আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের পোষাক-আশাক বিষয়ক কিছু ঘটনা।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
টিভিতে দেখাচ্ছে - একজন কৃষিকর্তা একটা জমির পাশে দাড়িয়ে কৃষকের সাথে কথা বলছে। কৃষক অর্ধেক পা বের করে লুংগি পড়া আর একটা পাতলা শার্ট - মাথায় গামছা প্যাচানো। আর কৃষিকর্তা চকচকে জুতার উপর সুট-টাই। মাথার চুল পরিপাটি করে আচড়ানো। খবর পাঠক বলছে - সরকারের নির্দেশে সকল কৃষিকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করছেন।

একজন কৃষিকর্তা - যার কাজ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন - তাকে সুটে-বুটেট দেখে খটকা লাগলো। এরা কি বাংলাদেশের কৃষিকর্তা - নাকি জাতিসংঘের থেকে আসা? এই দৃশ্য যখন দেখছি - তখন কয়েকটা অতীতের ঘটনা মনে পড়ে যায়। আপনাদের সাথে দুই একটা ভাগাভাগি করলে হয়তো মজা পেতেও পারেন। (১) আমাদের অফিসের এক কর্মচারী কাজের সময় আহত হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। খবরটা শুনে আমাদের বড়কর্তা বললেন - চল যাই দেখা করে আসি।

মানে অফিসিয়াল দর্শন আরকি? গাড়ীতে উঠার সময় বস হঠাত থেমে গিয়ে বললেন - কোট টা পড়া উচিত ছিল মনে হয়। দারোয়ানরা যে বেয়াদপ - ওরা মানুষ চিনে না। আমি বললাম - অসুবিধা নেই - চলেন তো দেখা যাবে। যথারীতি ইর্মাজেন্সী গেটে আমি দারোয়ানকে টপকে ভিতরে ঢুকে গেলাম। গাড়ীতে বসকে যে টিপস দিয়েছিলাম - উনি সম্ভবত সেটা ভুলে গিয়েছিলেন।

অসহায়ের মতো উনি গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছেন। ফিরে গিয়ে দারোয়ানকে একটা ছোট ভয় দেখালাম উনার পদবীর কথা বলে - দারোয়ান ছেড়ে দিলো। বস বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন - বাসা থেকে কোট টা পড়ে আসলেই হতো। তোমার কথা আর মুনবো না। আমি অবাক হয়ে বললাম - স্যার, এটাতো জৈষ্ঠ্য মাস! (২) আমাদের ক্লাশের এক ছাত্র এপেন্ডিক্সের অপরেশনের জন্যে মেডিকেলে ভর্তি।

এক স্যার ক্যাম্পাসের বাইরে রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন। বিকেল বেলা আমার কয়জন যাচ্ছি সেই বন্ধুকে দেখতে। স্যার জানতে চাইলেন আমরা ওকে দেখতে মেডিকেলে যাচ্ছি কিনা। উনি আমাদের সাথে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। সিগারেট পানে ব্যাঘাত হবে - তারপরও সিনিয়র টিচার - বললাম - স্যার, চলেন।

সেটা সম্ভবত গরম কাল। আমরা সবাই স্যান্ডেল আর হালকা পোশাক পড়া। কিন্তু স্যার সুটেট বুটেট। হাটতে গিয়ে ঘামছিলেন। জানতে চাইলাম - স্যার, গরমের মধ্যে এইরকম স্যুট পড়ে আছেন কেন? অসুবিধা হচ্ছে না? স্যার বললেন - জানোনা মেডিকেলের দারওয়ানরা কি বেয়াদপ, ঘন্টার পর ঘন্টার দাড় করিয়ে রাখবে।

ভাল কাপড়-চোপড় দেখলে ভয়ে সুরসুর করে ছেড়ে দেবে। বুঝলাম, স্যার দারোয়ানকে ভয় দেখানোর জন্যে গরমেও স্যুট পড়ে কষ্ট করছেন। আমরা সাধারনত ইন্টার্নী ডাক্তাররা যে গেট দিয়ে ঢুকে সেটা দিয়ে ঢুকতাম। আমারদের বয়স আর হাঁটার ভঙ্গীর কারনেই হয়তো দারোয়ান পথ পরিষ্কার করে দিতো। কিন্তু স্যারকে কেন যেন আটকে দিলো।

আমরা গল্পের কারনে অনেক দুরে চলে গিয়ে হঠাত লক্ষ্য করলাম স্যার নেই। তাকিয়ে দেখি স্যার বাইরে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। যাই হোক - আমাদের মধ্যে থেকে একজন গিয়ে স্যারকে নিয়ে এলো। আমরা সবাই লজ্জিত এবং দুঃখিত হলাম। সব শুনে স্যার বললেন - আমার ভুল হয়ে গেছে, কোট পিনটা ভুলে রেখে এসেছি।

কোট পিনের মনোগ্রামটা দেখলে বেটা নিশ্চয় ভয় পেত। আমরা সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। (৩) অফিসের পিকনিক। স্পট গাজীপুরের শালবন। হরতালের জন্যে পিকনিকের দিন পিছিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারিত হলো।

পিকনিকের দিন দেখি বস'রা প্রায় সবাই সুটেট বুটে হয়ে বাসে উঠছেন। একজনের কাছে সবিনয়ে জানতে চাইলাম - স্যার, দিনের তাপমাত্রা কিন্তু অনেক বেড়ে যায়, জানেন তো? উনি হেসে একটু কৌতুক করে বললেন - বিয়ে করেননি তো, করলে স্যুট পড়া লাগতো। ঘটনাটা পরে পুরোপুরি খোলসা হলো উনার বিস্তারিত বিবরনের বরাত দিয়ে। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজের প্রায় সবাই বিয়েতে শ্বশুর পক্ষ থেকে দামী স্যুট পায়। সেই স্যুট পড়ার জন্যে সময় সময় গিন্নীদের থেকে তাড়া থাকে।

দুপুরে দেখা গেল বসেরা প্রথম কোট, পরে জুতা খুলে গাছের ছায়ায় বসে হাপাচ্ছে। আমার মতো কয়জন সাধারন পোষাক পড়া লোক পিকনিকের কাজে ব্যস্ত থেকেছি। নাসিরউদ্দিন হোজ্জার পোষাক সংক্রান্ত সেই বিখ্যাত গল্পটি আজও জীবিত?
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.