আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পক্ষীকুলের বিরুদ্ধে মার্কিনীদের যুদ্ধ !



পক্ষীকুলের বিরুদ্ধে মার্কিনিদের যুদ্ধ! ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------ ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। ’ কবির এই পঙক্তি আমাদের জীবপ্রেমকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। জীব কিংবা পশু-পক্ষী হত্যা করা বেদনার জেনেও তা করতে যদি আইন প্রয়োগের কথা ভাবা হয়, তবে তা কোন চোখে দেখা যাবে? সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে তেমনি একটি বিল পাসের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক নগরবাসী কবুতরের জ্বালায় অতিষ্ঠ। অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কের ব্রুকলিন অঞ্চলের কাউন্সিলম্যান সিমসা ফেল্ডার একটি বিল উত্থাপন করে বলেছেন, মুক্ত কবুতরগুলোকে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য প্রদান অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

কাউন্সিলম্যান এ বিষয়ে সিটির আইনজীবীদের সঙ্গে বিস্তারিত পরামর্শ করে বিলটি উত্থাপন করেছেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিমসা ফেল্ডার বলেন, নিউইয়র্কবাসী কবুতরের যন্ত্রণার কথা মুখ খুলে না বলতে পারলেও, তা সয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে। কবুতরকে খাদ্য দেয়ার নামে কেউ কেউ যত্রতত্র শস্যদানা, ব্রেড, চাল, ডাল ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে রাখেন। তা আবর্জনার জন্ম দেয়। অন্যদিকে কবুতরগুলো সিটির দামি ভবনগুলোতে আশ্রয় নিয়ে এর পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে।

কবুতর উড়ে যেতে যেতে মলত্যাগের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ফেলে চরম বিব্রতকর অবস্থায়। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই জরুরি উদ্যোগ নেয়া দরকার। কাউন্সিলম্যান ফেল্ডার তার উত্থাপিত বিলে সিটির বিভিন্ন সড়কের ধারে রাখা সরকারি ডাস্টবিনগুলোও নবায়নের প্রস্তাব করেছেন। যাতে সেগুলোও কবুতরের দূরত্বে রাখা যায়। তারা যাতে সেখান থেকেও কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে না পারে।

সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে, কাউন্সিলম্যান তার প্রস্তাবে কবুতরগুলোকে ‘বার্থ কন্ট্রোল পিল’ খাইয়ে এদের বংশবৃদ্ধি বন্ধের কথাও বলেছেন। এ জন্য তিনি সিটির বাজেট নির্ধারণের দাবিও করেছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কবুতরের বংশবৃদ্ধি রোধে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। লন্ডনের মেয়র কেন লিভিংস্টোন তা চালু করেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু করে লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার স্কোয়ারে কবুতরের সংখ্যা বছরে ৪ হাজার থেকে নামিয়ে ১ হাজার ৮০০তে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

‘কবুতরের খাদ্য বন্ধ করে দাও’Ñ এই কর্মসূচির মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বাসিল নগরীতেও পাওয়া গেছে আশাব্যঞ্জক ফল। লসএঞ্জেলেসে ‘ওভোকন্ট্রোল পি’ নামের এক ধরনের বড়ি খাইয়ে এ পক্ষীকুলকে কম ডিম প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের মিলফোর্ড শহরে বিষ প্রয়োগে পক্ষী হত্যার কথাও বেরিয়েছে পত্রপত্রিকায়। যার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন ‘এনিমেল’, ‘বার্ড’ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। বুশ প্রশাসনের ভ্রান্ত রাজনৈতিক দর্শনের কারণে ইরাকে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে মার্কিনিদের।

এখন কি তবে পশু-পক্ষীরাও শান্তিতে থাকতে পারভে না এই মার্কিন মুল্লুকে? প্রশ্নটি তুলেছেন বিশিষ্ট এনিমেল কেয়ার স্পেশালিস্ট মিস লরা ব্রাউন। তিনি বলেছেন, কোনো অমানবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষী নিধন করা হবে,তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞ ড. মরিস বার্কলেন বলেন, আমরা একদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কথা বলব আর অন্যদিকে নির্মমভাবে পক্ষী নিধন করবো- এই দ্বিমুখী নীতিতো চলতে পারে না। এই আকাশ, এই জগৎ-প্রকৃতি পক্ষীদের জন্য উন্মুক্ত। তারা সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশের আকাশ অতিক্রম করতে পারে বিনা ভিসায়।

তাছাড়া পক্ষীকুল আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপকভাবে সহায়ক। পাখিরা বেশকিছু বিষাক্ত পোকামাকড় ধ্বংস করে, যেগুলো আমাদের সুস্থ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এমন অনেক হাইওয়ে আছে, যেগুলোর কিনারে লেখা থাকে, ‘এই পথ দিয়ে হরিণ চিতরণ করে। তাই সাবধানে গাড়ি চালান। ’ পোষা কুকুর কিংবা বিড়াল-খরগোশের জন্য মার্কিনিরা বছরে খরচ করে হাজার হাজার ডলার।

তাই বলে এখানে পক্ষী শিকার যে করা যায় না তা নয়। পাখি কিংবা হরিণ শিকারের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট এলাকা। লাইসেন্সধারী বন্দুক শিকারীরা অনুমতি নিয়েই সে সব অঞ্চলে শিকারে যেতে পারেন। আর অবৈধভাবে শিকার করলে জেল-জরিমানা দুটোর বিধান তো আছেই। কাউন্সিলম্যান ফেল্ডার যে বিল প্রস্তাব করেছেন, তা পাস হলে কবুতরকে খাদ্য প্রদানের অপরাধে কারও ১ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

কাউন্সিলম্যান মনে করেন, সিটিতে উন্মুক্ত খাদ্য না পেলে কবুতরগুলো অন্য কোথাও উড়ে যাবে। হ্যাঁ, মৌসুমে মৌসুমে মৌসুমী পাখিরা এক দেশ থেকে উড়ে যায় অন্য দেশে। বাংলাদেশেও শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই নানা ধরনের বিচিত্র পাখির আগমন আমরা লক্ষ্য করি। এ পাখিগুলোকে জালে আটকে ‘শিকার’ ‘শিকার’ বলে চেঁচিয়ে বিক্রি করে ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পক্ষী দর্শনের নানা আয়োজন হয় প্রায় প্রতি বছর।

দেশে দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগগুলো নানা তৎপরতা দেখালেও এর যথার্থ প্রয়োগ বিশ্বের অনেক দেশেই হয় না, হচ্ছে না। অরণ্য, সবুজ বনরাজি মানুষকে অক্সিজেন দেয়। মানুষ, অরণ্যকে দিতে পারে না কিছুই। ঠিক তেমনি পক্ষীকুলও মানুষকে দিয়ে যায় প্রকৃতির মূর্ছনা, নিসর্গের নন্দিত স্পর্শ, তারপরও পক্ষী নিধনে মানুষের তৎপরতা থেমে নেই। বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট হয় বৈকি! ================================== দৈনিক ডেসটিনি ।

ঢাকা। ৯ ডিসেম্বর ২০০৭ , রোববার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.