আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কাব্যবিলাস : নোয়াখালী [তিন]

একটু আগে বাড়ি ফিরলাম। সব ঝামেলা চুকে। দরোজায় দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে দ্যাখি, এ-কী! আমার সমস্ত শরীর যেনো পুড়ে যাচ্ছে শারদীয় জোছনায়, তীব্র আলোয়।

আমার প্রথম কবিতা প্রকাশ দৈনিক সংবাদ তখন জনপ্রিয়তায় রমরমা। প্রায় সবার ঘরে সংবাদ থাকতোই।

একদিন দৈনিক সংবাদ এ আমার একটি লেখা ছাঁপা হয়ে গ্যালো। মনের মধ্যে একটু সাহস নির্মিত হলো। এরমধ্যে নোয়াখালী জিলা স্কুলের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্থানীয় সাপ্তাহিক আজকের উপমা'য় আমার একটা লেখা ছাঁপা হলো। আমি ঐ স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র। স্কুলে সঙ্গত আমার নামটি বেশ আলোচিত হলো।

তখনই স্কুল ম্যাগাজিন দীর্ঘকাল প'র প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হলো, লেখা আহবান হলো যথারীতি। আমি কবিতা দিলাম। দিন যায়, মাস গড়িয়ে যায়। কিন্তু ম্যাগাজিনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কীভাবে যেনো জেনে গ্যালাম, আমার কবিতা প্রকাশ হবে না।

অমনোনীত হয়েছে। হতাশ হলাম আমি। ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট আমার ওপর ভর করলো বেশ। তার অনেকদিন পর, আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান স্যার আমাকে তাঁর কক্ষে আমাকে ডাকলেন। কিছুটা ভয় পেলাম।

ভড়কে গ্যালাম। হঠাৎ করে তাঁর ডাক (?)। প্রধান শিক্ষক যখন কোনো ছাত্রকে ডাকেন তখন শাস্তির জন্যই ডাকতেন বলে আমার মনে প্রচলিত অর্থে ধারণা ছিলো। আমি ভয়ে ভয়ে গ্যালাম তাঁর কক্ষের দিকে। পা দুটো সমানে কাঁপছে।

হার্টবিট বেড়েই চলেছে। না জানি কী অন্যায় করলাম। কী শাস্তি আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। স্যার আমাকে অবাক করে বললেন, কাল তুমি আমাকে দুটো কবিতা দিবে। উল্লসিত হলাম আমি।

সমস্ত ভয় যেনো উবে গ্যালো। রাতেই দুটো কবিতা লিখলাম। গ্যালাম স্যারের কাছে। আমি যাওয়ার আগেই স্যার খবর পাঠালেন যেতে। দুটো কবিতা স্যারের হাতেই বললেন, বসো।

আর কবিতা দুটো কবিতা পড়তে শুরু করলেন। কিছু সময় যান। স্যার কিছুই বলছেন না। পাশেই বসা ছিলেন ম্যাগাজিনের সম্পাদক খালেক স্যার। প্রধান শিক্ষক স্যার খালেক স্যারকে একটা কবিতা হাতে দিলেন।

আরেকটি রেখে দিলেন তার টেবিলের গ্লাসের নিচে। স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন, জড়িয়ে ধরে বললেন, দোয়া করি তুমি অনেক বড়ো কবি হও। দীর্ঘদিন স্যারের টেবিলে পড়েছিলো আমার কবিতা। মাঝে মাঝে আমি নিজে দ্যাখেছি। জানি না আজ পড়ে আছে কীনা।

স্যারের সেদিনের আর্শীবাদবাণী বুঝতে পারিনি। আজ বুঝে চলেছি। সেদিনের স্যারের প্রেরণায় আমার কাব্যবিলাস জেগে ওঠেছে। জানি না স্যার আজ কোথায় আছেন। মাঝে মাঝে ফিল করি তাঁকে।

স্কুল ম্যাগাজিন মুকুল এ আমার কবিতা ছাঁপা হলো। পারি নি, তার নাম। এটাই আমার প্রথম কবিতা প্রকাশ। কবিতাটি কাঁচা হাতে লেখা। সময় পেরিয়ে আজ মনে হয় দুর্বলতম একটি কবিতা আমার।

প্রথম ছাঁপা অক্ষরে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশ, সাথে আমার নাম দ্যাখে অন্যরকম আনন্দই পেয়েছিলাম। আমার প্রথম কবিতা প্রকাশের স্বাদ আজো লেগে আছে আমার শিহরণে। রোমান্সের সরলতা অভু্য্যদয়। বোঝানো যায় না, অনুভব করা যায়। কবিতাটি ছাঁপা হওয়ার পর ঘরে-বাইরের বিদ্রুপ বহন করেছি।

বিষয়টি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। এখোনো সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। বিশ্বাস করুন আমি সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে চাই না। এমনকী কোনো কোনো স্যারও ক্লাসে বিদ্রুপ করতে দ্বিধা করতো না। জনৈক একজন স্যার তো ক্লাসে প্রায়ই বলে উঠতেন, কবি-সাহিত্যিক হতে হলে কোনো ডিগ্রী লাগে না।

কথাটার মধ্যে একধরণের ঝাল ছিলো। অন্তঘাত করার মতো। আজ পথিমধ্যে সেই স্যারের সাথে দ্যাখা হলে দৈনিকে আমার কবিতা প্রকাশ হওয়ার কথা বলেন। তার ভালো লাগার কথা বলেন। ভালো লাগে শুনতে।

অনুপ্রাণিত হই ভীষণ। স্কুল পেরিয়েছি, কলেজ পেরুনোর পথে। এখোনো স্কুলের দেলোয়ার স্যার, অজয় স্যার, মোক্তুল স্যার, শিরীন আপা, নোয়াখালী সরকারি কলেজের বাশার স্যার, সেলিম স্যার, হেলাল স্যার-এঁদের প্রণাদনা পাই নিয়মিত। >> চলমান >> আগামি >> আমার নায়কেরা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।