আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বছর ঘুরে আবার এল ঈদুল আযহা(আমার ঈদ)

জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।

বছর ঘুরে আবার এল ঈদুল আযহা ।

যাকে আমরা কুরবানীর ঈদ বলি। ঈদ মানেই আনন্দ। ছোট বেলায় কুরবানীর ঈদকে ঘিরে অন্যরকম এক আনন্দ থাকত। বিশেষ করে গরু কেনা কে ঘিরে। ঈদের ২-১ দিন আগে থেকেই ভাবতাম কখন গরু কিনব।

কত বড় গরু কিনব। তাই আব্বুকে অস্থির করে দিতাম। গরুর বাজার বা হাট গুলোতে যাওয়া আমি খুব এনজয় করতাম। তারপর রাস্তায় মানুষ জিজ্ঞাসা করে -"কি ভাই গরুটা কত দিয়ে কিনলেন?"আমি মাঝে মাঝে দাম বাড়িয়ে বলতাম। মানুষ জন চোখ কপালে তুলে বলে "এই বাছুরডার এত দাম?"নানা মানুষের নানান মত।

কেউ বলে আপনে জিতছেন। কেউ বলে ঠকছেন। আমার কাছে তাদের মন্তব্য গুলো বেশ ইন্টারেস্টিইং মনে হত। যেমন একবার এক লোক বলছিল আরেক জনকে(যিনি গরুর ক্রেতা) গরু তো না যেন বাছুর কিনছেন। আরেক বার মনে পড়ে ,সেবার গরুর খুব দাম পড়েছিল।

তো আমাদের বাসার সামনে এক আংকেল একটা গুরু কিনে নিয়ে এসেছেন। গরুটা সাইজে একটু ছোট ছিল। তাই দেখে পাশের বাসার আংকেল ঐ আংকেল কে বলছেন,"ভাইসাবের খাসীডা তো মাশাল্লা সুন্দর হইছে। কত দিয়া কিনলেন?কোন হাট থাইকা কিনছেন?"এইটা শুনে তো সেই আংকেল চরম বিব্রত হলেন। আংকেলের মুখ চোয়ালে ঝুলে পড়ল।

সে এক দেখার মত দৃশ্য। আবার মাঝে মাঝে গরুর হাটে কিছু হাতির মত গরু দেখা যায়। যাদের ক্রেতারা তাদের সব গুলো দাঁত বের করে গরুর সাথে ছবি তুলতে চান। আরেকবার গরু কিনে আসছিলাম আমি আর আমার ভাইয়া । আমাদের সাথে ছিল এক রাখাল বালক।

হটাৎ তার হাত থেকে গরু ছুটে গেল। গরুটা বেশ রাগী ছিল। যাকে পাচ্ছে তার দিকেই শিং নিয়ে তেড়ে আসছে। আশ পাশের মানুষ জন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্যই আমার দুঃখ পাওয়া উচিৎ ছিল।

তখন ছোট ছিলাম তাই কিনা যানি না, মনে মনে চাচ্ছিলাম গরুটা যেন না ধরা পড়ে। তবে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি লোকমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে আমাকে হতাশ করে সবাই মিলে গরুটা ধরে ফেলল। আমাদের পাশের বাসার মতি আঙ্কেলকে যখন কে গরু তাড়া করছিল বেচার লাফ দিয়ে পুকুরে পড়ল। আমি খুবই মর্মাহত হবার চেষ্টা করছিলাম আর প্রাণ প্রণে হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করছিলাম। সব সময়ই কুরবানীর ঈদকে ঘিরে একটা বাড়তি উত্তেজনা কাজ করত আমার মনে।

গরু কিনে আনার পর তাকে খাওয়ানো,গোসল করানোর সব কিছুর মাঝেই যেন একটা অন্য রকম মজা পেতাম। ঈদের দিন যখন সেই গরুটাকেই জবাই দিতে হত আসলেই তখন মনটা অনেক খারাপ হয়ে যেত। নামাজ পড়ার পরই শুরু হয় গরু জবাই করা। তারপর গরু কাটা কাটি। মাংস ভাগা-ভাগি।

এই জিনিসটা কেন যেন আমি খুব উতসাহ নিয়ে করতে পারতাম না। তারপর সবার বাসায় মাংস নিয়ে যাওয়া। এই কাজটা অবশ্য খুব আগ্রহ নিয়ে করতাম। এই ঈদে সমস্ত দিনটাই ব্যায় হয় গরু-ছাগলের পিছনে,তাই ঈদের দিনে ঘুরা ঘুরি আমার অনেক কম হয়। বলতে গেলে হয়ই না।

ঈদের এই আমেজ আমাদের বাসায় কিছুদিন থাকে,ঈদের পর মামার-খালার বাড়িতে দাওয়াত থাকে প্রায় প্রতি দিন। আত্মীয় সজনদের বাসায় বেড়ান হয়। সব কিছু মিলিয়ে বেশ মজায় ঈদের দিন কাটে। এবারের ঈদটা আমার জন্য একটু অন্য রকম হবে। গত কুরবানীর ঈদের সময় আমার প্রিয় বন্ধু রানা মারা যায়।

রানা ঈদের পরদিন বাড়ি গিয়েছিল। রানা সাঁতার ভাল জানত না। তারপরও সে পুকুরে নেমেছিল গোসল করার জন্য। এভাবেই পানিতে ডুবে রানা মারা যায়। আমার ঈদের দিনের পুরোটা সময় ঘিরেই রানা থাকতো।

এবার ঈদে হয়তো রানা আকাশ থেকে আমাকে দেখবে। বড় সার্থপরের মত সে এবার একা একা ঈদ করবে। আর মুচকি মুচকি হাসবে। রানা তোকে আমি অনেক মিস করব রে এবার। তুই ভাল থাকিস।

সবাইকে ঈদ মোবারক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।