আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহাসিক ঢাকা ঘোষণা বিষয়ে অন্তরা দেব সেনের লেখা

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

৯ নভেম্বরের সিফি ডট কমে অন্তরা দেব সেন ভারত বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে সম্পাদিত ঢাকা ঘোষণা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন। পড়ে দেখেন। ঢাকা ঘোষণা নিয়ে ঢাকার লোকেরা কিছু না জানলেও কত কিছু হয়ে যাচ্ছে। ব্লগের অবচেতন পাঠকদের জন্য অনুবাদ করলাম।

পেছনের উঠানে দাঁড়ানো হাতি # অন্তরা দেব সেন মনে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পুরস্কারের মেডাল উদ্ধার নিয়ে কিছু ভাল খবর আছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এক শিল্পকর্ম বিক্রয়ের দোকান মালিককে গ্রেফতার করেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, যে চক্রটি ২০০৪ সালে শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম থেকে মেডালটি চুরি করেছে তাদের সঙ্গে এই ব্যক্তির যোগাযোগ আছে। সাড়ে তিন বছরের অনুসন্ধান কাজ শেষে আমাদের অনুসন্ধানী দল হাল ছেড়ে দিয়েছে। এক মাস আগে সেন্ট্রাল বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) তদন্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে, যা শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, ঠাকুরের ভক্ত ও সর্বত্র ছড়ানো ভারতীয় ঐতিহ্য প্রেমিকদের আশাহত করার জন্য যথেষ্ট।

এখন বাংলাদেশের এলিট সিকিউরিটি ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন, যাদের সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনো প্রশংসা করার মতো খবর শোনা যায়নি, তারা চুরি যাওয়া নোবেল মেডাল বিষয়ে আমাদের সযত্ন আশাকে আবার জাগিয়ে তুলছে। ঠাকুরই প্রথম ভারতীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। (রোনাল্ড রস ও রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর কথা বাদ দিলে। তারা মূলত ব্রিটিশ ছিলেন। ) তিনি ছিলেন এই পুরস্কার পাওয়া প্রথম অপশ্চিমা লেখক।

এই গ্রেফতারটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অংশীদারিত্বমূলক সাহিত্যিক ঐতিহ্যের আন্তরিক বন্ধনকে নবায়ন করলো। আমাদের কাছে যেমন তেমনি ঠাকুর ও অবিভক্ত বাংলা ও দেশ ভাগের আগের শ্রদ্ধেয় লেখকদের উত্তরাধিকার বাংলাদেশেও অনুসৃত হয়। এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও ঠাকুরের লেখা। স্বাভাবিকভাবে নোবেল মেডাল উদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দায় আছে। ৬ নভেম্বর ঢাকার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা ইন্দো-বাংলা সাহিত্যিক বন্ধন দৃঢ় করার অসম্ভাবনীয় পদক্ষেপের বাইরে শহরের অন্যত্র দুই দেশের লেখকদের প্রত্যক্ষ বন্ধনও দৃঢ় হচ্ছিল।

এটা ছিল পাঁচ দিনের ভারত বাংলাদেশ উৎসবের শেষ দিন। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে শত শত সাহিত্য প্রেমিক, লেখক, প্রকাশক, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ দুই প্রতিবেশীর (যারা শুধু ভাষা নয়, অন্য অনেক কিছু অংশীদারিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ) মধ্যে উন্নততর সাংস্কৃতিক যোগাযোগ কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। আর এর চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে ঢাকা ঘোষণা স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে, যাতে দুই দেশের সাহিত্যিক বন্ধনকে উন্নততর করার লক্ষে কাজ করা অঙ্গীকার করা হয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে আরও বেশি সাংস্কৃতিক সংলাপ আয়োজন ও বই ও প্রকাশনা বিনিময়ের আরও ভাল ব্যবস্থা করার কথাও। এই উৎসবে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বিস্মিত করেছে বাংলা সাহিত্যের প্রতি প্রভূত ভালোবাসা যা জাতীয় ও ধর্মীয় সীমান্তকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

এটা এক কাল্পনিক মাতৃভূমি যা গল্প, কবিতা ও নাটকের সম্মিলনে গড়ে উঠেছে। এই ভূমির মানুষজন তেরি হয়েছে কৃতীদের কলম ও সৃষ্টি থেকে। কিন্তু এটা আবার এমন এক রাজ্যও বটে যেখানে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে বেশি জানে। কারণ আমাদের অনেকে, বিশেষ করে ভারতীয় অনেকে এখনও বাতিল মানচিত্র নিয়ে চলাফেরা করছেন। আমার দরকার মানচিত্র কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা বোঝা, কোন প্রতিবেশী ঘর ছেড়েছে অথবা একদা পরিচিত পথের জায়গায় এখন কোথায় গিয়ে বাঁক নিয়েছে।

এর মূল কারণ হলো, দুই বাংলার গতিশীল সাহিত্যপটকে একত্র রাখার জন্য সাহিত্যিক আইডিয়া বিনিময়ের উদ্যোগ খুব শক্তিশালী নয়। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী বই ও লেখকের তীব্র চাহিদা নেই যেমনটি কিছু ভারতীয় লেখকের আছে বাংলাদেশের বাজারে। আর যেহেতু চাহিদা অনুসারে যোগান নিশ্চিত হয়, সেহেতু ভারতের বাজারে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য যথেষ্ট পাওয়া যায় না। এর পেছনে হয়তো তেমন কোনো সাহিত্যিক মূল্যমান নেই। বাংলাদেশে যথেষ্ট সংখ্যক চমৎকার লেখক আছেন : প্রয়াত শামসুর রাহমান অথবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক মাস্টার সৈয়দ শামসুল হক বা সেলিনা হোসেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেস্ট।

কিন্তু আমরা এখন বাজার ছাফাই ও হারানো মাতৃভাষার যুগে বাস করি যেখানে আমাদের পৃথিবী সংকীর্ণ, চকিত ও সহজবহনযোগ্য। যাই হোক, আমি বুঝি বাংলাদেশের প্রকাশক, বিক্রেতা ও সাহিত্য প্রেমিকদের অভিযোগ শোনাটাই যথেষ্ট নয়, একা একা আক্ষেপ করা কোনো ফলদায়ক কৌশল নয়। কেউ যখন বোঝে ভারত হলো পেছনের উঠানে দাঁড়ানো হাতি তখন খুব স্বস্তিকর পরিস্থিতি থকে না। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের চাইতে তুলনাহীনভাবেই অনেক বড় ও শক্তিশালী কারণ এটা পশ্চিম বঙ্গের চেয়ে অনেক বড় ও বিশাল। অংশীদারিত্বমূলক ভাষা ও সাহিত্য এবং কমন ইতিহাসের প্রলোভনে বাংলাদেশের সাহিত্যিক সম্প্রদায় হয়তো এটা ভুলে গেছে।

ভারতের ওপর প্রভাব ফেরতে গেলে শুধু কলকাতায় দেখানো ও পড়ানোই যথেষ্ট নয়। এমনকি ভারতের চমৎকার বাঙালি লেখকরাও তাদের ভাষা জনগোষ্ঠীর বাইরে প্রত্যাশিত সম্মান পান না। তারা নিজের ভাষার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকেন, ওই দেয়ালের ভেতরেই পাঠকরা তাদের সিংহ মনে করে। কিন্তু দেয়ালের বাইরে তারা অচেনা। অনুবাদের মাধ্যমে অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যেই আছে চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের লেখক ও প্রকাশকদের ইংরেজি ও অন্য ভারতীয় ভাষায় অনুবাদের সুযোগ পেতে হবে। ভারতীয় বাংলা ভাষী লেখক বা তাদের নিজেদের তসলিমা নাসরিনকে (তাকে একটু কম কম লেখক বলে মনে করা হয়) তাদের বেশি সুযোগের জন্য অনুকরণ করার দরকার নেই। আমাদের সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। লিটল ম্যাগাজিনে অনেক বছর ধরে আমরা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রী লংকার পাশাপাশি বাংলাদেশী লেখাও অনুবাদ করছি। এগুলো দারুণভাবে গৃহীত হয়েছে।

গ্লোবালাইজড পৃথিবীতে গোষ্ঠী পরিচয় আগের যে কোনো সময়ের চাইতে শক্তিশালী। দক্ষিণ এশিয়ার উৎকৃষ্ট লেখাগুলোর শোকেসিংয়ের মাধ্যমে আমরা দক্ষিণ এশীয় হিসেবে আমাদের আঞ্চলিক পরিচয়কে মংহত করতে পারি এবং একটি সফট পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারি। বাঙালি হোক কি হিন্দি কি তামিল যত শক্তিশালীই হোক আমাদের মাতৃভাষা, আমরা সে ভাষায় নিজেদের আবদ্ধ করে রাখতে পারি না। অবশ্যই অনুকরণ দরকারি। কিন্তু এটা শুধু প্রথম পদক্ষেপ।

এরপর আমাদের আরও গঠনমূলকভাবে আরেকটি কাল্পনিক মাতৃভূমি তৈরির কাজে লেগে পড়তে হবে। সেটা হবে আরও বড় আরও আত্মস্থ এক যা শুধু জাতীয় ও ধর্মীয় সীমানাকেই শুধু ছাড়িয়ে যাবে না, ছাড়িয়ে যাবে ভাষার সীমানাকেও। অন্তরা দেব সেন : লিটল ম্যাগাজিন পত্রিকার সম্পাদক অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.