আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তখন ভয় জাগে! /ইমরোজ আহমদ

ইমরোজ

আমাদের গ্রাম। ছেড়া কাগজে আঁকা একটি নিঃশব্দ চিত্রকল্প। ভালোবাসার অষ্টপ্রহরে আটা। কিংবা বলা যেতে পারে আমাদের সব থেকে প্রিয় কোন চাওয়া। গ্রামে যেতে কার না মন চায়? তবে শহরের সমস্ত ক্লান্তি অনন্য চাওয়া পাওয়া, অসাধারণ বাসের ধোঁয়া, কালচে শীশা ভরা ফ্যান, ভন ভন করে যাওয়া মাছি...সবই আমাদেরকে কাছে টানে।

গ্রামে গেলে টের পাই, শহরটা অনেক কষ্টের হলেও ফিরে যেতে সেখানে হবেই। কারণ আমার বনসাই করা হয়েছে শহরে। মাথা ধরে আসে...গ্রাম তখন অর্থহীন হয়ে পড়ে। একটার পর একটা ফোন মগজে অসহ্য মেঘ জমা করে। মোরগ পোলাও, সাদা ভাত খেতে খেতে বলি, "এবার যেতে হবে"।

শহরে যাওয়ার বাস আছে। আরে বাপরে বাপ! সে যে স্পীডে ছুটে যেন শহরে নিলেই হাপ ছেড়ে বাঁচবে। রাতের বাসে উঠলে, রাতারাতি গ্রাম, গঞ্জ, টাউন সব পার করে শহরের বিশ্রী পেট্রোল পাম্পগুলো যখন চোখে পড়বে তখন মনে হয়, আমি তো কিছুই করতে পারলাম না। আর পাঁচ হাজার আগাছা যেমন শহরে বাস করতে থাকে, আমিও তাদের মতই শহরের খাইয়ে পড়িয়ে হয়েই রইলাম। একবারও "এবার আমি চাষী হবো", বলে গ্রামে গিয়ে চাষা হতে পারলাম কই? মোড়লের উঠানে বসে গান শুনবো, হুকা টানবো, আহা কী শান্তি! সব গেছে।

এ আর এই জন্মে সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতার লাইন, "মা যদি হও রাজি, হব আমি খেয়া ঘাটের মাঝি"! শহুরে মেয়েরা ছেলেরা দম ফাটিয়ে মুখস্থ করছে। মনে হয়, "তুমি গ্রামে গেছো"? -গেছি তবে কোনটা গ্রাম বুঝতে পারি নি। -মানে? -মানে একটা সবুজ গালিচা, চারদিকে আইল, ঘাস এসবই... -আরে সেগুলোই তো গ্রাম। -নাহ! সেটা গ্রাম নয়, কেননা সেখানে সারি সারি করে গাছ লাগানো, আর যেখানে সেখানে চিপসের প্যাকেট ফেলা, পলিথিন গাছের আগায় ঝুলছে... -ওহ! বুঝছি, ওটা গ্রাম না।

পিকনিক স্পট। আগডুম-বাগডুম চিন্তা করতে করতেই রাতের গাড়িতে ওঠা হলো। আমার খেয়া ঘাট ছেড়ে যেতে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু যেতে হবে, আমার পরিবার আমাকে শেকড় ছাড়িয়ে বনসাই করে ফেলেছে শহরে। গ্রামের একটা মেয়েকে খুব মনে থাকবে।

এবার থেকে তাকে আমার প্রতিমাসে টাকা পাঠানোর কথা। মেয়েটি রিকসায় চরে হেটে দিনে না হলেও ৮ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে একটা স্কুলে পড়ায়। তার স্কুলের ছাত্রদের জন্য আমার অনুদান ব্যবহার করবে সে। নাহ! এখানে জনম জনমের জন্য কোন ক্যান্ডেললাইট ডিনারের সেটে বসে তার সাথে প্রেমের ওয়াদা করি নাই। এ নিছক আমার ফ্যান্টাসি।

বাসে উঠে তো একহাল হলো। স্পীডের উপরে জানালায় মুখ রাখা যাচ্ছে না। নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমি গ্রামটাকে একটু শুকে নিতাম! তা আর হলো কই? পেছনের লোকটার পাছে নিউমোনিয়া হয়ে যায়, সেই ভয়ে আমাকে জানালা বন্ধ করে দিতে হলো! আমার নিঃশ্বাসে আর গ্রাম নেই। এখানেই শেষ হয়ে যাক তবে।

আর দূরে যেতে ইচ্ছে করছে না। ড্রাইভার, আরও জোরে, আমি এখানেই ডেডবডি হয়ে যাই। তবুও শহরে আর না। এবার তবে বিধাতার কানে গেল কিছু?! হ্যা! ফোন বেজে উঠলো, -তুমি কোথায়? -এই চলে আসছি, ভৈরবের কাছাকাছি। -এসে কিন্তু মিসকল দিবে! -আচ্ছা দিবো।

-আমার ডেডবডি হওয়ার সমস্ত ইচ্ছা মাটি হয়। ড্রাইভার সাহেব একটু আস্তে চালান। ভয় লাগছে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।