আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাতানো খেলা

ক্রিকেটে পাতানো খেলা নিয়ে কিছুদিন আগে ভারতে একজন গ্রেফতার হয়েছেন। আমাদের দেশেও হচ্ছে, এমন একটা রটনার মৃদু চেষ্টাও হল। ওদিকে পাকিস্তানের তিনজন তো সাজা ভোগ করছে। ফুটবলেও মাঝে মাঝে শোনা যায়। রেফারী, খেলোয়াড় অভিযুক্তও হচ্ছে হরহামেশা।

এতো গেল এক ধরনের খেলা যেখানে প্রতিযোগিতা মূল কথা। তাই পাতানো খেলা এখানে অন্যায়। আবার পৃথিবীর অনেক খেলাই আছে যেখানে পাতানো খেলায় শাস্তি হয় না। কখনও দর্শকরা জানে যে খেলাটা পাতানো, তারপরও হা করে সেসব খেলা দেখে। আমাদের দেশেও একটা খেলায় পাতানো খেলার প্রচলন আছে।

প্রচুর দর্শক উৎকণ্ঠা নিয়ে সে খেলা দেখে। যদিও জানে খেলাটা পাতানো, তারপরও দেখে। আর যেহেতু খেলা পাতানোর অভিযোগে কোন শাস্তি হয় না, তাই এই পাতানো খেলার বিরুদ্ধে কোন ইনভেস্টিগেশানও হয় না। অপরাধী ধরার তো প্রশ্নই ওঠে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? এখুনি বিশ্বাস হবে।

খেলাটার নাম বললেই। বলব? বেশ তবে শুনুন। খেলাটার নাম হচ্ছে ‘রাজনীতি’। এই খেলায় আরও অনেক মজার মশলা থাকে। যদিও সামনে থাকেন রাজনীতিবিদরা তা হলেও খেলটা শুধু রাজনীতিবিদরা খেলেন না, এখানে পুলিশ, উকিল, সাংবাদিক, পত্রিকা, টিভি, সুশীল সমাজ সবাই মিলে খেলাটা খেলেন।

খেলাটা আকর্ষণীয় করতে এঁরা সাহায্য করেন। আমরা দর্শকরা যেন খেলার মারপ্যাচ বুঝতে শিখি, খেলার আকর্ষণ যেন বজায় থাকে সেজন্য সুশীল সমাজ, কলামিস্ট, সাংবাদিকরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তাঁরা খুব নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করেন এমন না, কখনও ভুল বোঝান কখনও কোন দলকে জেতানোর চেষ্টা করেন। খেলাটা আমি যে খুব ভালো বুঝি তা না। তবে খেলাটায় একটা নতুনত্ব যোগ হলে বোধহয় খারাপ হয় না।

খেলাটায় বেটিং কিংবা ফিক্সিং যোগ করলে কেমন হয়। ধরুন আগামী শনিবার হরতাল হবে কি না, এ নিয়ে বেটিং করলে? সবাই বলবেন না। বাজী ধরলে সবাই ‘না’ তেই বাজী ধরবেন। এই সুযোগে জুয়াড়িরা নেমে পড়বে ‘ফিক্সিং’ করতে। পরিণাম হবে একটি ‘হরতাল’, তাও আবার শনিবারে।

যারা ‘শনিবারে হরতাল হবে’ তে বাজী ধরেছিল এক লহমায় বড়লোক হয়ে যাবে। জমে উঠবে মজার এই খেলা। খুব হর হামেশা যে খেলাটা দেখা যাবে, তা হচ্ছে ‘হরতাল’ খেলা। শুক্রবার আসলেই শুরু হয়ে যাবে ‘প্রেডিকশান’ এর খেলা। ‘রবিবারে হরতাল ডাকবে কি না’।

বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন অ্যানালাইসিস করবেন। বিভিন্ন ভাবে কেউ কেউ বোঝাবেন ‘হরতাল ডাকা উচিৎ’, কিংবা ‘হরতাল হবেই’। কেউ বলবেন ‘প্রশ্নই ওঠে না’। কার কথা শুনবেন? কার কথা বিশ্বাস করবেন? কোন দিকে বাজি ধরবেন? যদিও এখনও সেভাবে ‘জুয়া’ শুরু হয় নি। তবে খুব শিগগিরই শুরু হয়ে যাবে।

‘এই রবিবার হরতাল হবে’ এ জুয়ার রেট ১ এ ১০। অর্থাৎ যদি হরতাল হবে তে বেট করেন আর হরতাল হয়ে যায় তবে ১ টাকায় পাবেন ১০ টাকা। খেলাটা পপুলারিটি পেলে তখন আরও অনেক ভ্যারাইটি যোগ হবে। ‘জামায়াত হরতাল ডাকলে বিএনপি সমর্থন দিবে কি না’, এ নিয়েও জুয়া হতে পারে। বেটিং এ রেট বেড়ে গেলে শুরু হবে ‘ফিক্সিং’।

‘বিএনপি’ সমর্থন দিবে—তে বেটিং ১ এ ১০০০ হয়ে গেলে তখন হয়তো ফিক্সিং শুরু হবে। বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করা হবে, এবারের টায় অন্ততঃ সমর্থন দিয়েন না। তাই ঘটলে যারা ‘সমর্থন দিবে’ তে টাকা খাটিয়েছিল তাঁরা হেরে যাবে। ফিক্সিং এর তথ্যটা জানবে খুব কাছের কিছু মানুষ। আর যারা জানবে তাঁরা এক ঝটকায় কোটিপতি।

দেখা মিলবে এমন এক জামায়াতের হরতালের যেখানে বিএনপি সমর্থন দিবে না। আরও অনেক ভাবে বেটিং করা যেতে পারে। এবারের হরতালে ‘লাশ পড়বে কি না’, ‘জয়নাল সাহেবকে লাঠিপেটা করা হবে কি না’ ‘বড় কোন নেতা আটক হবে কি না’ ‘হলে জামিন হবে কি না’। এসব ঘটনা ফিক্স করতে গেলে আবার সরকারী দলের লোকজন কে হাত করতে হবে। অতি সহজ একটা কাজ।

সামনে ইলেকশান, তাই মুখ হা করে সবাই বসে আছে, কখন প্রসাদ জুটে। পুলিশ যদিও সরকারী নির্দেশে চলে তারপরও এই শেষ সময়ে কথা নাও শুনতে পারে। তাই খুব সিওর হওয়ার জন্য পুলিশকেও ফিক্স করা জরুরী। খরচ একটু বেশী পড়বে এই যা। ‘নীতি নির্ধারণ’ জাতীয় কোন ব্যাপারেও বেটিং হতে পারে।

‘সরকারী দল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ এর দাবী মানবে কি না’, ‘বিএনপি এই অন্তর্বর্তী সরকারের ফর্মুলা মেনে নির্বাচন করবে কি না’, ‘সরকার প্রধান কে হবে’। এ ধরনের বেটিং এ শুধু যে রাজনীতিবিদদেরকেই কিনতে হবে তা না, সুশীল সমাজ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিক, টিভি চ্যানেলের মালিক সবাইকেই ফিক্স করতে হবে। বিশাল বাজেট নিয়ে নামতে হবে। তবে আয় খুব খারাপ হবে না। যেমন এই মুহূর্তে যদি বাজি ধরা হয় ‘শেখ হাসিনাকে নির্বাচন কালীন সরকার প্রধান হিসেবে বিএনপি মানবে কি না’ কোন দিকে বাজি ধরবেন? আর যদি সেই বাজী ফিক্স করা হয় তবে ভেবে দেখুন।

সেই জুয়াড়িরা কত আয় করবে। ‘তারেক ম্যানেজমেন্ট বেটিং’ দিয়ে এই খেলা শুরু করলে কেমন হয়? আগামী কিছুদিন তো এই নিয়ে খেলা চলবেই। সাংবাদিক সম্মেলন আর হরতাল তো হবেই। সুশীল সমাজ, আইনজ্ঞ, টক শো কোথায় থাকবে না এই টপিক। কি হতে পারে, আইন কি বলে, এসব ব্যাপারে আমাদের দর্শকদের রীতিমত বিশেষজ্ঞ করে তোলা হবে।

আমাদের নতুন অর্জিত এই জ্ঞানের ওপর ভর করে আমরা যদি বাজি ধরতে চাই? আমাদের একটা সুযোগ অন্ততঃ দেয়া উচিৎ। ‘তারেক ফিরলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না। ‘ এই বেটিং এ সবাই ‘না’ এ বাজী ধরবে। আর ‘হ্যাঁ’ এ বাজি পড়বে হয়তো ১ এ এক লাখ। ফলাফল ফিক্স হলে? আপনার এক টাকা এক লহমায় হয়ে যাবে এক লাখ।

আমরা দর্শকরা বেটিং করি আর নাই করি তাঁদের নিজেদের মধ্যে দর কষাকষির রেওয়াজ বহু পুরনো। এরশাদ সাহেবকে নিয়ে তো প্রায়ই হয়। তারেক কে নিয়েও শুরু হয়ে গেছে। ‘তাঁকে ফিরতে দেয়ার রেট কত?’ কিংবা ‘কি কি শর্ত মানলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না’। এসব তথ্য অবশ্য সবার জন্য না।

খুব কাছের কিছু লোকজনকে জানানো হবে। কিছু বুদ্ধিজীবি আর পত্রিকার সম্পাদক কেও হয়তো। তাঁদের কাজ কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন জাতের তত্ত্ব দিয়ে সামনে ঘটতে যাওয়া সেই ঘটনাকে জায়েজ করা। আমরা দর্শকরা দেখবো ‘টক শো’, সাক্ষাৎকার, প্রেস ব্রিফিং। কলাম পড়ে বোঝার চেষ্টা করবো কি হতে যাচ্ছে।

কোন সাংবাদিকের রিপোর্ট ঠিক, কোন বুদ্ধিজীবীর প্রেডিকশান বেশী মিলে যায়। তারপর তো আর কোন কাজ নাই। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক একটা বেটিং বা জুয়া শুরু হলে তবু করার জন্য একটা কাজ পেতাম। তখন আমরা ধরতাম বাজী। জিতে গেলে আনন্দে লাফাতাম আর বলতাম ‘বলেছিলাম না তারেক কে গ্রেফতার করার সাহস নাই সরকারের’।

কখনই জানতে চাইতাম না এই গ্রেফতার না করার পেছনে কি পাতানো খেলা চলেছে। ভেতরে কি খেলা হচ্ছে তা হয়তো আমরা কখনই জানতে পারবো না। ‘কিসের বিনিময়ে হরতাল প্রত্যাহার হল’ কিংবা ‘তারেকের প্যারল এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কেন সরকার কিংবা দুদক কোন পদক্ষেপ নেয় নি’ বা ‘মন্ত্রী কিভাবে জানলেন বিচারক ইন্টারপোলের ব্যাপারটায় অনুমুতি দেবেন’। আমরা তো তা জানতে চাইও না। আপনারা আপনাদের পাতানো খেলা খেলতে থাকুন।

আমাদেরকে শুধু বেটিং করতে দিন। আমরা আসলে এই ‘প্রেডিকশান’ খেলা খেলতেই আমরা আনন্দ পাই। ভেবে নিই আমরা সব বুঝি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.