আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা

leo_abdullah@yahoo.com

রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা। ছন্দের জাদুকর সুকুমার রায়ের এ ছড়াটি মনে পড়ে যায় যখন দেখি আজকাল নির্জলা হাস্যরসের বড় অভাব ঘটেছে। মানুষকে টিভি দেখিয়ে জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে না হয় একে অন্যকে কাতুকুতু দিয়ে হাসাচ্ছে। কিন্তু অফিসে আপনার কাতুকুতু দেয়ার বা টিভি দেখার সময় কোথায়? কর্মক্ষেত্রে হাসির খোরাক? ভাবছেন, অফিস আবার ঠাট্টা-মশকরার জায়গা নাকি? হলে অসুবিধাটা কি? শুনে হাসবেন না, আপনার প্রফেশনাল দক্ষতা বাড়াতে হাস্যরসের জুড়ি নেই এমনটিই জানা গেছে কিছু গবেষণা থেকে।

বিদেশি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৯১ পার্সেন্ট একজিকিউটিভ সেন্স অফ হিউমারকে তাদের ক্যারিয়ারে অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। ওই সার্ভেটা করতে গিয়ে গবেষণাকারীরা অফিস একজিকিউটিভদের তাদের অফিসের পরিবেশে বাস্তবে ঘটে যাওয়া অত্যন্ত মজার কিছু ঠাট্টা-তামাসার বর্ণনা করতে বলেছিলেন। সহকর্মীকে সারপ্রাইজ দেয়া বা বোকা বানানোর বেশ কিছু মজার ঘটনা পাওয়া গেল তাদের কাছ থেকে। > একজন ওয়ার্কারের অফিস পুরোটা কাঠের ভুসি দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলাম আমরা। > কয়েকজন মিলে বিস্কিটের মধ্যে বাচ্চাদের টুথপেস্ট ভরে তাদের সহকর্মীকে খেতে দিয়েছিল।

> কয়েকজন এমপ্লয়ি মিলে আরেক এমপ্লয়ির রুম থেকে সব পরিষ্কার করে বের করে এনেছিল। > এক লোকের অফিস পুরোটা বালু আর বিচে ব্যবহৃত খেলনা দিয়ে ভরে ফেলেছিল তার সহকর্মীরা। > আমাদের এক কলিগের মাউসের নিচে টেপ লাগিয়ে দিয়েছিলাম আমরা, ফলে মাউস পয়েন্টারটা কোনোমতেই নাড়াতে পারছিল না সে। > আমার অফিসের এক এমপ্লয়ি তার সহকর্মীর ডেস্কের নিচে প্লাস্টিকের একটি পা রেখে দিয়েছিল যাতে সে ভয়ে আতকে ওঠে। > আমাদের অফিসের এক লোকের অফিসের কমপিউটার, ডেস্ক এবং ছবি Ñ সব কিছুই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম আমরা।

> কেউ একজন আমার কিবোর্ডের কিগুলোই পাল্টে ফেলেছিল। > আমাদের এক কলিগের পুরো অফিসটাই আমরা বেলুন দিয়ে ভরে দিয়েছিলাম। কাজের পরিবেশে এ ধরনের লঘু ভাব বা চপলতা দেখানোর মধ্য দিয়ে আপনার চারপাশে যারা আছেন তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যোগাযোগের খোলামেলা আবহ তৈরি করবে, সর্বোপরি একটা পজিটিভ ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট গড়ে উঠবে। সম্ভবত আরো গুরুত্বপূর্ণ যা তা হলো, কাজের মধ্যে এ ধরনের কমিক টাচ আপনার টেনশন কমাবে, এমনকি সেটা প্রচ- চাপের দিন হলেও। কিন্তু মনে রাখবেন, বোকা বানানোর সব ঘটনা ভালোভাবে গ্রহণ নাও করা হতে পারে।

হাস্যরসাত্মক ঘটনা করার আগে চূড়ান্তভাবে যে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন তা হলো, আপনার প্রতিষ্ঠান এবং সহকর্মীর দৃষ্টিভঙ্গি। রসিকতার বিষয় রসিকতার মতোই হওয়া উচিত, কাউকে হুবহু নকল করে বা তাকে আহত করে রসিকতা করা ঠিক নয়। অফিসে আপনি নিজে যাতে ‘মদন’ না বনে যান সে জন্য আর আশপাশের মানুষকে নির্দোষ আনন্দ দিতে নিচের আইডিয়াগুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন। তীব্র ব্যঙ্গকে না বলুন : লোকজন প্রায়ই পরোক্ষভাবে রসিকতাকে ব্যবহার করে অন্যদের তীব্র তিরস্কার করে। একটি উদাহরণ খেয়াল করুন আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না একদম ঠিক সময়ে হাজির হয়েছো তুমি, ঘটনাটা কি? ব্যঙ্গ খুব কম ক্ষেত্রেই ভালো আইডিয়া হতে পারে।

সে জন্য এ জাতীয় মন্তব্য থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। নিজের ঠাট্টার শিকার নিজেই হন : সামনে বাড়–ন, আপনার দোষ নিয়েই খুচিয়ে তুলুন আনন্দকে। এটি করার ফলে আপনার উপস্থিতিকে অন্যরা স্বাভাবিকভাবেই নেবে আর অন্য কারো আপনাকে টার্গেট করে জোক করার ঝুকিটাও কমে যাবে। ধরুন কাউকে প্রেজেনটেশন দেয়ার সময় আপনি যদি এ ধরনের মন্তব্য লাগিয়ে দেনÑ আশা করছি এ আইডিয়াটা দিয়ে বুঝবে আমি যেমন তেমনি তুমিও। এটা যে কোনো কদর্যতাকে অনায়াসে সহজ করে দিতে পারে।

কেবল নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার মন্তব্যটা হালকা গোছের। আপনি নিশ্চয় চান না, আপনার সহকর্মী ভাবুক রসিকতার মধ্য দিয়ে আপনি তার কাছ থেকে তারস্বরে সাহায্য চাইছেন। অন্যদের সঙ্গে হাসাহাসি করুন : কোনো জোক বা চুটকি গপ্পো না শুনিয়েও আপনি নিজের ব্যাপক রসিকতা বোধের পরিচয় দিতে পারেন। কেবল আপনার আশপাশে যারা মজা করছে তাদের সঙ্গে সুর মেলান এবং মজাটা উপভোগ করুন। একটি ‘ফানি ফাইল’ তৈরি করুন : আপনার কাছে নিশ্চয়ই অনেক প্রজেক্ট কিংবা কমিটির কাজের ফাইল আছে যেগুলোর সঙ্গে আপনাকে কাজ করতে হয়।

বেশ, এবার একটি ফানি ফাইল বানালে কেমন হয়? এমন একটি ফোল্ডার বানান যাতে কাজের পরিবেশের উপযুক্ত নানা কার্টুন (যেমন- ডিলবার্ট কমিক স্ট্রিপ), মজাদার নিউজ আর্টিকল, বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া হাস্যরসাত্মক চিঠি বা ই-মেইল কিংবা যে কোনো কিছুই হতে পারে যা অন্যদের আনন্দ দেবে। এরপর আপনার কোনো সহকর্মী হয়তো বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে এলো আর আপনি তাকে সারপ্রাইজ দিলেন আপনার ফাইল থেকে ছোট্ট কোনো মজাদার আইটেম বা তথ্য তার ফাইলে দিয়ে। কেবল খেয়াল রাখবেন আইটেমটি যাতে অপমানজনক বা কুরুচিপূর্ণ না হয়। একটি ফান কমিটিতে একত্র হতে পারেন : আনন্দের সন্ধানে ‘অফিস জুড়ে মজার ঘটনা’ জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন আপনার সহকর্মীদের। একসঙ্গে মাথা খাটিয়ে এ সপ্তাহের জন্য মজার কিছু বের করতে পারেন।

হতে পারে ব্রেকফাস্টের সময় সহকর্মীকে গিয়ে সারপ্রাইজ দেয়া, পুরো টিম নিয়ে বিকালে পার্কে গিয়ে আড্ডা দেয়া ইত্যাদি। তবে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগে আপনার ডিপার্টমেন্টের প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। তার কাছ থেকে আপনি অনুমোদন চাইত পারেন, অন্যান্য বিষয়ে যেমন বাজেট, শেডিউলিংÑ এসব ব্যাপারে আলোচনা সেরে রাখতে ভুলবেন না। ছোট ছোট কুইজ ছাড়ুন : টম ক্রুজ আর কেটি হোমস তাদের বাচ্চার নাম কি রেখেছেন? কোন জেলা থেকে সর্বশেষ ক্লোজআপ ওয়ান নির্বাচিত হয়েছেন। অধিকাংশ লোকই এ পপ কালচারের সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে পছন্দ করে।

লোকজনকে আপনি স্পোর্ট, জিওগ্রাফি কিংবা খাবার-দাবার থেকে শুরু করে মজাদার যে কোনো টপিক দিয়েই ঝলসাতে পারেন। হয়তো প্রশ্নটির সঠিক উত্তর দেয়ার একমাত্র পুরস্কার হতে পারে উল্লেখযোগ্য কোনো জায়গায় বিজয়ীর নাম আটকে দেয়া। এভাবে একের পর এক আনন্দদায়ক তথ্য এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে কাজের পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই হয়ে উঠতে পারে উপভোগ্য। আটকে রাখুন আনন্দদায়ক মুহূর্তগুলো : একটি ডিসপোজেবল ক্যামেরা হাতের কাছেই রাখুন যাতে আপনার ও আপনার সহকর্মীর আনন্দদায়ক বা মজার মুহূর্তটাকে ধরতে পারেন। এরপর ছবিটি কমিউনিটি বুলেটিন বোর্ডে সেটে দিতে পারেন।

কেউ হয়তো উদ্দেশ্যহীনভাবেই একদিন লাইম-গ্রিন কালারের একটি শার্ট পড়ে এলো, সেটার একটি নির্দোষ স্ন্যাপশট নিশ্চিতভাবেই তার মেজাজ ভালো করে ফেলবে। কাজের পরিবেশে আনন্দ করার অভ্যাস যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং কর্মদক্ষতা বাড়ায়। এ কারণেই হাসি আটকে রাখবেন না, কেবল বিষয়টিকে ব্যবসায়িক পরিন্ডলের আবহে ধরে রাখুন। তামিম আবদুল্লাহ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।