আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মক্কা-মদীনার পথে পথে-০১

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা কাতারের রাজধানী দোহা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল বেলা এগারটায়। বেলা দেড়টায় ফ্লাইট। কাতার এয়ারওয়েজের একটি প্লেন আমাদেরকে নিয়ে উড়ে যাবে মদীনায়। এখান থেকে মদীনার দূরত্ব প্রায় এক হাজার মাইল। তবুও যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না।

আর কতক্ষণ পর মদীনার আলো বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবো- সেই সৌভাগ্যময় মুহুর্তটির অপেক্ষায় অস্থির হয়ে আছি আমি। আমাদের কাফেলার সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। ১০ জন ছাত্র এবং বাকী ৫ জন আমাদের আবাসিক ক্যাম্পাস কর্মকর্তা। ছাত্রদের মধ্যে এশীয় ৩ জন, আফ্রিকার ৪ জন এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরবীয় ৩ জন। পুরো সফরের মেয়াদ মাত্র ৭ দিন।

প্রথম ৩ দিন মদীনায় এবং তারপর বাকী দিনগুলো মক্কায়। শনিবারে যাত্রা শুরু হল এবং আগামী শুক্রবার মক্কার মসজিদে হারামে জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এর সমাপ্তি। প্রায় আড়াই ঘন্টা প্লেনটি আকাশে উড়ল। বিকেল চারটা। সূর্যের আলো এখন যাই যাই করছে।

সন্ধ্যা নামছে। আমরা তখন মদীনার বিমানবন্দরে। ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হতে হতে আরও প্রায় পৌনে এক ঘন্টা। আমি এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে চারপাশের দিকে তাকিয়ে আছি। এই তো সেই মদীনা- কোটি কোটি মুমিন মুসলমানের আবেগ ও ভালোবাসার এই তো তীর্থস্থান।

কি স্নিগ্ধ ও মায়াময় এর পরিবেশ। রোদের উত্তাপ নেই, বাতাসের ঝাপটা নেই, প্রকৃতিও যেন এখানে অবনত। এক নিরব চাদরে আমাকে ঢেকে দিল মদীনার প্রথম প্রহর। মদীনার বিমানবন্দরে প্রায় সবাই বাংলাদেশী কুলি। ওদের কাজ হুড়মুড় করে যাত্রীদের লাগেজ ট্রলিতে ভরে তাকে স্ক্যানার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া।

তাদের হাঁক ডাকে মদীনার শান্ত কিন্তু ছোট বিমানবন্দরটি সদরঘাট হয়ে উঠছিল। আমি ভেবেছিলাম, মদীনার মেহমানদেরকে সমাদর করার জন্যই বুঝি বাংলাদেশী শ্রমিকদের এত তোড়জোড়। নবীর অতিথিদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে হয়তো এভাবেই বলে দেয়া আছে। আমার এ আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো তাদের দুঃখের গল্প শুনে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একনাগাড়ে যাত্রীদের লাগেজ আর ব্যাগপত্র টানতে হয় ওদের।

কুলিদের মতোই হাত পেতে পেতে যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫, ২০ কিংবা ২৫ রিয়াল আদায় করতে হয়। কারণ কোম্পানীর কর্তাকে সারাদিন বাবদ জমা দিতে হবে ১১০ রিয়াল। বাদবাকী যা থাকবে তা নিজের। এই ১১০ রিয়াল উঠিয়ে নিজের জন্য কিছু রাখতে হলে এমন হাউকাউ আর চেঁচামেচি করে লাগেজ টানাটানি এবং অতঃপর হাত পাতা ছাড়া তাদের গতি নেই। কারণ অধিকাংশ যাত্রী নিজের ব্যাগ নিজেই হাতে করে নিয়ে যেতে চান।

তারা খুঁজে খুঁজে মহিলা ও বৃদ্ধ যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ট্রলিতে করে পার করে দেয়। তারপর গেট পার হওয়ার পর বখশিশের জন্য হাত পেতে অনুনয় বিনয়। এসব দেখে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত মদীনাগামী যাত্রীরা বাংলাদেশী কুলিদেরকে লোভী ও ঠগবাজ ভাবলেও তারা তো আর জানেন না যে দিনশেষে ১১০ রিয়ালের জমা জমে আছে এ অসহায় লোকটির ঘাড়ে। তাকে তো এভাবেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এর ফাঁকে তাদের কিছু ছবি তুলে নিলাম।

তারপর আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসে গিয়ে উঠলাম। বাস রওয়ানা হচ্ছে মসজিদে নববী লাগোয়া দিয়ার ইন্টারন্যাশনাল হোটেল উদ্দেশে। মদীনায় থাকাকালীন এ হোটেলই আমাদের আবাসস্থল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।