আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কন্সপিরেসীতে নিমগ্ন রাজনৈতিক বাহন...(তিন)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

কন্সপিরেসী নিয়া কথা কইতে গেলে আসলে নিজের অভিজ্ঞতার কথা কইতেই ভালো লাগে...তাই জাতীয় রাজনীতির থেইকা একলাফে জাহাঙ্গীরনগর জীবনে চইলা গেছিলাম...সেইটা অনেকেরই মনে হয় চোখে লাগলো। কিন্তু এই স্মৃতিকাতরতা ঠেকাইয়া রাখনটা খুব কঠিন মনে হয়। আর সেই স্মৃতিকাতরতা থেইকাই আমার মনে পড়ে ধর্মপ্রাণ বাবারে কেমন খেপতে দেখছিলাম জেনারেল জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে, যে সে তৎকালীন জনতার ক্ষোভরে ব্যবহার করতেছিলেন নিজের জনপ্রিয়তা অর্জনে! আর সেই সুযোগে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনীতিবিদগো পুনর্বাসনটাও করতেছিলেন। জনতা খেপলো আওয়ামি স্বেচ্ছাচারিতায়, দুর্ভিক্ষ পরবর্তী কালে সঠিক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে...এই ক্ষোভরে জিয়া মিলাইয়া দিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার সাথে। যেই কারনে তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হইলো শাহ আজিজুর রহমান, যে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি।

তার সাথে তিনি সহযোগী করলেন তাবৎ ক্ষমতাকাঙ্খী আওয়ামি নেতাগো। যারা কন্সপিরেসীর একটা পর্যায়ে ধরা পইড়া যাওনে শেখ মুজিবর সাহেবের বিরাগভাজন হইছিলো। রাজনৈতিক অভিলাষ বিষয়টা খুব যন্ত্রণার...জেনারেল জিয়ার যেমন সেইটা পরিপূর্ণ মাত্রায় ছিলো, রাষ্ট্রপতি জিয়া সেইটারে আরো জটিল করলেন স্বতোপ্রনোদিত হইয়া। তিনি ঐ সময়ে একটা ঘোষণা দিছিলেন শোনা যায়,"আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট"। এই ডিফিকাল্ট অবস্থাটা উনি বাস্তবিকই তৈরী করলেন...শেখ মুজিবর রহমান সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করছিলেন এই অযুহাতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিরে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করনের পদক্ষেপ নিলেন।

যার ফলশ্রুতিতেই দীর্ঘসময় পরে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়া গোলাম আযম ফিরলেন বাংলাদেশে। ৭৭'এও যেই লোক দেশের স্বাধীনতা বিরোধী আন্তর্জাতিক কন্সপিরেসীতে রত ছিলেন, সেই লোক দেশে আসলেন রাজনৈতিক দল পুনর্গঠনে। বাকশাল বিরোধী মধ্যবিত্ত বাঙালীর মনোযোগ আকর্ষণে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিরে সংহত হওনের দ্বার উন্মুক্ত করলেন...নিজের দলের ভিতরে তাগো আশ্রয় দিলেন। তার এই কন্সপিরেসী তত্ত্ব কিরম ফলপ্রসু ছিলো সেইটা আমরা টের পাই তার মৃত্যুর পর। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গায়েবী জানাজাতেও লোকবল ছিলো বেশ ভালো।

পূর্ববর্তী নতজানু অর্থনৈতিক নীতিমালা...মুখাপেক্ষী আন্তর্জাতিক পলিসি...বাজার অর্থনীতির নামে দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা সব ধারাবাহিক থাকা সত্ত্বেও তার জনপ্রিয়তা মাত্র ৪ বছরে তিনি বাড়াইতে পারছিলেন, কেবল তার গোয়েন্দাকৌশল, ধর্মের ব্যবহার আর ভারত জুজু'র থিওরী এস্টাবলিশ করনের মধ্য দিয়া। আরেকটা অস্ত্র ছিলো তার...মাজহার কাক্কু জাসদ রাজনীতি করতেন ঢাকা কলেজ থেইকাই...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বড় নেতা। ৭৯তে জিয়াউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেন তখন তারা জুতার মালা ছুইড়া তারে সম্বর্ধনাও জানাইছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে সকল মামলা জীবন প্রাপ্ত হইলো, নতুন মামলা হইলো, আর ঐ মাসেরই শেষ সপ্তাহে তিনি দলবল নিয়া জিয়াউর রহমানের কার্যালয়ে ফুলের মালা দিয়া জাতীয়তাবাদী শক্তির ছায়াতলে যুক্ত হইলেন। ছাত্র রাজনীতি সেই হতাশার সময়ে পুরাটাই হিরোইক যুগ কাটাইতেছে।

বিবেচনায় আদর্শ কিম্বা পরিবর্তনের তাগীদের চাইতে হ্যান্ডসামনেস, বক্তৃতাবাজী আর উপস্থিত স্মার্টনেস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠতেছিলো রাজনীতিতে। সেই সুযোগটাও নিলেন জিয়াউর রহমান...আমার মেজকাক্কুর নেতৃত্ত্বে একদল ছাত্র নেতা ঢাবিতে জাতীয়তাবাদী আদর্শের নামে মাথার উপরে ঝুইলা থাকা মামলা থেইকা বাঁচলো... রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে আমার ফজল মামাও মারা গেলেন...জিয়াউর রহমান সাহেবের প্রধান নিরাপত্তা অফিসার হইলেও তিনি ছুটিতে ছিলেন ঐ সময়ে...আর্মি চীফ আর প্রেসিডেন্টের বিশেষ অনুরোধে তিনি ছুটি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম গেছিলেন...পরিণতিতে মৃত্যুবরণ। এই হত্যাকান্ডের পর আমরা জানতে পারি মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সংশ্লিষ্টতার খবর। কিন্তু ফজল মামা নাকি তার খুব পছন্দের লোক ছিলেন...এইসব জানতে জানতেই আমাগো সামনে চইলা আসে সাত্তার সাহেবের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীসভা...


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।