আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবৈধ নবজাতকের পাপ

শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি

শুক্রবারের যায় যায় দিন। সংবাদের শিরোনামটি হচ্ছে “কুড়িলে ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার” হরহামেশাই আমরা এমন সংবাদ চাক্ষুষ করি। হয়তো ব্যথিত হই। কিছুক্ষণ পর হয়তো ফের ভুলে যাই। এ টুকুই আমাকে কাবু করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আমার প্রাইমারি স্কুলটির কথা উল্লেখ করেছি আগেই। (একটি বিশ্বাসযোগ্য কাহিনী। ) তখন সময়কালটা ১৯৭৫-৭৬ হবে। একদিন স্কুলে গিয়ে দেখলাম পুকুরের পশ্চিম দিকে পানির কাছাকাছি শুকনোতে পড়ে আছে সদ্যজাত একটি মৃত শিশু। আরো অন্যান্য লোকজন ভিড় করে দেখছিলো।

ওরা মন্তব্য করছিলো নানা রকম। শিশুটির নাভিতে ছিলো একটি লম্বা দড়ি(আসলে নাড়ি)। চিৎ হয়ে পড়েছিলো। কাক ঠুকরে ঠুকরে শিশুটির একটি চোখ ক্ষত করে ফেলেছে। ছোট্ট নুনুটি চেষ্টা করছিলো ঠুকরে নিতে।

ভীড়ের মধ্যে কেউ কেউ হুস হাস করে চেষ্টা করছিলো কাক তাড়াতে। সেখানে উপস্থিত যে কজন নারী ছিলেন সবাই চোখে আঁচল চেপে নিরবে অশ্র“ বিসর্জন করছিলেন। কার পাপের শাস্তি শিশুটি পেলো? জন্ম হওয়ার আগে কী এমন পাপ সে করেছিলো যে, তাকে এভাবে মায়ের বুকে আশ্রয় না পেয়ে পরিত্যাক্ত হতে হবে? আমি ভেবে পাই না যে, মায়ের মনে যদি পৃথিবীর সিংহভাগ মমতা থেকে থাকে তবুও কেন তিনি সন্তান পরিত্যাগ করেন? কেন করতে বাধ্য হন? আসলে আমাদেরই সমাজ ব্যবস্থা। আমরা প্রকাশ্যে কিছু নিয়ম-কানুন সাগিয়ে রেখেছি। যা সময় মত আড়াল করতে পারবে আমাদের অপকর্মকে।

শুনেছি খুব ভোরে দিকে শিশুটির কান্না শুনতে পেয়েছিলো কয়েকজন। কিন্তু কোনো মহিলাকে নিয়ে ফিরে আসতে আসতে শিশুটি মারা গিয়েছিলো। যে শিশুটি এভাবে মরে পড়েছিলো তার জননী কি তাকে ভুলতে পারবেন? সমাজের ভয়ে না হয় তাকে পরিত্যাগ করলেন। কিন্তু আমাদের সমাজ কি দিতে পারতো না শিশুটির নিরাপত্তা? না হয় নারীটি কিছু কাল হেনস্থা হতই। অপকর্মের দায়ভাগ তো কিছুটা তাকে নিতেই হবে।

যদিও তিনি সন্তান পরিত্যাগ করে সতী সাজলেন। সন্তানটির জন্মদাতার মুখ সমাজের আড়ালে রাখলেন। কিন্তু খুনের দায়ভাগ থেকে কি তিনি মুক্তি পাবেন? জননীটি যদি সাহস করে সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন, এক সময় আমাদের সমাজ তা মেনে নিতো। আর সমাজ যখন কোনো একটি ব্যাপার মেনে নেয় তখনই ব্যাপারটা পরিণত হয় স্বাভাবিক বলে। কী প্রয়োজন এভাবে শিশু হত্যার? আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকায় এমনও আশ্রম আছে যেখানে নিরাপদে সন্তান প্রসব করে জননীটি ফিরে আসতে পারতেন তার বাবার গৃহে।

কাকপক্ষীও জানতে পেতো না। আশ্রমের লোকজন জানতে চাইতো না শিশুটির মায়ের নাম অথবা জন্মদাতার নাম। তাহলেই বেঁচে যেতো একটি প্রাণ। অথচ সমাজের ভয়ে, লোকচক্ষুর সামনে মাথা হেঁট হওয়ার ভয়ে কতই না নিষ্ঠুর হতে হয় জননীকে। তখন আমরা জানতে পাই যে, জননী কখনো নির্দয়তার দিক থেকে পশুকেও ছাড়িয়ে যান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.