আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের কুষ্ঠরোগীরা নাকি ট্রেনে চড়িয়া কলিকাতা যাইতেছে...

.এই ব্লগে যে কয়টি পোস্ট আছে, সেগুলোর মন্তব্য সরাসরি প্রকাশিত হবে না। এই অক্ষমতার জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী।

বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা ট্রেন চালু করা হয়েছে ঢাকা-কলিকাতা'র মাঝে । সেই কোন এককালে ঢাকা আর কলিকাতার মাঝে খুব যোগাযোগ ছিল ,সেটা আজকের ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের মতোই । কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে , কলিকাতা এখন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী , অন্যদিক ঢাকা একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী ।

এই দুই নগরের মাঝে এখন যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন ডাইমেনশন পেয়েছে । তবু মানুষের সাথে মানুষের , গ্রামের সাথে গ্রামের ,নগরের সাথে নগরের ,দেশের সাথে দেশের যোগাযোগ যতো বেশি মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করা যায় ততোই ভালো । আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাই চাই । একবার ট্রেনে চড়ে লন্ডন থেকে প‌্যারিস গিয়েছিলাম । চমৎকার ব্যবস্থা ।

লন্ডনে ওয়াটারলু স্টেশনে লন্ডন আর ফ্রান্সের দুই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বসে আছেন, দুই দেশের ইমিগ্রেশন একই সাথে শেষ করে ফেললাম । এমনকি আমার সবুজ রঙের একটা অচ্ছুৎ পাসপোর্ট সত্ত্বেও মোটে সময় লাগল ৫/৭ মিনিট । সেই সময় আমি মনে মনে আফসোস করেছিলাম , ইশ আমাদের দেশেও যদি এরকম ব্যবস্থা চালু হতো । ট্রেনে চেপে কলিকাতা হয়ে দিল্লী , তারপর আগ্রাতে গিয়ে তাজমহলটা দেখে আসা যেত । আবার চাইলেই মায়ানমার হয়ে মালয়েশিয়াতে গিয়ে একটা উইকএন্ড উপভোগ করে আসতাম ।

আমার সেই স্বপ্নে দেখা ট্রেন অবশেষে চালু হয়েছে । কলিকাতা আর ঢাকার মাঝে ট্রেন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরশুদিন, ১লা বৈশাখে । কিন্তু এই ট্রেন আমাকে আশাবাদী করে নি , বরং আশাভঙ্গ করেছে । ট্রেন চালুর ব্যাপারে আমাদের বন্ধু (!) দেশ ভারতের অসহযোগিতা বড়ো প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে । অনেক দিন ধরেই ট্রেন আর স্টেশন রেডি করে বাংলাদেশ বসে ছিল ।

ভারতীয়রা নানা গাইঁগুই করে এই ট্রেন সার্ভিস চালু করতে দেয় নি । বাংলাদেশ চেয়েছিল ঢাকা'তে ইমিগ্রেশন করতে , ভারত বলেছে সীমান্তে করতে হবে , বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে । বাংলাদেশ চেয়েছিল কলিকাতার অভ্যন্তরে কোন স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালু করতে , ভারত একটা দূরবর্তী স্টেশন নাকি সিলেক্ট করেছে , বাংলাদেশ সেটাও মেনে নিয়েছে । এতো সব মানামানির শেষে যে ট্রেন চালু হয়েছে , সেটা নিয়েও ভারতীয় পক্ষের চরম উন্নাসিকতা দেখা যাচ্ছে আজকের ইত্তেফাক এর খবরটি পড়া যাক । সেখানে দেখবেন কিভাবে পদে পদে নানা ভোগান্তি তারা রেখেছে আমাদের জন্য ।

আমি বেশ কয়েকটি পত্রিকা পড়ে যা জানতে পারলাম তা নিচে একসাথে লিখছি : ১. তাদের ইমিগ্রেশনে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা ! ইত্তেফাক জানাচ্ছে , ইমিগ্রেশনের পরেও যাত্রীদের বের হওয়ার সুযোগ নেই । গেদে স্টেশন এমনভাবে তৈরী করা যাতে করে যাত্রীরা কোনভাবেই বের হতে না পারে !!! ২. গেদে স্টেশনের ওয়েটিং রুমটা তালাবদ্ধ থাকে । যাত্রীরা এই আড়াই ঘন্টা কি তবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ব্যায়াম করবেন ? ৩. যাত্রীদেরকে খুবই কড়া মনিটরিংয়ের মাঝে রাখা হয় । এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক ভারতীয় পাচঁশ রুপির নোট না চিনে উনার সাথে দেড়শ টাকা আছে বলায় তাকে আগপাশ তলা তল্লাশি করা হয় । এরকম বিড়ন্বনায় পড়েন আরো অনেকেই ।

৪. ভিসা থাকা সত্ত্বেও অনেক যাত্রীকে কলিকাতা থেকে বাংলাদেশগামী ট্রেনে চড়তে দেয়া হয় নি , তাদের ভিসাতে স্টেশনের নাম ভুল থাকায় । ৫. সীমান্তের ১৫০ গজ পর্যণ্ত ভারতীয় অংশে ১৫ ফুট উচুঁ তারের বেড়া নির্মান করছে ভারত । এতো নিরাপত্তার নকশা করা সত্ত্বেও , উনাদের সাধের নিরাপত্তা কিন্তু বাংলাদেশের ট্রেনে চেপে যাওয়া সন্ত্রাসী (!)রা ব্যহত করে নি , একটি আন্তর্জাতিক ট্রেনের উদ্বোধনী দিনে সেটাকে ব্যারিকেড দিয়েছে উনাদেরই গুন্ডারা । শেষ কথা : এককালে কুষ্টরোগীদেরকে দীপান্তর করা হতো । ভারতীয়দের আচরন দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেও বুঝি একদল ছোঁয়াচে কুষ্টরোগীকে ট্রেনে করে কলিকাতা পাঠানো হয়েছে ।

এদেরকে আলাদা রাখতে হবে , নইলে কুষ্টরোগ ছড়িয়ে পড়বে কলিকাতায় । আদতে তা নয় । বাংলাদেশের যে জনস্রোত কলিকাতায় যায় , তারা সাথে নিয়ে যায় কড়কড়ে ডলার । ছোটখাটো ডাক্তার পর্যন্ত সেটার ভাগ পায় । আমাদের নব্যধনী কুৎসতি উচ্চবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তদের মোটা চিকন বউ ঝি রা সেখানে গিয়ে বস্তা ভরে ভরে জামাকাপড় কিনে আনে , সেটাও ঐ ডলার দিয়েই ।

কলিকাতার সাথে ট্রেন যোগাযোগে বাংলাদেশের লাভের ( আদৌ যদি কিছু থেকে থাকে )চেয়ে অনেকগুন বেশি লাভ ঐ ভারতীয়দেরই । ট্রেনে চড়া বাংলাদেশীরা যদি জামাই আদরের পরিবর্তে কুষ্টরোগী ট্রিটমেন্ট পান , ভারতীয়দের কাছ থেকে , তাহলে এই সাধের ট্রেন চালু রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে দ্বিতীয় বার চিন্তা করার দাবী জানাই । বাংলাদেশ সরকারকে মনে রাখতে হবে , অবমাননার মাধ্যমে আর যাই হোক , উভয় পক্ষে "মৈত্রী" হয় না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.