আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের মানুষ কোন বিশেষ দল ও ব্যাক্তির কাছে কখনই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশটাকে চিরস্হায়ী ইজারা দেয় না।



ঘটনার ঘনঘটা! ৭৫ থেকে ৯৬। ২১ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে। বলতে গেলে জাতীয়, দলীয় ও ব্যাক্তিগত নানান ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ছিল পুরোপুরি বন্ধুবিহীন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে টনক নড়ে দলটির।

৯১ এর নভেম্বরেই সুযোগ দেয়া হয় বন্ধুর সংখ্যা বাড়ানোর। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির। নেপথ্যে মূল কারিগর আমি ও প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাষ্টার। মতিঝিলে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির বিশেষ সম্মেলন আহবান করি। খালেদা জিয়া কতৃক কলমের খোচায় নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ বাতিলের প্রতিবাদে।

বহু দেন দরবার করেও উপজেলা পরিষদ বাতিল না করতে খালেদা জিয়ার মন গলাতে ব্যর্থ হলাম। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও বাতিলকৃত উপজেলা পরিষদ বহাল করতে পারলাম না। সুতরাং বহুমূখী জনস্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ শুরু হলো। সিদ্ধান্ত হলো, সরকারী দল বিএনপি বাদে সকল বিরোধী দলকে একমন্চে নিয়ে এসে আন্দোলনের সূযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। আমি, গাজীপুরের আহসান উল্লাহ মাষ্টার, নেত্রকোনার সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু, সিরাজগন্জের আজিজ সরকার, নারায়নগন্জের কুদরতে এলাহী পনির, ফরিদপুরের মাহমুদুন্নবী, তনাই মোল্লা, সাভারের ফিরোজ কবির, নওগার আব্দুল আহাদ সরকার (বর্তমান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের আব্দুস সামাদ আজাদ, আমির হোসেন আমু, এ্যাডভোকেট রহমত উল্লাহ (গাজীপুর), জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান চৌধুরী, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, জনতা দলের কে, এম ওবায়দুর রহমান, জামাতে ইসলামের আমীর গোলাম আযমের সাথে দেখা করি।

ফলশ্রুতিতে, ৯০ এ এরশাদের পতনের মাত্র একবছরের মধ্যেই একমন্চে আমাদের সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, জাপার মিজানুর রহমান চৌধুরী, জামাতের এ্যাডভোকেট আনসার আলী, জনতা দলের কে, এম ওবায়দুর রহমান প্রমুখ। সেই ঐতিহাসিক সমাবেশটি পরিচালনা করি আমি নিজে। সভাপতিত্ব করেন আহসান উল্লাহ মাষ্টার অথবা ফিরোজ কবীর (এ মুহুর্তে মনে পরছে না)। সেই থেকে শুরু। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হলো খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম হরতাল দেয়ার।

সম্ভবত ৯২ সালের ফেব্রুয়ারীতে আমরা হরতাল ডেকেছিলাম। ঢাকায় তেমন সফল না হলেও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সাফল্যের সাথেই হরতাল হয়েছিল। তারপরের ইতিহাস সকলের জানা। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামাত, জনতা দল ইত্যাদি দলগুলো মিলে কি কঠিন ও কঠোর আন্দোলন করেই না সেদিন তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে মানতে খালেদা জিয়াকে বাধ্য করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা পায়।

২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বন্ধুর সংখ্যা কমে যায়, বিপরীতে, খালেদা জিয়া ও বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। জিতে যায় বিএনপি তথা চার দলীয় জোট। বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরো বৃহত্তর পরিসরে মহাঐক্য গড়ার প্রয়াস নেন। এমনকি কট্টর ইসলামীক দল খেলাফতে মজলিসের সাথে লিখিত চুক্তি করেন।

খালেদা জিয়া ক্ষমতাকে চিরস্হায়ী করে নিজের ছেলেকে ক্ষমতায় বসাতে মরিয়া হয়ে ত্বত্তাবধায়ক সরকার নিয়ে যে সুগভীর চক্রান্ত শুরু করেন তার বিপরীতে শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশে বংশংবদ দাসত্বের খত নিয়ে তৎকালীন গৃহপালিত নির্বাচন কমিশনার আব্দুল আজিজ ও তার গোলামগণের চাপিয়ে দেয়া ২০০৭ এর জানুয়ারীর নির্বাচনের পুর্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয় সেখানে বিএনপি ও ছোটখাট দু চারটি বাদে দেশের সকলে দল মত নির্বিশেষে গিয়ে হাজির হন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল অলি, ডক্টর কামাল হোসেন, আস্তিক নাস্তিক, ইসলামি ঐক্যজোট, কে না ছিল সেদিন। তারপর দুবছর দেশে নির্বাচন না হলেও ২০০৮ এর শেষে যে নির্বাচন হলো সেখানে সেই মহাজোটের নেতৃত্বেই নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে দ্বিতীয়বারের মত দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সেদিন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে খালেদা জিয়া যা যা করেছিলেন, তার দ্বিগুন ষড়যন্ত্রে আজ শেখ হাসিনা নেমেছেন অতীতের সকল ইতিহাস ভুলে গিয়ে।

ফলে তিনি হারিয়েছেন সকল বন্ধুকে। বিপরীতে, প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে খালেদা জিয়া পাচ্ছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, দল, ব্যাক্তিত্বের সমর্থন। ডক্টর ইউনুস থেকে শুরু করে, মোল্লা, মৌলভি, বাম, ডান সকলেই এখন সরকারের বিরুদ্ধে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ক্ষমতার অন্ধে ও চামচাদের স্তুতিতে সকল শিক্ষা ভুলে যায়।

যখন হুস ফিরে আসে, ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়! কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হলো বাংলাদেশের মানুষ কোন বিশেষ দল ও ব্যাক্তির কাছে কখনই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশটাকে চিরস্হায়ী ইজারা দেয় না। যে বা যারাই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার অবস্হা সৃষ্টি করতে পারবে মানুষ তাদেরকেই বিশ্বাষ করবে। বিশ্বাষ করে বার বার হয়তো ঠকবে, আবারও বিশ্বাষ করবে। কারন জাতীর সত্যিকার উন্নয়নে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.