আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বস্তুটি খাটি হোক, যাতে মোড়ক গুরুত্বপূর্ণ না হয়... আর বস্তু খারাপ হলে সেটা স্বীকার করার সাহস থাকুক... নিপাত যাক ভণ্ডামি

নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। মানুষ প্রবৃত্তির হাতের খেলনা মাত্র। মানুষ যাই ভাবে... যেভাবেই ভাবে, হয়ত তার ধারনা সে স্বাধীন ভাবে নতুন কিছু ভাবছে ... আসলে কিন্তু তা নয়... অদৃশ্য এক সীমারেখায় মানুষ পরাধীন হয়ে আছে আগেই। প্রবৃত্তির সীমারেখা অতিক্রম্য কিনা জানা নেই। মানুষ তার প্রবৃত্তি গুলো পূরণের চেষ্টা করতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে যে কাজটি করা হবে সেটায় যদি অন্য কারো অধিকার সংরক্ষিত না হয়... তখন দরকার হয় প্রবৃত্তি গুলো দমন ও নিয়ন্ত্রন করার। নৈতিকতা, শিক্ষা, সামাজিকীকরণ, ধর্ম বিষয় গুলোর উৎপত্তি ও বিকাশ এসব প্রেক্ষাপটেই হয়। ক্ষুধা দমন করা মানুষের প্রবৃত্তি... কিন্তু তাই বলে তো মানুষ অন্যের খাবার কেড়ে খাবে না... চুরি করবে না। যৌন সুখ অর্জন মানুষের প্রবৃত্তি... তাই বলে তো মানুষ যাকে তাকে খুশি ধর্ষণ করবে না। অনুমতি ছাড়া কারো উপর চড়াও হবে না।

ফ্রয়েডের তত্ত্ব আমাদের এরকম কিছু ব্যাপারেই ধারনা দেয়... ছেলেতে মেয়েতে বন্ধুত্ব... প্রেম... ভাইবোন পাতানো... যে যতই দাবী করার চেষ্টা করুক তারা ‘পবিত্র’ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে... আমি সেটা নিয়ে মন্তব্য করবো না... আমি শুধু বুঝি তারা প্রবৃত্তি অনুমোদিত কাজটিই কেবল করে চলেছে। একটা মেয়ে আর একটা ছেলেতে ‘নিষ্পাপ’ বন্ধুত্ব সম্ভব না। আমি যেমন এটা মনে করি... আরও অনেকেই মনে করে। এমনকি বেশ কিছু আক্রমণাত্মক নারীবাদী লেখক-লেখিকার মতটাও এমনই। অনেকে স্বীকার করে না বা করবে না... তাতে কিছু যায় আসে না।

আমার কথা হলো বন্ধুত্ব- প্রেম- ভাই বোন পাতানো এগুলোর মধ্যে স্বীকৃত (ওপেন সিক্রেট টাইপ) সম্পর্ক হতে পারে প্রেম (ধর্ম সাপোর্ট করে না... সেটাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। ) প্রেম কে স্বীকৃত বলতে চাইছি এই সেন্সে যে প্রেমের গন্তব্য বিয়ে। আর বিয়ে হলো সমাজ স্বীকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর উপায়। প্রেমে পড়া মানুষ কখনো অস্বীকার করবে না যে তারা একে অপরের যৌন সান্নিধ্য কামনা করে না। হয়ত তারা বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করে সামাজিক বা ধর্মীয় নিয়মের প্রতি সম্মান রেখে।

কিন্তু বন্ধুত্ব! আজকালকার ছেলেপেলের দিকে তাকালেই দেখি মেয়ে বিহীন ছেলেদের সার্কেল কম... বা ছেলেবিহীন মেয়ে সার্কেল কম। এরা সবাই কি নির্মোহ ‘পবিত্র’ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে! আর একটা ছেলে একটা মেয়ের গায়ে হাত না দিলেই কি ব্যাপারটা পবিত্র হয়ে গেল! এমনিতেই একটা মানুষ কে স্বতঃস্ফূর্ত প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টায় থাকতে হচ্ছে... এই অবস্থায় অবিবেচকের মত ঘনিষ্ঠতা সেই চেষ্টায় ব্যাঘাত তো ঘটাচ্ছেই উলটো প্ররোচিতও করতে পারে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্বের দরকার আছে। সেটা শারীরিক বা মানসিক যেই বিবেচনাতেই হোক। পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে যে কোন মানুষের সাথেই সুন্দর, সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা যায়।

আর যদি তারা এক সাথে মিশতেই চায়... পরস্পরের সঙ্গ উপভোগ করতেই চায়... তাহলে তারা যাতে অন্তত নিজেরদের সম্পর্কটাকে ‘পবিত্র’ বা ‘ভাইবোনের মত’ বলার মত ভণ্ডামির পরিচয় না দেয়। ভাই বোনের সম্পর্ক জগতের সব চেয়ে বিশুদ্ধ সুন্দর সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটা। কিছু সস্তা মানুষের সস্তা কাজের জন্য এই সম্পর্ক তা যাতে অপমানিত না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ‘ভাই বোন’ কোন ব্র্যান্ড না... যেটা দিয়ে একটা ভণ্ডামি ঢেকে ফেলা যাবে। আশেপাশে শুনি একে অন্যকে একেবারে ধর্মের ভাই/বোন বানায় ফেলে... আমি তো আজ পর্যন্ত দেখলাম না কোন ছেলে ছেলেকে ধর্মের ভাই বানাইসে না মেয়ে মেয়েকে ধর্মের বোন বানাইসে... কেন? সম্ভবত মানুষ এইখানে ধর্ম টাকে ব্র্যান্ড বানাইতে চাইসে... ভাই, ধর্মও তো ব্র্যান্ড না।

অনেকেই লেখার বা তত্ত্বের সাথে একমত হবেন না... সেটার দরকারও নেই। তবে দ্বিমত পোষণের আগে নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন... আপনি কি আপনার প্রবৃত্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাজ গুলো করছেন না... শিওর? একটা মেয়ে বা ছেলে যখন বন্ধুত্ব করে তখন বন্ধুটির লিঙ্গ পরিচয় কি ১০০% তাৎপর্যহীন? শিওর? উপরের একটি লাইন তবে আবার মনে করিয়ে দেই... “মানুষ প্রবৃত্তির হাতের খেলনা মাত্র। মানুষ যাই ভাবে... যেভাবেই ভাবে, হয়ত তার ধারনা সে স্বাধীন ভাবে নতুন কিছু ভাবছে ... আসলে কিন্তু তা নয়... অদৃশ্য এক সীমারেখায় মানুষ পরাধীন হয়ে আছে আগেই। ” এই ধরনের পোস্টে সুযোগ পেয়ে প্রগতিশীলতার বানী ঝাড়ার আগে স্ট্যাটাস তা বুঝে নিলে ভালো হয়। প্রেম কে জাস্টিফাই করা হয় নাই।

পোস্টে তাদের কথা বলা হয় নি, যারা একটা সুন্দর সম্পর্ক বা বন্ধুত্বের মধ্যে থাকেন। বলা হয়েছে যারা ‘বন্ধুত্ব’, ‘ভাই বোন’ শব্দ গুলোকে মোড়ক হিসাবে ব্যাবহারের মাধ্যমে যারা শব্দ ও সম্পর্ক গুলোকে অসম্মানিত করেন। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।