আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছন্নছাড়া'র পেন্সিলে মানুষের স্কেচ

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

ছন্নছাড়া'র পেন্সিলে মানুষের স্কেচ এই হতদরিদ্র দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বঞ্চনা, হতাশা আর দারিদ্রকে সম্বল করে বেঁচে আছে। অভাব, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা প্রতিনিয়ত শত শত পরিবারের জীবন থেকে সুখ ও সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে। অথচ এই আমরা তাদের মত মানুষ হয়েও কার জন্য কতটুকু কী করতে পারছি? আমাদের সেই সামর্থ্য কোথায়? তবুও আমরা তাদের শান্তনা দেই, পাশে এসে দাঁড়াই, সমবেদনা জানাই। আর এটা করি শুধুমাত্র মানবতার কারণে। মানুষ হয়ে জন্মেছি বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াবো সেটাই স্বাভাবিক।

আর এই জন্যেইতো আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। এই ব্লগের মুষ্ঠিমেয় সংখ্যক ব্লগার সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর একটা ক্ষুদ্রতম অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু বাঙালী যাদের মাতৃভাষা বাংলা তারাই মূলতঃ এখানে ব্লগিং করে থাকি। ব্লগের এই ভার্চুয়াল মানুষগুলো আমাদের কাছে অচেনা, কেউ কাউকে চিনিনা, জানিনা। এমন কী কারো আসল নামও জানিনা।

জানার খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা। আমরা জানিনা কে কেমন পরিবার থেকে এসেছে, কার কেমন মানসিকতার, কে কেমন জীবন যাপনে অভ্যস্ত, কে কেমন অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, কার মনে কি ধরণের কষ্ট বা কার কী ব্যাথা-বেদনা বা কে আনন্দে আছেন বা কার কী উদ্দ্যেশ্য- এসবের আমরা কিছুই জানিনা। তবুও আমাদের মধ্যে একটা যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। আমরা একে অন্যকে এক একটি ইউনিক “নিক” হিসেবে জানি। আমাদের সবার ভাষা এক- বাংলা।

আর এই বাংলা ভাষায় লেখা বলেই বিভিন্ন জনের লেখা- গল্প, কবিতা, সাহিত্য, ভ্রমণকাহিনী বা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা, মনের কথা, কল্পকথা ইত্যাদি পড়ছি এবং শেয়ার করছি। এই দেশের প্রতিটি মানুষের মাঝে এতোটুকু সুখ বা শান্তি এনে দেবার মতো ক্ষমতা, ঐশ্বর্য্য বা সম্পদ আমাদের কারো কাছে নেই। থাকলেও তার অংশীদারিত্বের পরিমাণ এতো বেশী যে সুষম বন্টনের কথা ভাবতে পারিনা। ফলে আশে পাশের অনেক অবহেলিত মানুষের ভাগ্যে কিছুই জোটেনা। আমাদের দেশে নারী ও শিশুরা হচ্ছে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত।

তারা নিতান্তই কোণঠাসা হয়ে পড়া এক বিপুল জনগোষ্ঠি। এই সকল নারী ও শিশু যারা ঘরে ও বাইরে কর্মরত তাদের অধিকাংশই বঞ্চনা, প্রতারনা ও হয়রানির শিকার। অন্যদের চাইতে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াটা অনেক বেশী জরুরী। এই সকল হতদরিদ্র মানুষকে দেবার মতো ঐশ্বর্য বা সম্পদ আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে তেমন কিছুই নেই। যা আছে তা হলো সামান্য মানবতা।

আর্থিকভাবে যা নিতান্তই মূল্যহীন। তাই ব্লগের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার লেখাতেই (ধর্ম, রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়গুলো ছাড়া সব লেখাতেই নিজের ভাললাগা খুঁজি) কোন প্রকার নেগেটিভ মন্তব্য কিরিনি বা করতে পারিনি। এটা আমার চরম দুর্বলতা। যে যাই লিখুননা কেন- সে কেমন মানসিক অবস্থা থেকে লিখছে বা তার বর্তমান মানসিক অবস্থা কেমন এসব না জেনে নেগেটিভ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি। কারন আমার যে কোন নেগেটিভ মন্তব্য তার জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে আর সেটা আমি কখনোই চাইনা।

আর যার লেখা ভাললাগে তা আমি অকপটে স্বীকার করি। আমি সত্য বলতেই পছন্দ করি। আর নিজের সীমিত জ্ঞানের উপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। কেউ ভাল লিখলে তাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি। নারী বা পুরুষ সেই বিষয়টা মাথায় কম রাখি।

কারণ আমার বিশ্বাস একটু উৎসাহ তাকে আরও ভাল কিছু লিখতে উদ্বুদ্ধ করবে। তার লেখাটা শুধু আমাকে নয় সবাইকেই আনন্দ দেবে। কিছু মহৎ বা সৃষ্টিশীল কাজের জন্য আমার প্রশংসা সবসময়ই ফল্গুধারার মতই বইবে। সে নারী হোক কিংবা পুরুষ। আমার প্রিয় লেখকের লিষ্টে নারী ব্লগারের পাশাপাশি অনেক পুরুষ ব্লগার রয়েছেন।

আর সামগ্রিক বিচারে পুরুষ ব্লগারদের লেখাই ব্লগের মূল প্রাণ। তাদের লেখায় অনেক বেশী পেশাদারিত্ব রয়েছে। তাদেরকে নতুন করে উৎসাহিত করার প্রয়োজন দেখিনা। বরং নারী ব্লগাররা এই ব্লগে কম লিখে। বেশীর নারী ব্লগাররা লিখতে জড়তা বোধ করে।

আমার বউয়েরও একটা “ব্লগিং নিক” রয়েছে। আঙ্গুলে গোনা মাত্র কটা পোষ্ট। তার বেলায়ও দেখেছি সেই জড়তা, সেই আড়ষ্টতা। তাকে বলে কয়ে খুব একটা লাভ হয়নি। আমার এই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই আমি মনে করি নারী ব্লগারদের কিছটা বেশী উৎসাহ প্রয়োজন।

উৎসাহ পেলে তারা আরো একটু এগিয়ে আসবে। এই ব্লগে লেখার মাধ্যমে তাদের সন্তোষজনক একটা প্রতিনিধিত্ব থাকুক। আর সেই অভিপ্রায় নিয়েই আমি তাদের উৎসাহিত করি। আমার ধারণা নারীরা রহস্যময়ী নয় বরং আমরা তাদের তেমন করে জানিনা বলেই আমাদের এই ধারণা। নারীদের সম্পর্কে জানতে হলে তাদের লেখা আরও বেশী পড়তে হবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমার এই ধারণা অনেকের কাছেই একটু অন্যরকম। তারা এখানে অন্যকিছু খোঁজার চেষ্টা করেন। হতাশ হয়েছি তবু হাল ছাড়িনি। কারণ মেয়েরা জানুক সব পুরুষই তাদের প্রতিপক্ষ নয়, তাদের বঞ্চনার হাতিয়ার নয়, তাদের প্রতিভা বিকাশের অন্তরায় নয়। এই সমাজে অনেক পুরুষই তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।

তারা তাদের আপন বাবা, ভাই কিংবা বন্ধুর না হলেও আত্মার সম্পর্কে আত্মীয়ের মতোই। আমার বিশ্বাস, নারীদের নারী না ভেবে মানুষ ভাবলে আর নিজেকে পুরুষ না ভেবে মানুষ ভাবলে যে কোন মানুষই যে কোন নারীর কাছ থেকে অনায়াসলব্ধ কিছু শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে পারে। একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বয়স আর অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি- যা জেনেছি, একজন মানুষই আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, সে কোন নারী কিংবা কোন পুরুষ নয়। নারী ও পুরুষ দুটো পৃথক সত্ত্বা হলেও আত্মার প্রশ্নে সবাই মানুষ।

ইন্দ্রিয়গত কোন তফাৎ তাদের নেই। ভাবনা, চেতনা ও চিন্তায় নেই কোন যোজন তফাৎ। তাই এবার নিজের দিকে তাকিয় ভাবুন- আপনি কে? আপনার পরিচয় কী? আপনি কি সৃষ্টির সেরা জীব? নাকি চোখের দৃষ্টিতে দেখা এক সূক্ষ্ণ বিভেদের দেয়ালের এপাশ-ওপাশ দাঁড়ানো সম্পর্ক নির্ধারণকারী শুধুই নারী কিংবা শুধুই পুরুষ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।