আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোলবালিশ অথবা জীবনের গল্প (অনুগল্প-১)

আসলে সব মানুষই বন্দী থাকে এক আকাশ সীমানায়

মুরাদ আজ সারাদিন টেলিফোনের পাশে বসে আছে একটা কল পাবার আশায়। কলটা তার বউ নাজমার। সে সম্প্রতি মুরাদকে অনেক দোষে দুষ্ট করে তার বাপের বাড়ি গিয়ে উঠেছে। তাদের চার বছরের বিবাহিত জীবনে এটাই তাদের বিচ্ছেদের প্রথম বিশেষ দিন। আজ তাদের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী।

এবং মুরাদ নাজমাকে অসম্ভব ভালবাসে। নাজমাও যে মুরাদকে ভালবাসে না এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে না। কারণ না ভালবেসে পূর্ণ মনোযোগের সাথে চার বছর সংসার করা যায় না। অবশ্য খুব যে ভালবাসে এ কথাও জোড় গলায় কেউ বলতে পারবে না। মোদ্দাকথা নাজমাকে ঠিক মত চেনা যায়নি।

শুধু এইটুকু বলা যায় সে আর সবার মত না। এক একটি মেয়ের প্রবাল্য এক এক রকম। কেউ সাংসারিক, কেউ স্বাধীনচেতা, কেউ বন্ধুবrসল, কেউ স্বামীকেন্দ্রিক। নাজমা মাতৃ্সুলভ। প্রবল তার মাতৃক্ষুধা।

বিয়ের শুরু থেকেই তার সকল চিন্তা কাল্পনিক একটি ছোট শিশুকে ঘিরে। স্বামী নয় সংসার নয় তার একটা সন্তান চাই। কিন্তু প্রকৃতি এমন পরিবেশেই খেলতে ভালবাসে। তাদের পরিবারে তাই কোন শিশু নেই। মুরাদ এই দোষে দুষ্ট।

নাজমা এখন তাই বাপের বাড়ি। কিন্তু মুরাদ নাজমাকে অসম্ভব ভালবাসে। আর তাই সারাদিন তার ফোনের আশায় বসে আছে। কিন্তু নাজমার ফোন আর এলো না। এসেছে দূরের আত্মীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা, যারা আনেক কিছুই জানে না।

আত্মীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা মুরাদকে কাuটার মত বিuধছে। রাতে না খেয়ে যখন সে বিছানায় ঠিক তখন নিজেকে তার ভিষণ নিসংগ, একাকী আর জড় মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ঘড়িটাও তার চেয়ে প্রানবন্ত। সে টিক টিক করে বাজতে পারে। ঠিক তখন তার মনে পড়ে যায় তার প্রিয় কোল বালিশটার কথা।

যেটা আগে তার বিছানায় থাকত। যখন নাজমার সাথে তার বিয়ের কথা হচ্ছিল তখন এটাকে নাজমা বানিয়ে কত কথা বলত! কিন্তু নাজমা বাস্তবে তার জীবনে আসার পর কোল বালিশটা বাড়তি কিন্তু ফেলা যায় না এমন জঞ্জালের সাথে আশ্রয় নেয়। কারণ নাজমার কোল বালিশ পছন্দ নয়। আজ ভিষণ নিসংগ, একাকী আর জড় সময়ে ওটাকে আবার সে তুলে আনে। এরপর নাজমার বিকল্প সঙ্গি হিসেবে এটা স্থায়ি হয়ে যায় বেশ কিছুদিন।

আন্তত নাজমা আবার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। মাস দু’য়েক পরে। একদিন নাজমা ফিরে আসে। অর্ধবেলার অফিস কামাই করে মুরাদও ফিরে আসে। এসে দেখে নাজমা গেষ্ট্রুম সাজিয়ে নিয়েছে তার থাকার জন্য।

সারাদিন মুরাদ আনেকবার অর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু নাজমার ব্যাক্তিত্বের কাছে পাত্তা পায়নি। তা না পাক, নাজমা ফিরে এসেছে এই খুশিতেই সে আটখানা হয়ে যেতে পারে, চাuদে যেতে পারে, পাহাড় থেকে লাফ দিতে পারে, এমনকি প্রতিদিন যেই কাকটা তার জানালার ধারে তাড়স্বরে চ্যাচায় তাকেও ক্ষমা করে দিতে পারে। মোদ্দা কথা ভিষণ খুশি সে। কথা পর্ব রাতেই হল। খাবার টেবিলে।

এবং নাজমাই শুরু করল। বলল, তুমি ভেব না আমি তোমার জন্য ফিরে এসেছি। আসলে ভাইয়া ছাড়া বাড়ির আর কেউ আমার সমস্যা বুঝতে চায় না। সে আমার আবার বিয়ে ঠিক করেছে। বাকিরা সবাই কোন এক বিচিত্র কারণে তোমাকে পছন্দ করে।

তাই বাসায় সারাক্ষণই আনেক বাজে বাজে কথা শুনতে হয় আমাকে। বাসার পরিবেশ সারাক্ষণই গুমোট হয়ে আছে। আমি আর বাসায় থাকতে পারছিলাম না। আত্মীয় স্বজনদের বাসায়ও একই কথা আমি নাকি ভিষণ সেলফিস। যাই হোক that’s my prob. i 've to solve. আপাতত তোমার বাসাটাই সবচেয়ে নিরাপদ মনে হল।

আমি কয়েকদিন থেকেই চলে যাব। just পরিস্থিতিটা ঠান্ডা হোক। মুরাদ পূর্ণ সম্মতি দেয়, এমন কি পরবর্তী স্বামীর সাথে ঝগড়া হলেও সে এখানে এসে সানন্দে থাকতে পারবে তার অগ্রীম নিমন্ত্রনও দেয়। নাজমা তার গেষ্ট রুমে চলে গেল। মুরাদ তার রুমে।

এবং পাশ বালিশের সাথে কথা যথাপূর্বম। কিন্তু নাজমা তো পাশের রুমেই। তার একবার কি বুঝিয়ে বলা উচিr না, যে দোষে তার কোন হাত নেই তার জন্য অপরাধী করা কতটা যৌক্তিক? মুরাদ অনেক সাহস নিয়ে নাজমার ঘরে ঢোকে। বাইরের নীল আলোয় দেখা যায়, নাজমার চোখে জল। মুরাদ চমকে ওঠে কারণ তার মতই নাজমারও অবলম্বন কোল বালিশ।

কিন্তু তার কোল বালিশটা আনেক ছোট (অনেকটা শিশুদের মত)।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।