আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রহাণুর আঘাতে ডায়নোসরের ভাগ্য বরণ করতে পারে মানুষ

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
২০৩৬ সালের ১৩ এপ্রিলের সম্ভাব্য চিত্র মহাশূন্য থেকে বিশাল কোনো উল্কা বা ধুমকেতু যদি পৃথিবীকে আঘাত করে তবে তা থেকে বাচার উপায় নেই বললেই চলে। ঠিক এ ধরনেরই এক ঘটনায় পৃথিবী থেকে ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ধরনের মারাত্মক দূর্যোগে ডায়নোসরের ভাগ্য বরণ করা মানুষের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সব আশা শেষ করে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। কিছুদিন আগে গত বছরের ৫-৮ মার্চ এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য নিউ ইয়র্কে একত্রিত হয়েছিলেন কয়েকশ বিজ্ঞানী।

তাদের মধ্যে ছিলেন নিউক্লিয়ার ওয়েপন এক্সপার্ট থেকে শুরু করে গ্রহ বিজ্ঞানী পর্যন্ত। তারা নিউ ইয়র্কে একত্রিত হয়েছিলেন মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা কোনো ধরনের বস্তু থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেয়ার জন্য। ইউএস অ্যারোস্পেস কর্পরেশন আয়োজিত প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কনফারেন্সটি পৃথিবীকে মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা বিভিন্ন বস্তু থেকে রক্ষা করার বিভিন্ন আইডিয়া দিবে। কিভাবে এ ধরনের ছুটে আসা বস্তুকে সনাক্ত করা হবে এবং এগুলোর গতিপথ পরিবর্তিত করা হবে এ বিষয়গুলো ছাড়াও তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সমস্যা। সমস্যাটি হচ্ছে, যদি এমন একটি গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য তবে তা কি মানুষকে জানানো হবে? মিটিংয়ে উপস্থাপিত এমার্জেন্ট স্পেস টেকনলজির এক ডিসকাশন পেপারে ব্রেন্ট উইলিয়াম বারবি লিখেছেন, মোটামুটি বড় আকারের একটি গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে পৃথিবীতে মহা দূর্যোগ ঘটবে।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। যাই হোক, পৃথিবীর জানা ইতিহাসে প্রথম বারের মতো এ হুমকি মোকাবেলার প্রযুক্তি সম্ভবত মানুষ অর্জন করেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মহাশূন্য থেকে প্রায়ই বহু ছোট বস্তুকণা আছড়ে পড়ে। উল্কা হিসেবে পরিচিত এসব বস্তুকণা বা এগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে সৃষ্ট আগুন পৃথিবীতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। এক কিলোমিটারের চেয়ে বেশি চওড়া গ্রহাণু বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হানে গড়ে প্রতি এক লক্ষ বছরে একবার।

ছয় কিলোমিটারের চেয়ে বড় বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হানে গড়ে প্রতি একশ মিলিয়ন বছরে একবার। ছয় কিলোমিটারের চেয়ে চওড়া বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হানলে তা ব্যাপক ধ্বংস বয়ে নিয়ে আসবে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এ ধরণের বিশাল কোনো বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হানার সময় এসে গেছে। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন অ্যাপোফিস নামে এক গ্রহাণুর দিকে। ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত মহাশূন্যে ভাসমান গ্রহাণুটি ৩৯০ মিটার চওড়া।

এটি ২০৩৬ সালে পৃথিবীতে আঘান হানতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। অ্যাপোফিস পৃথিবীতে আঘাত হানলে হিরোশিমায় ফাটানো পারমাণবিক বোমাটির চেয়ে এক লক্ষ গুণ বেশি এনার্জি রিলিজ হবে। এর ফলে কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে পৃথিবীর সব স্থান থেকেই আকাশে এর পোড়া ছাই ভাসতে দেখা যাবে। এর প্রভাবে এক বছর বা এর বেশি সময় ধরে আকাশ কালো হয়ে থাকবে এবং পৃথিবীর ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।

ড. বারবি পারমাণবিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এ সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতির কথা বলছেন। তিনি জানাচ্ছেন, অ্যাপোফিসের এমন এক স্থানে বোমাটি ফাটাতে হবে যেন এর কিছু অংশ আলাদা হয়ে যায়। এতে বোমাটি যেখানে ফাটবে তার বিপরীত দিকে বস্তুটি কিছুটা সরে যাবে। এর ফলে এটির গতিপথ সামান্য পরিবর্তিত হবে। গতিপথ সামান্য পরিবর্তিত হলে পৃথিবীকে আঘাত হানার বদলে এটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে বলে তিনি জানান।

এ প্রযুক্তির সুবিধা হচ্ছে, মানুষের হাতে থাকা বর্তমান প্রযুক্তিতেই এটি করা সম্ভব। অবশ্য এখনো এ ধরনের চেষ্টা কেউ করেনি। প্রিন্সটনের ইন্সটিউট ফর অ্যাডবান্সড স্টাডির পিয়েট হাট একটি আইডিয়া দিয়েছেন যা ড. বারবির তুলনায় কম বিপদজনক। পিয়েট হাটের আইডিয়া হচ্ছে, একটি রবোটিক টাগবোটের সাহায্যে এটিকে গতিপথ থেকে সামান্য সরিয়ে ফেলা হবে। তিনি জানান, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের মাধ্যমে মহাশূন্যের বস্তুটিকে আগে থেকেই নির্ণয় করতে হবে এবং বস্তুটিকে সরানোর জন্য এর দশ বছর আগেই রবোটিক টাগবোটটিকে পাঠাতে হবে।

প্রফেসর পিয়েট হাটের মতে, টাগবোটটির পারফরমেন্স নির্ভর করবে এর হাই পারফরমেন্স ইলেকট্রিক ইনজিনের ওপর। ইনজিনটি ফিউয়েল হিসেবে কেমিকেলের ব্যবহার করবে না। এটি নির্গমন করবে চার্জযুক্ত বস্তু। যে দিক দিয়ে চার্জ বের করা হবে বস্তুটি তার বিপরীত দিকে সরতে থাকবে। অবশ্য ইনজিনের ধাক্কা খুব সামান্য হবে।

হাতের উপর একটি কাগজ রাখলে যে চাপ পড়ে অনেকটা সেই রকম। কিন্তু ইনজিনটি সাধারণ রকেট ইনজিনের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে চলবে। পিয়েট হাট হিসাব দেখাচ্ছেন, এ ধরনের একটি ইনজিনের সাহায্যে মহাশূন্যে ভাসমান এ ধরনের বস্তুকে ৮০০ মিটার পর্যন্ত দূরে সরানো সম্ভব। আয়ন ইনজিনের সাহায্যে গ্র্যাভিটি ট্রাক্টরও চালানো সম্ভব। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী পৃথিবীর দিকে আসতে থাকা গ্রহাণুটির উপর সরাসরি কোনো আঘাত না করে বা স্পেসক্রাফট বা রকেট অবতরণ করানো হবে না।

এর বদলে স্পেসক্রাফট দিয়ে আকর্ষণ করে গ্রহাণুটির গতিপথ পাল্টে দেয়া হবে। তবে এসব পদ্ধতি এখন পর্যন্ত মূলত আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ আছে। বাস্তবে কতোখানি সম্ভব তা কারও জানা নেই। বহু ধরনের টেকটিক্যাল বিষয় ও হিসাব ছাড়াও প্লানেটারি ডিফেন্স কনফারেন্সে আলোচনা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ এক ভিন্ন বিষয় নিয়ে। বিষয়টি হচ্ছে, যদি এ ধরনের বিপজ্জনক বিশাল এক গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তাহলে সম্ভাব্য মহা দূর্যোগের খবরটি মানুষকে কিভাবে জানানো হবে? ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সোসাল সাইকোলজিস্ট অ্যাল হ্যারিসন জানান, কোনো গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্ভাব্য সংঘর্ষ কর্তৃপক্ষের জন্য বিশাল সমস্যা তৈরি করবে।

সাইকোলজিস্টরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপক মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তা গোপন রাখার পরামর্শ দেন। যেমন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে যদি অ্যাপোফিস নামে গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাত হানতো তবে তা পৃথিবীর যে লাইন বরাবর আঘাত হানতো, তা হচ্ছে সেন্ট্রাল ইওরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের একাংশ, গঙ্গা উপত্যকা (পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এলাকা) ও ফিলিপাইন। সে সময় তথ্যটি গোপন রাখা হয়েছিল। কিছু বিজ্ঞানী এ বিষয়ে স্পর্শকাতর তথ্য গোপন রাখাকেই ঠিক বলে মনে করেন। কলোরাডোর সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গ্রহ বিজ্ঞানী ক্লার্ক চ্যাপম্যান বলেন, রিস্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য গোপনীয়তা ভাল নয়।

আবার সব তথ্য জানিয়ে দেয়াও সম্ভব নয়। যেমন ধরা যাক, কোনো বড় উল্কাপাতের পূর্বাভাষ দেয়া হলো কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রভাব দেখা গেল না। ক্লার্ক চ্যাপম্যান আরো বলেন, সোসাল সাইকোলজির দৃষ্টিতে জনগণকে কোনো বিষয়ে ভয় দেখানো সমর্থন করা হয় না। ঝুকির বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে জানানো না হয় তবে মানুষকে অযথা বিরক্ত করা হবে। এ ধরনের কার্যকলাপের ফলে অফিসিয়াল ঘোষণার ওপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এতে পরবর্তী কালে বড় ধরনের ওয়ার্নিং মানুষ নাও মানতে পারে। বিস্তারিত দেখুন: Click This Link Click This Link তবে মূল সূত্রগুলো হারিয়ে গেছে। ---------------------------- (নোট- আমার এ লেখা ঢাকার একটা পত্রিকায় প্রকাশিত, সা.ইনের পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করলাম)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.