আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিডনী-চাংগি-জিয়া ২ (একটি গল্প লেখার অপচেস্টা)

mahbub-sumon.com

সিংগাপুরের চাংগিকে সবসময়ই ভালো লাগে নাফিজের কাছে। সব কিছু সাজানো, কি দারুন পরিস্কার, মানুষগুলো যেনো সব রোবট। দীর্ঘক্ষণ সিগারেটের নেশাকে চেপে রাখা অবদমিত কামের মতোই চেপে রাখা। চাংগিতে আগেও বেশ কবার আসাতে স্মোকিং রুম নাফিজের কাছে বেশ পরিচিত। একটা সিগারেট ধরাতে গিয়েই আবিস্কার করে সাথে লাইটার নেই।

সিডনীতে চেক করার সময় জিপ্পুটা ওরা রেখে দিয়েছে। আশে পাশে তাকিয়ে একজনের কাছে লাইটার চাইতেও সে বলে উঠলো " ভাইজান কি বাংলাদেশী? " নাফিজ ভাবছে তার চেহারাতেও কি ভাত ভাত লেখা রয়েছে ! মনে হয়। সব বাঙালীই একরকম দেখতে। " আমি রাজিব, কোরিয়া থেইকা আসছি" বলে হাসলো পাশের লোকটি। "আমি নাফিজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসছি" বলে নাফিজ হাসলো একটু।

"ভাই, কি ইস্টুডেন্ট? " "হুঁ" বলে নাফিজ, তার ভাবনায় এখনো তার হবু বধু। তাছাড়া অপরিচিত কারো সাথে এভাবে কথা বলতে সে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না। "আমি ৮ বছর পর দেশে যাচ্ছি ভাই, বাপ-মাকে অনেক দিন দেখি নাই, ফোনে কি শখ পূরণ হয় কন ? " এক নিশ্বাঃসে বলে যায় রাজিব। নাফিজ শুনছে। "দেশে গিয়া একটা ব্যবসা শুরু করুম ভাই, ছোট ভাইরে টাকা পাঠাইছি অনেক, সেই টাকা দিয়ে হাটে একটা তেলের মিল দিমু, আর একটা ট্রলার কিনুম মাছ ধরার।

" একজন উদ‌্যোগী লোক মনে হচ্ছে ! হবু শিল্পপতি। নাফিজ ভাবছে। "চলেন ভাই একটু ঘুইরা দেখি এয়ারপোর্ট ! দ্যাখছেন কি সুন্দর, আমগো ঢাকা এয়ারপোর্টে যদি এরম সুন্দর হইতো । " বলেই রাজিব দাঁড়িয়ে নাফিজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নাফিজ কি যেনো ভেবে হাঁটা শুরু করলো রাজিবের সাথে।

" বুঝছেন ভাই, আমি ইন্টার পাশ করে দ্যাশ ছাড়ছি, আর পড়াশুনা করবার পারি নাই" নাফিজ শুনছে, ভালোই লাগছে, একজন সংগ্রামী মানুষের জীবন গল্প। "ভাই, আপনার কত টাকা পান অস্ট্রেলিয়ায় কাম কইরা" রাজিবের প্রশ্নে অবাক হয় না নাফিজ। এরকম প্রশ্ন অস্ট্রেলিয়ায় ও অনেকেই বলে। এরা বুঝতেই চায় না কারো বেতনের কথা জানতে চাওয়াটা অভব্যতা। " এই পাই আর কি " বলে উঠে নাফিজ।

" আপনারা অনেক টাকা বেতন পান জানি , খরচা পাতি বাদ দিয়া আমি মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাই দেশে, একটাকাও রাখি না সাথে" রাজিব বলে উঠে। "হুঁ" বলে নাফিজ। কথায় কথায় হুঁ বলা একটা বজে অভ্যাস গড়ে উঠেছে নাফিজের। কাটাতে হবে এটা। "গ্রামের বাড়ীটা পাকা করতে হবে, বুড়া বাপ মা কস্ট করে" রাজিবের এ কথায় নাফিজ ভাবছে তার কথা।

বাড়ীর মর্টগেজের টাকার ইন্টারেস্ট বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, কিভাবে যে সব কিছু সামলাবে সে। দেশে বাবা-মা ভাড়া বাসায় থাকে, ভাড়ার টাকা অবশ্য নাফিজই দেয়। নাফিজ কতবার বলেছে বাবা মাকে ঢাকায় কস্ট না করে গ্রামের বাড়ীতে চলে যেতে। গ্রামের বাড়ীটা অনেক পুরোনো হলেও খালি পরে আছে। একটু সারাই করলেই হবে।

মাসে মাসে গাদা খানেক টাকা আর পাঠাতে হবে না নাফিজকে। "ভাই কি বিয়া করছেন ? " একটু চমকে যায় নাফিজ। "নাহ, এখনো করি নাই। বিয়ে করার জন্যই দেশে যাচ্ছি" বলে অনেকক্ষন পর একটু হাসলো নাফিজ। বাবা-মার পছন্দ করা মেয়ে।

বিক্রমপুরের বিশাল বড়লোকের ছোট মেয়ে। মা অবশ্য রাজি ছিলেন না। বাবা পছন্দের উপরে মা কিছু বলতে পারেন না। মেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে সবে। অল্প বয়সী মেয়েই ভালো।

গরে-পিঠে নেয়া যায়। বউকে সাথে নিয়ে আসার ইচ্ছে নাফিজের। ইচ্ছে হলে বউ অস্ট্রেলিয়ায় পড়বে, সাথে সাথে কাজও করবে, নাফিজের অনেক সাহায্য হবে অবশ্য এতে। আচ্ছা , নাফিজ কি পরিবর্ততিত হয়েছে? সেতো এরকমটি ছিলো না আগে ! আজকাল কি বৈষয়ীক সে। " আমি অবশ্য বিয়া করি নাই , দ্যাশেই যাই নাই বিয়া করুম ক্যামনে।

তবে কোরিয়ায় এক ভিয়েতনামী মেয়ের লগে লিভ টুগেদার করছি । " রাজিবের এ কথায় একটু অবাক হয় নাফিজ। আশ্চর্য সরলতো ও সৎ এই ছেলেটি। নাফিজ ভাবছে কি কেনা যায়। শেষ মেষ এক প্যাকেট মার্লবোরো লাইট কিনলো ছোট মামার জন্য।

রাজিব কিছুই কিনছে না। " ভাই, কিছুই কিনুম না। সব টাকা দেশে নিয়া যামু। দ্যাশের কাজে লাগবো এই সব টাকা"। "চলেন, এক কাপ কফি খাই , প্লেন ছাড়ার বেশী বাকি নেই" "নাহ ভাই, এই খানে অনেক টাকা লাগে কফি খাইতে" রাজিবের কথায় অবাক হয় একটু নাফিজ।

"আরে চলেন। আর কয়টাই বা টাকা" বলে নাফিজ রাজিবকে নিয়ে এক ছোট্র কফি শপের নিরিনিলি কোণে বসে। কিভাবে যে আড়াই ঘন্টা কেটে গেলো নাফিজ বুজতেই পারছে না। সংগী থাকলে মনে হয় সময় দৌড়ুয়। "চলেন, সামনে আগাই" বলে রাজিবকে তাড়া দেয়।

বুঝতে পারছে লোকটি একটু হতভম্ব হয়ে গিয়েছে চাংগির ঝকঝকে অবস্থায়। ডিস্প্লেতে গেট নাম্বার দেখে নিয়ে তারা দুজন এগুতে থাকে সামনে। ৫২ নাম্বার গেট। প্রায় ১ কিলোমিটারতো হবেই। অনলাইনে চেক ইন করায় তেমন সমস্য হলো না।

রাজিবকে অবশ্য লাইনে দাড়িয়ে অনেক সময় নিয়ে বোর্ডিং পাস নিতে হলো। দুজনের দু জায়গায় সিট পড়েছে। সিকিউরিটি চেকে সমস্যা হলো না তেমন। এটা কি নাফিজের নীল পাসপোর্টের জন্য? হায়রে পারপোর্ট। সবুজ পাসপোর্ট হলে কতই না ভ্রু-কুচি সহ্য করতে হয়।

একটু পর এনাউন্স, বোর্ডিং। সামনে এগুতেই রাজিব একটু থেমে বলে উঠে " ভাইজান ভালো থাকবেন" "আর,আর আরেকটি কথা " " আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি" চোখের কোণে অশ্ররু আভাস। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রাজিব বলে উঠেছে। নাফিজ অপেক্ষায় আছে রাজিবের কথা শেষ হবার অপেক্ষায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।