আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁপা হাতে জীবনের প্রথম অটোগ্রাফ:মোয়া-পাপড় এর এলোমেলো আড্ডা:অনুভূতিটুকু এক কথায় প্রকাশ করতে চাই: আফসোস! ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ ঠিক মত পড়ি নাই!

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

কাঁপা হাতে জীবনের প্রথম অটোগ্রাফ:মোয়া-পাপড় এর এলোমেলো আড্ডা:অনুভূতিটুকু এক কথায় প্রকাশ করতে চাই: আফসোস! ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ ঠিক মত পড়ি নাই! ভাল কি মন্দ তা জানিনা, তবে অভিমান হলো আমার খুবই স্বভাবজাত বৈশিষ্ট । ছোট্ট একটা ঘটনা বলেই ফেলি । খুবই ছোট বেলায়, ঈদের দিনে নতুন জামা পড়ে নানীর সাথে দেখা করতে গেলাম। নানী ওই সময় আরো কয়েকজনকে খানা-দানা পরিবেশনে ব্যস্ত থাকায় আমার দিকে মনোযোগ দেয়ার ফুরসৎ পাচ্ছিলেননা । আমি ব্যাপারটা একটুক্ষণ দেখে দুপদাপ পা ফেলে আম্মার কাছে গিয়ে গাল ফুলিয়ে প্রচন্ড অভিমানে অভিযোগ পেশ করলাম।

পরে পুরো ঘটনা শুনে তো আমার নানীর চোখ কপালে । এরকম আরো কিছু ঘটনা আছে সুযোগ পেলে বলব কখনো । কয়লা ধুলে ময়লা যায়না আর অভিমানীর মানও কমেনা ! শুরুতে আগ্রহ থাকলেও সামহোয়্যার এর সাথে কিনবা আশেপাশের আরো কোন ঘটনায় অভিমানী হয়ে অপর বাস্তবে লেখা দেয়ার আগ্রহ উবে গিয়েছিল । আমি মোটামুটি এই ধারণাতেই বদ্ধমূল ছিলাম আমার কোন লেখা যাচ্ছেনা । এই রকম ধারণার একটা "কারণ" ছিল অবশ্য ।

কিন্তু সেদিন অপর বাস্তবে প্রকাশিত লেখার লিস্টে নিজের নাম দেখে প্রথমেই চমকে গেলাম । সেই "কারণ" এর উপর মুহূর্তেই রাগ হলো। তবে যেহেতু ছাপানো হয়ে গেছে তাই উচ্চবাচ্য করার মানে নেই ভেবে রাগটা সামলে নিলাম। মোড়ক উন্মোচন এ থাকবো কিনা এরকম দোলাচলে দুলতে দুলতে একটা লোভনীয় অনুভূতি তৈরী হলো ; আমার লেখা ব্লগের পাতা থেকে বই এর পাতায় !!! শেষ পর্যন্ত বিকালে বাংলা একাডেমী বইমেলা চত্বরে কোন রকম ভিড়-ভাট্টা ছাড়াই পৌছে গেলাম। একে একে ব্লগাররা জড়ো হতে লাগল লিটিল ম্যাগ কর্ণারে।

স্টলে সাজানো কালো প্রচ্ছদের অপর বাস্তব এর উপর চোখ আটকে গেল । শুরু হলো আমাদের "নিজেদের" বই কেনাকাটার পালা। ওদিকে জমায়েত কম-বেশী আশাব্যঞ্জক হওয়ায় আমরা "মোদের গরব" ভাস্কর্য্যের সামনে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম । আমরা বলতে - কৌশিক, মুজিব মেহদী, মাছরাঙা (আমার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ, উদাআআর দেয়া খেতাবটাই খুব যায়- মিস রাঙামাটি ২০০৮), প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব (এই নিক টাইপ করতে আমার খুব পরিশ্রম হলো), জামাল ভাস্কর, রাগ ইমন (আপাদমস্তক বাংলার রমনী সেজে), অন্য মনস্ক শরত (সরলতার সুযোগ নিয়ে... থুক্কু আমাকে সদয় হওয়ার সুযোগ দিয়ে নিজে নির্দয়ের মত এক প‌্যাকেট ফ্রি পাওয়া তেঁতুল আচার সাবড়ে দিল), উদাসী স্বপ্ন, যীশু (আমার একটা টি-শার্ট চাইইই...শরত এরটার মত কিন্তুক ...) কালপুরুষ এবং আমি । মোড়ক উন্মোচন কিভাবে হবে তা নিয়ে একটু দোটানায় পরা গেল; শেষে বাদামী রঙের প্যাকেটের ভেতর থেকে বার করে আনা হলো কৃষ্ণকায়, চিকন, ছিমছাম, একহারা গড়নের অপর বাস্তব ।

গোল হয়ে থাকা ব্লগাররা একে একে উৎসুক জনতাদের উঁকি-ঝুঁকির মাঝ দিয়ে নিজের অনুভূতি, প্রত্যাশা আর টুকটাক, স্বভাবজাত খুঁনসুটি প্রকাশ করল। একটা হালকা খানা-পিনা না হলে ঘটনাটা পরিপূর্ণতা পাচ্ছিলনা। তাই আমাদের ব্লগ বাহিনী সরে আসল বাংলা একাডেমী ক্যান্টিন এর সামনে। সবাই এক কাপ নেসক্যাফে হাতে নিজেকে জাগিয়ে তুললো । সুন্দরী মেয়ে দেখলে ছেলেরা যেমন চোখ স্থির রাখতে পারেনা তেমনি সামনে-আশেপাশে ফুচকা-চটপটির প্লেটের নড়াচড়া দেখে আমাদের জিভ সংবরণ করা মুশকিশ হয়ে গেল ! অতএব ফুচকা এবং খাজুরে গল্প পর্ব চলতে থাকল।

এর মাঝে যোগ দিল মোস্তফা মনির সৌরভ (দেখলেই বিশিষ্ট ভদ্র ছেলে মনে হয়, আমার ইউনিভার্সিটির বলে শুনেছিলাম তাই ডেকেই কথা বললাম) । ঠান্ডা লেগে এবং ধুলার কারণে আমার অবস্থা বেশ কাহিল ছিল। রাগ ইমন এর মাঝে আইসক্রিম সেধে বলে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হবে। গ্রুপ ব্লগিং এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেল ; আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে বই মেলা যে যার মত ঘুরে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । আবু সালেহ্ এর বেশ স্বল্প উপস্থিতির কথা যোগ করতে ভুলে গিয়েছিলাম্; উনার পরিচয় জেনে আমি নিজের পরিচয় দিতেই বলে বসলেন - "দেখেই চিনেছি" !!!!! এর মাঝে নাঈম ফোন দিয়ে আমাদের অবস্থান জেনে নিল ।

একটুক্ষণ পরেই নাঈম এর আগমন এবং সাথে আরেকজন হালকা স্বাস্থবান ব্যক্তি খুব রহস্য করে নিজের পরিচয় না দিয়ে পাল্টা আমাদেরকেই বুঝে নিতে বলল। আমরা সবাই সাফল্যের সাথে সেই কুইজ প্রতিযোগীতা পাস করলাম । ইনি আর কেউ নন, বেচারা ! সাইফুর -সে কচ্ছপ গতিতে চিটাগাং থেকে আমাদের সাথে দেখা করতে বইমেলা এসেছে । শামীম আসলো অবশেষে; আমি রেডিও ফূর্তিতে ওর বইমেলা আপডেটটা প্রায়ই শুনি। ও আসা মাত্রই "আর.জে অপু" -কে দেখব বলে আব্দার জুড়ে দিলাম ।

শামীম বড়ই চটপটে; ঠিক ঠিকই রেডিও ফূর্তির স্টলের একটু সামনে ভক্ত বেষ্টিত "আর.জে অপু" কে খুঁজে অটোগ্রাফ নিয়ে দিল !!!!!! সাইফুরের (সাইফুর আবার ঢাকা চিনেনা ঠিক মত) বড় ভাইকে নিয়ে মহা সমস্যা হলো; উনি একটু পরপরই এমনভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছিলেন যে "একজন বড় ভাই হারানো গিয়াছে... " এই মর্মে তথ্যকেন্দ্রে হারানো বিজ্ঞপ্তিই দেয়া লাগতো হয়ত। তবে সময়টাকে কাজে লাগানো গেল অভিনব উপায়ে। রাগ ইমনকে দিয়েই শুরু হলো ; অটোগ্রাফ দেয়া-নেয়ার পালা !!! আমি জীবনের প্রথম অটোগ্রাফ দিলাম মোট চারজনকে !!! শুরু করলাম নাঈমকে দিয়ে (আমার আসলেই হাত কাঁপছিল), শেষ করলাম উদাসী স্বপ্নকে দিয়ে। মাঝে সাইফুরকে নিয়ে অটোগ্রাফ হিসেবে চার লাইনের ঝটপট ছন্দ ফেঁদে বসলাম। খেয়াল করলাম আমার হাতের লেখা কি পরিমান বাজে !!! আমাদের বই কেনাকাটার পর্ব যখন শেষ পর্যায়ে তখন জয়িতা যোগ দিল ।

সাইফুর ততক্ষনে বিদায় নিয়েছে; কারণ তার আবার কচ্ছপ গতিতে চট্টগ্রাম ফিরে যেতে হবে। আমরা (জয়িতা, শামীম, উদাআআ, নাঈম আর আমি) ভাবলাম বাইরে কোথাও গিয়ে বসা যায় কিনা । বইমেলা থেকে বের হয়ে আমরা যখন হাঁটছিলাম, আমার চোখ আটকে গেল ডান দিকে এক সারিতে দন্ডায়মান বিশাল বিশাল (আসলেই বি-শা-ল ) সাতটি গাছের দিকে। হালকা আলো পড়েছে গাছের চুড়ায়। আমি অনেকটাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম ।

উদাসীকে বললাম ছবি নিতে (উদাআআআ ...ছবিগুলো কই ???)। রাতের বেলা, হালকা মোহনীয় আলোতে , এক সারিতে সাতটি দীর্ঘ গাছ ; আমি একটা নামই দিয়ে ফেললাম এই দৃশ্যের - অপর বাস্তব !!! সবাই হো হো করে হেসে উঠল ... ব্যাপারটা আমার কাছে খুব উপভোগ্য ছিল; আমি কখনই অপরাজেয় বাংলা চত্বরে বসি নাই (কোন ভাব নিচ্ছি না কিন্তু ...)! আমরা সবাই গোল হয়ে বসে মোয়াওয়ালাকে ডাকলাম । মোয়াওলায়া একদিকে চিড়ার মোয়ার ঝোলা, আরেকদিকে মুড়ির মোয়ার ঝোলা নিয়ে সামনে এলো। চিড়ার মোয়াকে আমরা সবাই "মাইনাস" দিলাম এবং মুড়ির ঢাউস সাইজের মোয়া কুড়মুড় করে খাওয়া শুরু করলাম । মোয়া শেষে ঝালমুড়ি পর্ব (আব্দার করতেই শামীম আবার কাগজ ভাঁজ করে আমার জন্য কাগুজে চামচ বানিয়ে দিল ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য)।

জয়িতার আবার পাপড় ভাজা খাওয়ার শখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল; আমরা উঠলাম পাপড়ভাজা খোঁজার জন্য। আমার মনে হলো আমি আশেপাশের কোন কোনায় পাপাড়ভাজাওয়ালাকে দেখেছিলাম; কিন্তু সেই কোনাটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না ; এটা নিয়ে সবাই মিলে কোনঠাসা করার আগেই উদাসী পাপাড়ভাজা খুঁজে পেল বলে রক্ষে। পূর্ণিমার চাঁদের মত একেকটা মচমচে পাপড়ভাজা খেতে খেতে (পাপড়ের দাম কে দিল সেটা খেয়াল করি নাই ...) আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম । আমাদের হাসি-ঠাট্টা, খোঁচাখুঁচি যেভাবে চলছিল তাতে মনে হচ্ছিল এই আড্ডাটা ভেঙে ফিরে যেতে কারো মনই চাইছেনা। তবে আমার অবস্থা একটু কাহিল ছিল; সেটা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল।

অগ্যতা আমরা আমাদের বেহিসাবী, অগোছালো, এলোমেলো আড্ডাতে আপাতত একটা বিরাম চিহ্ন বসানোর সিদ্ধান্ত নিলাম । --- মাঝে মাঝে নিজের শব্দ ভান্ডারকে খুবই দুর্বল মনে হয় । আমি একটা, শুধু একটাই শব্দ খুঁজছি যা দিয়ে অপর বাস্তবের মোড়ক উন্মোচন থেকে শুরু করে পাপড়ভাজা খাওয়া পর্যন্ত আড্ডাটার প্রতিটা মুহূর্তকে ব্যাখ্যা করা যায় । কি বলা যায় ? চমৎকার , অসাধারণ, অভূতপূর্ব নাকি awesome, amazing !!! কেউ কি সাহায্য করবেন ?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।