আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামই বিজয়ী হলো... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

ইসলামের আলো ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছিল মক্কায়। জাহিলিয়াতের অন্ধকার ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছিল। অন্যায়, অসত্য এবং পাপাচার কেটে যেতে লাগল। কাফেরদের সামনে নেমে এল ঘোর অন্ধকার।

কাফেররা ইসলামের আলোকে সহ্য করতে পারল না। কাফের ও মোশরেকদের মনে কাঁপন ধরে গেল। ইসলামের জাগরণে তারা বিচলিত হয়ে পড়ল। তাই শুরু হল ষড়যন্ত্র। ইসলামকে রোধ করতে কাফের ও মোশরেকরা ফন্দি আঁটল।

একদিন তারা এক পরামর্শ সভা ডাকল। সভায় অনেক আলোচনা করা হল। পরামর্শ শোনা হল সবার। অবশেষে নবী মুহাম্মদকে (সা) হত্যা করার সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু এত বড় দায়িত্ব পালন করার সাহস কেউ করল না।

কুরাইশদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বীর উমর ইবনুল খাত্তাব। তিনি নবীকে হত্যার ঘোষণা দিলেন। এ খবর মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। তাই তারা সতর্ক হয়ে উঠল। উমর নাংগা তলোয়ার হাতে তুলে নিলেন, তারপর ছুটে চললেন তীর বেগে।

উত্তেজনায় তিনি প্রায় দিশেহারা। পথিমধ্যে নয়ীম ইবনে আবদুল্লাহর সাথে তার দেখা হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, উমর ভাল তো? কোথায় যাচ্ছ ভাই? উমর ক্ষিপ্রভাবে জবাব দিলেন, 'যাচ্ছি মুহাম্মদের মস্তক দ্বিখণ্ডিত করতে। এ লোক আমাদের মূর্তিগুলোকে অস্বীকার করছে। মুহাম্মদ বাপ-দাদার ধর্মকেও অস্বীকার করছে।

সে এক খোদার ধর্ম প্রচার করছে। ' নয়ীম উমরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। তারপর তাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, 'হে উমর, তুমি মিছেমিছি মুহাম্মদের মস্তক নিতে যাচ্ছ। আগে নিজের ঘর সামলাও। অপরের চিন্তা পরে করো।

' উমর চমকে উঠলেন। সে কি! ঘরে আবার কি হল? তার দু’চোখে বিষ্ময়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'নয়ীম! কি হয়েছে বলত? আমার ঘরে আবার কি হল, তুমি খুলে বল। ' 'কেন? তুমি জান না! তোমার বোন ও ভগ্নিপতি মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছে' নয়ীম জবাব দিল। একথা শুনে উমর বিচলিত হয়ে পড়লেন।

বোন ও ভগ্নিপতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে? আচ্ছা, 'দেখাচ্ছি মজা। ' উমর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গেলেন বোনের বাড়ীতে। ঘরের দরজায় পা রাখতেই ভেতরে আওয়াজ শুনতে পেলেন। উমর দরজায় ধাক্কা দিলেন। বোন ও ভগ্নিপতি ঘটনা বুঝতে পারলেন।

কোরআন শরীফ লুকিয়ে রেখে দরজা খুলে দিলেন তারা। উমর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি পড়ছিলে? আমার নিকট গোপন করে লাভ নেই, আমি সব শুনেছি। তোমরা মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছ? একথা বলেই ভগ্নিপতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন উমর। তাকে বেদম প্রহার করা হল। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে বোনও রক্তাক্ত হল।

উমর বোনকে মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ করতে চাপ দিলেন। বোনের কণ্ঠে ঈমানের দৃঢ়তা। সে বলল, 'তুমি যদি মেরেও ফেল তাও আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করব না। ' বোনের কথাগুলো উমরের মনে আলোড়ন তুলল। উমর তাৎক্ষণিকভাবে থেমে গেলেন।

বোনের রক্ত মাখা দেহ ও মুখে ঈমানের বলিষ্ঠতা উমরকে নাড়া দিল। বোনের অশ্রুসজল মুখের দিকে তাকাতেই উমরের হৃদয় কেঁপে উঠল। তাঁর মন বিগলিত হয়ে গেল। উমর আর স্থির থাকতে পারলেন না। এবার বোনকে অনুচ্ছস্বরে বললেন, 'তোমরা যা পড়ছিলে তা কি আমাকে দেখাবে?' বোন উমরকে অজু করে আসতে বললেন।

উমর অজু করে এলেন। তারপর বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাব কোরআনের পৃষ্ঠা উলটিয়ে দিলেন উমরের সামনে। তিনি কোরআন পড়তে লাগলেন। সূরা হাদীদের এক থেকে ছয় আয়াত পর্যন্ত পড়লেন উমর। এ অপূর্ব সুন্দর আয়াতগুলোর মর্মবাণী তার হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

তার বুক ফেটে অশ্রু বেরিয়ে এল। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি এবার দৌঁড়ে গেলেন নবীজির নিকট। নবীজীকে সব খুলে বললেন। তারপর নবীর (সা) হাতে হাত রেখে ইসলাম কবুল করলেন।

উমর মুসলমান হলেন। নবীর (সা) মাথা কাটতে গিয়ে উমর এখন মুসলমান। কি বিষ্ময়কর ব্যাপার? আল্লাহর সে কি মহিমা! উমর ইসলাম কবুল করেছেন। তাই চারিদিকে রব পড়ে গেল। কাফেররা এতে বিষ্মিত হল।

তারা ভয়ও পেল। মুসলমানরা আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাল। সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন মহানবী (সা)।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.