভাবে অত্যাচারী মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে রক্ষা করেছিলেন সেকথা লেখা আছে। দূর্গটি তিনটি পাহাড়কে ঘিরে বানানো।

বাইরের প্রাচীরটি তিনটি পাহাড়কেই ঘিরে রেখেছে। ইংরাজীতে প্রত্নতত্ত্বের টেকনিকাল ভাষায় এই প্রাচীরটিকে বলে আউটার ফর্টিফিকেসান। তিনটি পাহাড়ের নাম: রাজগিরি, কৃষ্ণগিরি, ও চাক্কীদূর্গ। এই তিনটি পাহাড়ের ওপর ছিল সব সরকারী কার্যালয়, রাজার নিবাস ও খাজাঞ্চীখানা। নিচে ছিল শষ্যাগার, ব্যামাগার, পুষ্করিণী।

তিনটি পাহাড়ের প্রত্যেকটির আবার একাধিক নিজস্ব প্রাচীর আছে। অর্থাৎ একটি পাহাড় জয় করলেও অন্যগুলো স্বাধীন থাকতে পারবে। রাজগিরিতে উঠতে আমাদের ৭ / ৮ টা প্রাচীর পেরোতে হয়েছিল। প্রতেকটা প্রাচীরের একটা করে তোরণ বা গেট। একেবারে খাড়া দেওয়াল।

সিঁড়ির রাস্তা বন্ধ থাকলে দেওয়াল বেয়ে ওঠা একেবারে অসম্ভব। এখানে খাজাঞ্চীখানা ছিল। কৃষ্ণগিরি অপেক্ষাকৃত কম উঁচু রাজগিরির থেকে। ওখানেও গেছিলাম। তবে চাক্কীদূর্গে যাওয়া হল না।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মচারীরা যেতে বারণ করলেন। বললেন সিঁড়ি খুব ভাঙ্গাচোরা তাই দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি ২০০৭ সালের জুন মাসে সেখানে গেছিলাম। ওখানের কিছু ছবি ব্লগের বন্ধুদের জন্য শেয়ার করলাম। আর জিঞ্জীর মারাঠা নায়ক (যদিও জিঞ্জীর লোক তামিল ভাষী এবং একবর্ণ মারাঠা ভাষা বুঝতে পারে না), শিবাজীর রণহুঙ্কার দিয়েই শেষ করছিঃ হর হর মহাদেব।

হর হর মহাদেব। ছবি পরিচিতি: ১। রাস্তার থেকে জিঞ্জী দূর্গ। রাজগিরির টেবিলের মতো পাহাড়টা দেখা যাচ্ছে। ২।

রাজগিরিতে প্রবেশের পথ। সরু আঁকাবাঁকা জিগজ্যাগ করা গেট, যাতে বড়ো গাছের গুঁড়ি দিয়ে বা হাতি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা না ভেঙ্গে ফেলা যায়। ৩। রাজগিরির পাদদেশে পুষ্করিণী। সাধারণ অবস্হায় তো বটেই আবার কেউ দূর্গ অবরোধ করলে এখানের জলের সরবরাহ থাকত ৩ / ৪ মাস।

৪। রাজগিরিতে প্রবেশের পথ। অনেকগুলি প্রাচীর দেওয়া আছে। এটি দ্বিতীয় প্রাচীরের প্রবেশদ্বার বা তোরণ। ৫।

অনেক সরু ও বিপদজনক ওপরে ওঠার পথ। একটু পা ফস্কালেই প্রাণ গেল। এই খাদে শত্রুদের নিক্ষেপ করা হত। এটিও একটি প্রবেশদ্বার। ৬।

আবার এটিও একটি রাজগিরির প্রবেশদ্বার। ৭। রাজগিরির উঁচু খাড়া দেওয়াল। শত্রুরা কেউ মই লাগালে বা দেওয়াল বেয়ে উঠতে চাইলে ওপর থেকে পাথর, গরম জল, তেল, পিচ্ছিল পদার্থ ফেলে দেওয়া হত। ৮।

রাজগিরির একদম ওপরে একটা মন্দির। স্হানীয় তামিল ভাষায় মন্দিরকে বলে দেবালায়া। ৯। এবার চলেছি কৃষ্ণগিরির পথে। ১০।

কৃষ্ণগিরির একটি প্রবেশদ্বার। ১১ - ১৩। কৃষ্ণগিরির অভ্যন্তরে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।