বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
আমি সাধারণত বিটিভি দেখি না। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেবেন এবং দশম সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন, এমন খবরে আমি সাড়ে সাতটায় রিমোট চেপে বিটিভি অন করি। সেকি? আবাহনী-মোহামেডান লাইভ খেলা দেখাচ্ছে বিটিভি। সাতটা একত্রিশ, সাতটা বত্রিশ, সাতটা তেত্রিশ কোনো খবর নেই। মোহামেডানের একজন খেলোয়ার বদল হল।
সাতটা চৌত্রিশ, খেলা সরে গেল, উদয় হলেন একজন মহিলা ঘোষিকা, ভারী হাসিখুশি। ঘোষণা করলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ টেলিভিশনের পর্দায় উদয় হলেন। ওনার ডানপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, বামপাশে নির্বাচন কমিশনের পতাকা। একটু পরপর ওনার চেয়ারটা দুল খাচ্ছে! পরে বুঝলাম ওটা রিভলবিং চেয়ার।
কিন্তু জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় ওনার এই চেয়ার দোলানো টা মোটেও শোভন ছিল না। যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো সাংবিধানিবভাবে বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন, ওনার পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল না। ছোট্ট একটা ফ্রেমে সংসদ ভবনের একটা ছবি ছিল। তাহলে জনাব কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় কি সংবিধান লংঘন করেন নি? একজন সাংবিধানিক পোষ্টের ব্যক্তি প্রকাশ্যে সংবিধান লংঘন করেছেন, তিনি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
জনাব কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ-এর জাতির উদ্দেশ্য ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন আগেই রেকর্ড করেছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এডিটিং মান যে এতো দুর্বল আমি ভাবতেও পারিনা। ঘুরে ঘুরে একই বক্তব্য বারবার আসছিল। যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ এডিট করেছেন, আমার ধারণা, তিনি এটা ইচ্ছে করেই এভাবে করেছেন। কারণ, আমরা জানি শস্যের ভেতর অনেক ভূত থাকে! গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ বিটিভিতে যিনি এডিট করেছিলেন, তিনি কোন দলের লোক? এটা কি এখন বিটিভি'র মহাপরিচালক জনাব ম. হামিদ খুলে বলবেন কি ঘটেছিল সেখানে? একজন সাংবিধানিক পোস্টের ব্যক্তির জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ কেন এতো দুর্বল এডিটিং থাকবে? জনাব ম. হামিদ কি ওই ভাষণের সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান নিজে দেখেছিলেন?
দশম সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ।
দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সেই সঙ্গে সারা দেশে আগুন, গাড়ি ভাঙচুর, হামলা, জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছে তারা। ৪৮ ঘণ্টার অবরোধও ডেকেছে। দশম সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে দেশ এখন অনিবার্য সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য কারা দায়ী? অবশ্যই আমাদের প্রধান দুই দলের রাজনীতিবিদরা দায়ী। আপনারা কিভাবে মধু খাবেন, কিভাবে দেশের সম্পদ লুটপাট করবেন, সেই লুটপাটের কথিত রায়ের জন্য ডাকা নির্বাচনের জন্য কেন আমাদের মত আমজনতার দুর্ভোগ পোহাতে হবে? আমরা সারাদিন সংবিধানের এতো দোহাই শুনি, আর জাতির সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ ও বিটিভি'র মহাপরিচালক ম. হামিদ সংবিধান লংঘন করলেন, এটার কোনো বিচার হবে না? তাহলে কি সংবিধান লংঘন করলে আসলে কিছুই হয় না, এসব কথার কথা!!!
নির্বাচনে কোন দল গেল, কোন দল গেল না, সেটা সেই দলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপার স্যাপার।
ক্ষমতা যদি না পাওয়া যায়, নির্বাচনে গিয়ে নাক-খপতা দিতে রাজী নয় বিএনপি! কিন্তু তাই বলে আপনারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন? গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে একজন রিক্সাওয়ালা মারা গেলেন। তিনি জানেন না কে ক্ষমতায় গেলে তার কতো লাভ হয়? সারা দেশের নানা জায়গায় অনেক গাড়ি পুড়লো। যে গরিব সিএনজি চালক পেটের তাগিদে রাস্তায় সিএনজি নিয়ে বের হয়েছিল, তার কি দোষ? ক্ষমতা সে কতোটুকু ভোগ করবে? কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আসল কথা জনতার সামনে আপনাদের মুখোশ খুলে গেছে।
নির্বাচন আসলে লোক দেখানো।
ক্ষমতা আর সম্পদ লুণ্ঠনই আসল কথা। রাজনীতির মুখোশের আড়ালে টাকা বানানোর সহজ রাস্তা হল ক্ষমতা। সে কাজে কিছু মেরুদণ্ডহীন লোক সব সময় রাজনীতির মুখোশধারীদের সহায়তা করার জন্য এক পায়ে খাঁড়া থাকে। জনাব কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ ও ম. হামিদ সেরকম দু'জন মেরুদণ্ডহীন সুবিধাভোগী। ক্ষমতা, লোভ আর টাকার কাছে মানুষের বিবেক আজ নষ্ট হয়ে গেছে।
আইন শুধু গরিবদের জন্য প্রযোজ্য!!! এই দেশ স্বাধীন করেছিল আমাদের পূর্বসুরীরা নয় মাস যুদ্ধ করে!!! মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন তার ভেতরে একটি সাইকোলজিক্যাল সমস্যা হয়। দেখবেন তখন তার শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গ একটু অস্বাভাবিক আচরণ করে। চোখে চোখ রেখে মানুষ মিথ্যা বলতে গেলেই এটা ধরা পড়ে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকেই মানুষের এই দোষ চেনা যায়। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চেয়ার দুলানি আর বিটিভি'র দুর্বল এডিটিং দেখে আবারো মনে হল, দশম সাধারণ নির্বাচনের এই কথিত তফসিল ঘোসণার মাধ্যমে দেশ একটি অনিবার্য সংঘাতের কাছে আত্মসমর্পণ করলো!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।