আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুবের মন, পশ্চিমের ক্ষণ: ড্রপবক্স (শেষ পর্ব)

এখন থেকে আমি 'মুক্ত মানব' -এই নিক-এ লিখবো। আপনি আমন্ত্রিত।

[উত্সর্গ: ফারহান দাউদ] (পুরোটার স্বাদ পেতে একই শিরোনামের আগের পর্ব পড়ুন) দেখতে দেখতে সেমিস্টার ফুরিয়ে আসছে। তো, সেই যে বই তিনটা নিয়ে এলাম, বইগুলো ফেরত দিতে হবে না? অতএব আবার চলো লাইব্রেরীতে। সেই একই লোক কাউন্টারে বসা।

: 'কি, বই ফেরত দিতে এলে বুঝি?' -'হ্যাঁ' (জিগ্গেস করে ক্যান, দেখবার পাস্ না?) : 'তা আমার কাছে দেবার তো কোন দরকার ছিলো না, ঐ যে সারি সারি বাক্সগুলো দেখছেো, ওগুলো কে বলে বই ফেরত দেবার বাক্স- ড্রপবক্স। ওগুলোর কোন একটাতে ফেলে গেলেই চলবে'। - ' চলবে না', কন্ঠে আমার একাত্তরের সংকল্প। (ভেবে চিন্তেই আমি এলেম তোমার দ্বারে..ভাইজান) বিচ্ছু চকিতে একবার আমার দিকে তাকালো। চোখে নিজের কানের প্রতি অবিশ্বাস আর কেন 'চলবে না' তার শানে নযুল শোনার আকুতি মিলে মিশে একাকার, : 'ড্রপবক্সে তোমার চলবে না..মানে? সবাই তো ওগুলোতেই বই ফেলে চলে যাচ্ছে দেখছো না?!' -'দেখেছি, কিন্তু আমার প্রমাণ চাই।

' (এতোদিন তো কেবল Dove মানে সাদা বাংলায় ঘুঘু দেখেই জীবন কাটালি তোরা..') : 'প্রমাণ? কিসের?' -'বই যে আমি ফেরত দিলাম তার প্রমাণ, লাইব্রেরী আর তার পাঠক আমরা যে আইণের চোখে দুটো সমান পক্ষ তার প্রমাণ। ' : 'আরেকটু বুঝিয়ে বলবে' -' একশ বার বলবো। দ্যাখো, তোমরা Lender হিসেবে বই দিলে এবং তার প্রমাণ কম্পিউটারে রাখলে। আমিও Borrower হিসেবে বই ফেরত দেবার রেকর্ড রাখতে চাই। সম্পর্কটা সমান সমান রাখতে চাই, এই মাত্র।

তোমাদের লাইব্রেরীর ওয়েব সাইটেই তো বলা আছে.....। তাছাড়া তোমাদের সংবিধানের ...নং অনুচ্ছেদের... নং উপধারায়..। সবচেয়ে বড় কথা একটা বই হারালে দামের পাঁচগুন অর্থদন্ডের যে কথা তোমাদের হোমপেজে পড়েছি তাতেই আমার পিলে চমকে গ্যাছে। রশীদ আমার চাই-ই চাই। ' : 'তুমি আমাকে কি করতে বলো?' - 'একটা রশীদ দাও'।

: 'বুঝেছি, তুমি acknowledgement receipt চাইছো। কিন্তু, আমার জানামতে লাইব্রেরীর দেড়শ বছরের ইতিহাসে বই জমা দিয়ে কেউ তো কোনদিন রশীদ চায় নি, কিম্বা আমরাও কোন receipt দেইনি। তাই আমাদের কোন বই জমা নেয়ার ছাপানো রশীদ নেই যেটা তোমাকে দিতে পারি। ' মনে মনে বলি, আহারে আমার আয়ুষ্মান ডবল সেন্চুরিয়ান রে! দেড় দিনের পোলা দেড়শ বছরের হাইকোর্ট দ্যাখায় আমারে! মুখে বলি, - ' কিছুই না, এক টুকরো কাগজে বই তিনটার নাম লিখে নীচে তোমার একটা autograph দিয়ে দাও। ব্যস্ হয়ে গ্যালো।

যত্ন করে রেখে দেবো। ' (ব্যাটা বেশী কতা কয়, একটা আব্দুর রশীদ চাইছি, দিয়া ফাল্যা, চইল্যা যাই..) : 'ঠিক আছে, একটু দাঁড়াও আমার বস কে ডেকে আনি দেখি উনি কি বলেন। ' বলা বাহুল্য, বিশাল লাইব্রেরির বিশাল লাইব্রেরিয়ান কে বোঝাতে সেদিন এই পুবের মফিজের তেমন বেগ পেতে হয়নি। ১৫০ বছরের ঐতিহ্য ভেংগে আব্দুর রশীদখানা পকেটে নিয়ে ঘরে ফিরছি, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে.। হাতের কাছে পেলে আলেকজান্ডারকেও তখন ডেকে বলতাম :কই হে এক কাপ চা বানাও তো, জলদি! পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত।

কয়েক সেমিস্টার এই সতর্ক আব্দুর রশীদগিরি করার পরে ধীরে ধীরে পশ্চিমের জীবনধারার অভ্যস্ততা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে 'মনে না নিয়েও মেনে নেওয়ার' অভিযোজন অভ্যাস- মানুষকে যেটা পারতে হয় অন্য প্রাণীদের থেকে ঢের বেশী। সবচেয়ে বড় কথা সময়ের অভাবেই মানুষ ড্রপবক্সের জীবনকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। Lender এবং Borrower-এর সমানাধিকারের কথা তুলে ১৫০ বছরের ঐতিহ্য ভাংগা একদা-প্রমিথিউস এখন বিশ্বায়নের ঘুর্ণিপাকে সমানে সাইজ হতে থাকে। 'শুধু তুচ্ছতা, শুধু প্রাণ ধারনের, শুধু দিন যাপনের গ্লানি' আর তেমন গায়েই লাগে না। বিশ্বায়ন কি সবাইকে শেষমেষ রোবটের মত ভাবলেশহীন বানিয়ে ছাড়বে? বড় ভ্য় হয়।

[পাদটিকা: প্রিয় ব্লগার, নিশ্চয়ই সহমত হবেন যে, পুবের মফিজ জীবনের প্রথম ম্যানহাটানে এসে, কিম্বা পশ্চিমের হ্যারি জিন্দেগীর পয়লা আমাদের হাতির পুলে আসিয়া দু-একটা সাংস্ক্রিতিক ছ্যাঁকামাইসিন, তথা 'কালচারাল শক' না খেলে কেমন যেন শুন্যতা থাকে, বিয়ে বাড়ীতে পোলাও কোর্মার পরে দই-মিস্টি পাতে না আসা অব্দি যেমন খালি খালি লাগে আর কি! মাশাল্লা, আপনাদের দোয়ায় সেই কালচারাল ছ্যাঁকা , মানে ডেজার্ট খেতে বেশিদিন সবুর করতে হয়নি। সে সবের একটু আধটু আপনাদের সদয় আস্কারা পেলো মাঝে মধ্যে 'পুবের মন, পশ্চিমের ক্ষণ' শিরোনামে ব্লগর ব্লগর করতে ইচ্ছা রইলো। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।