আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নে আঁকা নকশী কাঁথা



শীতের তীব্রতা কখনও বাড়ছে কখনও কমছে। লেপের বদলে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে হচ্ছে প্রতিদিন। এটা একটা নকশী কাঁথা। কাঁথা মুড়ি দিয়ে আমি স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাই। আমার দাদী ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী।

বেগম রোকেয়ার পরবর্তী প্রজন্মের এই মহিলা বাংলা পড়তে পারতেন, অন্যদেরকে শুনাতেনও। রাতে আমাদেরকে কোলে নিয়ে অনেক গল্প শুনাতেন তিনি। আর দিনের বেলায় সেলাইতে মগ্ন হয়ে পড়তেন। ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন একমনে সেলাই করতেন নকশী কাঁথা। তার সেই নকশী কাঁথায় থাকত ফুল, পাখী, গাছ ইত্যাদি।

একটি সাজানো সংসারের সবকিছুই তিনি ফুটিয়ে তুলতেন সুন্দরভাবে। তার মনের গহীনে যে স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল তার সবকিছুই তিনি নকশী কাঁথায় তুলে ধরেন। আমার দাদীর প্রথম তিন সন্তান খুব অল্প বয়সে মারা যান। এর পর জন্ম নেয় আরো তিন সন্তান। আমার দুই ফুপু এবং আমার পিতা।

আমার পিতার তিন বছরে আমার দাদা ভারতের কেরালায় চাকরিস্থলে মারা যান। মাত্র ৮-৯ বছরে সংসার জীবনে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। সেই ব্রিটিশ আমলে তিনটি শিশু নিয়ে তিনি অকাল দরিয়ায় পরেন। আমার বাপ-ফুপুরা এতিম হয়ে পড়েন। তবুও দাদীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মাতৃস্নেহের ছায়ায় সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে তারা বেড়ে উঠেন।

কাঁথায় একটি বাড়ীর চিত্র। পাশে কিছু ছোট বড় গাছ। গাছের উপর পাখি। একটি ছোট পুকুর আকার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। জায়গা হয়নি।

তার স্বপ্নের যে বাড়ী তিনি বিয়ের সময় কল্পনাতে ধারন করেছিলেন তাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এই নকশী কাঁথায়। বাড়ীর দরজাটিও তিনি নকশা করেছিলেন। ফুলগাছটা ছিল অসমাপ্ত পুকুরের পাড়ে। এটা কার বাড়ী জিজ্ঞাসা করতে তিনি বলতেন আমার নাত বউয়ের। আমাদের খুব ছোটবেলায় তিনি দোয়া করতেন যেন সুন্দরী নাত-বউ দেখে যেতে পারেন।

আমরা লজ্জা পেতাম। চাকরির জন্য যখন ঢাকায় আসি তখন আমার মা আমার জন্য আরেকটি কাঁথা পাঠান। আবার সেই স্বপ্ন। আবার সেই সুইঁয়ের আগায় জীবনকে চেনার দৃশ্য। আবার সেই স্বপ্ন দেখা।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বপ্নের রূপান্তর। বিনি সুতোর মালায় দুই জীবন এক হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু সুই-সুতোর কারুকার্যে জীবনের মধুর স্বপ্নগুলো ধারন করার এ প্রক্রিয়া সত্যিই কতনা মধুর। শিল্প-সাহিত্যের এই বিকাশমান সমাজে আমাদের পূর্বসূরীদের শিল্প-রসবোধ আমরা উপলব্দি করিনা। কিন্তু জীবনের মধুর স্বপ্নগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়া আমাদের বাঙ্গালী সমাজের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

নকশী কাঁথায় আমরা স্বপ্ন দেখি- 'তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধিব গহীন বালুচরে.....'।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।